গঙ্গাধর দলুই (উপরে) ও বিশ্বজিৎ ঘোড়ই।
প্রত্যাঘাত তো পরে! সবার আগে সর্ষের মধ্যে ভূত খুঁজতে তদন্তে নামল সেনা। উরির সেনাঘাঁটিতে হামলা নিয়ে প্রাথমিক তদন্তে সোমবারই পৌঁছেছে এনআইএ।
বছরের শুরুতেই পঠানকোট, তার পরে গত কাল উরি। উদ্বিগ্ন সেনা কর্তৃপক্ষ মানছেন, নজরদারির ফাঁক গলেই বারবার সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ছে জঙ্গিরা। যাদের সাহায্য করা হচ্ছে স্থানীয় ভাবেও। উরির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের ধারণা, সেনাঘাঁটির ভিতর থেকেই তথ্য-সাহায্য পেয়েছে জঙ্গিরা। যার ফলে তারা অনায়াসে ঘাঁটিতে ঢুকে রীতিমতো সুবিধেজনক অবস্থান নিয়ে হামলা চালায়। সেই অন্তর্ঘাতের সূত্রটি খুঁজে বের করতেই এখন তৎপর সেনা গোয়েন্দা সংস্থা।
উরি সেনাঘাঁটি থেকে নিয়ন্ত্রণরেখার দূরত্ব ছয় কিলোমিটার। আর বারামুলা শহর থেকে ওই ঘাঁটির দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। নিয়ন্ত্রণরেখা বা বারামুলা, যে দিক দিয়েই জঙ্গিরা আসুক সেনাঘাঁটিতে ঢোকার আগে বেশ কিছুটা দূরত্ব পেরোতে হয়েছে জঙ্গিদের। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে কোথায় ছিল টহলদারি দল? কেন চ্যালেঞ্জ করা হয়নি জঙ্গিদের?
উরি সেনাঘাঁটির মূল প্রবেশপথটি নিয়ন্ত্রণরেখার দিকে। ফলে স্বভাবতই সে দিকে পাহারা বেশি। জঙ্গিরা তাই বেছে নেয় পিছনের দিকের রাস্তা। ঘাঁটির পিছনের কোন অংশ দিয়ে জঙ্গিরা ঢুকেছিল তা এখন খুঁজে বের করা হচ্ছে। কিন্তু গোয়েন্দাদের কাছে মূল প্রশ্ন হল, ওই অংশ দিয়ে ঢুকলে কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না এই তথ্যটা পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইকে জানিয়েছিল কে?
সেনা সূত্রে খবর, সাধারণত ফিদায়েঁ জঙ্গিদের দাড়িগোঁফ কামানো থাকে। কিন্তু উরি ঘাঁটিতে হামলাকারী জঙ্গিদের মুখে এক দিনের না কামানো দাড়ি ছিল। তা দেখে গোয়েন্দারা মনে করছেন, জঙ্গিরা এক দিন আগে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ঢোকে। এখন সীমান্ত পেরিয়ে প্রথম যে লক্ষ্যবস্তু পাওয়া যাবে তার উপরেই হামলা চালাতে জঙ্গিদের নির্দেশ দিয়েছে আইএসআই। সামরিক পরিভাষায় যে কৌশলের নাম ‘শ্যালো ইনফিলট্রেশন’।
প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, বারামুলা-উরি এলাকায় আইএসআইয়ের স্লিপার সেল আছে। যাদের কথা স্থানীয় পুলিশের অজানা। গোয়েন্দাদের অনুমান, সেনাঘাঁটি থাকায় ওই স্লিপার সেল তৈরি করা হয়েছিল। জঙ্গিদের রাতের আশ্রয় ও রাস্তা চিনিয়ে দেওয়ার দায়িত্বে ছিল ওই স্লিপার সেলের সদস্যরা। শুধু তাই নয়, ঘাঁটির ভিতরের সমস্ত খবরও সরবরাহ করেছে তারা।
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, প্রতি দিন নানা কাজের প্রয়োজনে বহু স্থানীয় মানুষ উরি সেনাঘাঁটিতে আসেন। তাঁরা দিনভর সেখানে থাকেন। কাজ করেন। আবার রাতে ফিরে যান। নিত্যদিন আসা-যাওয়ার সুবাদে ঘাঁটির ভিতরের খবর সংগ্রহ করাটা তাই কঠিন নয়। বিশেষ করে কবে ঘাঁটিতে দায়িত্ব বদল হচ্ছে, ডিজেল কোথায় মজুত করে রাখা আছে, সেনারা কোথায় ঘুমোতে যান— এ সব তথ্য ওই স্থানীয় বাসিন্দারা সহজেই জানতে পারেন। তাঁদের একাংশও আইএসআইকে তথ্য সরবরাহ করে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের। খোদ সেনাবাহিনীর মধ্যেই পাক সেনার চরচক্র আছে কি না তাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। কারণ গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন সেনাঘাঁটি থেকে একাধিক পাক চর গ্রেফতার হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা জানাচ্ছেন, বাজপেয়ীর আমলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাশ্মীর সংক্রান্ত দফতরের যুগ্মসচিবের ব্যক্তিগত সহকারীর কাছে এক কাশ্মীরি শালওয়ালা আসতেন। পরে জানা যায় অর্থের বিনিময়ে শালওয়ালার কাছে ওই সহকারী কাশ্মীর সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য দিতেন। তা পাচার হয়ে যেত আইএসআইয়ের কাছে। এ ক্ষেত্রেও সেনাকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় কোনও বাসিন্দার যোগ রয়েছে কি না জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।
উরির হামলার সামগ্রিক তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে এনআইএ-কে। আজ তাদের একটি দল উরি সেনাঘাঁটিতে গিয়ে কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে। সেনা সূত্রে খবর, নিহত জঙ্গিদের ডিএনএ নমুনা চেয়েছেন এনআইএ অফিসাররা। কথা বলেছেন ঘাঁটিতে মোতায়েন সেনা অফিসারদের সঙ্গেও।