ভারতীয় দণ্ডবিধির পাশাপাশি ইউএপিএ-র বিভিন্ন ধারাতেও অভিযুক্ত করা হয়েছে ধৃতদের। —প্রতীকী চিত্র।
এলগার পরিষদ মামলায় এনআইএ (জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা) অভিযুক্ত ১৫ জনের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট দিয়েছে, তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খুনের চেষ্টার কোনও অভিযোগ নেই। তবে মোট ১৭টি সাধারণ অভিযোগের মধ্যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের চক্রান্তের অভিযোগ আনা হয়েছে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ভারতীয় দণ্ডবিধির পাশাপাশি ইউএপিএ-র বিভিন্ন ধারাতেও অভিযুক্ত করা হয়েছে ধৃতদের।
গ্রেফতার হওয়া ১৫ জন পরিচিত নাগরিক অধিকার কর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে জমা দেওয়া খসড়া চার্জশিটে এনআইএ বলেছে, এঁরা সকলেই মাওবাদী রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য ও তাত্ত্বিক নেতা। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অত্যাধুনিক অস্ত্র আমদানি করা এবং তার সাহায্যে ক্ষমতা দখল করে নিজস্ব ‘জনতার সরকার’ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন সকলে। এর আগে মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকারের আমলে এঁদের গ্রেফতারের পরে পুলিশ অভিযোগ করেছিল, ধৃতেরা ‘শহুরে নকশাল’। রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার চক্রান্ত করেছিলেন এঁরা। চলতি মাসের গোড়ার দিকে আদালতে পেশ করা চার্জশিটে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীকে খুনের চক্রান্তের বিষয়টি নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের হত্যার জন্য অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা’-র কথা বলা হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগও এনেছে এনআইএ।
১৭টি অভিযোগের বাইরে এক এক জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা অতিরিক্ত অভিযোগও করা হয়েছে চার্জশিটে। যেমন, নামী লেখক আনন্দ তেলতুম্বডের বিরুদ্ধে একটি ধারায় সাক্ষ্য প্রমাণ নষ্টের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। সাধারণ যে সব অভিযোগ অভিযুক্ত ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটে করা হয়েছে, তার মধ্যে আধুনিক অস্ত্র সংগ্রহের জন্য ৮ কোটি টাকা সংগ্রহ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ‘কমিশন এজেন্ট’ হিসেবে সন্ত্রাসবাদী কাজে নিয়োগের কথা রয়েছে। ভীমা-কোরেগাঁওয়ে উপস্থিত হয়ে উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়ে দলিত ও অন্য সম্প্রদায়কে উত্তেজিত করে অশান্তি বাধানো এঁদের চক্রান্তের অংশ ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া পুণে ও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জাযগায় ‘সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ’ সৃষ্টির ষড়যন্ত্রেও তাঁরা লিপ্ত ছিলেন বলে চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে। এনআইএ-র অভিযোগ— ‘এ জন্য তাঁদের হাতিয়ার ছিল মানুষকে উত্তেজিত করে এমন গান, কবিতা এবং ছোট ছোট নাটক’।
চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ করা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-র সক্রিয় সদস্য ও তাত্ত্বিক নেতা ছিলেন ধৃত ১৫ জন— যা এঁরা বরাবর অস্বীকার করে এসেছেন। অন্যতম অভিযুক্ত রোনা উইলসন বম্বে হাই কোর্টে অভিযোগ করেছেন— তাঁর কম্পিউটার থেকে যে ‘মোক্ষম প্রমাণটি’ তাঁর বিরুদ্ধে দাখিল করা হয়েছে, একটি ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে সেটি ২০১৮ সালে তাঁর যন্ত্রে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কয়েক জন অভিযোগ করেছেন, বাজেয়াপ্ত করার পরে পুলিশই তাঁদের কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কে বিভিন্ন সন্দেহজনক বয়ান ঢুকিয়ে দিয়েছে।
যে ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন— আনন্দ তেলতুম্বডে, সুধীর ধাওয়ালে, রোনা উইলসন, সোমা সেন, সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, মহেশ রাউত, পি ভারাভারা রাও, ভার্নন গঞ্জালভেস, অরুন ফেরেইরা, সুধা ভরদ্বাজ, গৌতম নভলখা, হানি বাবু, রমেশ গাইচর, জ্যোতি জগতাপ এবং সাগর গোর্খে। জেলে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ায় চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে স্ট্যান স্বামীর। এই চার্জশিটের ভিত্তিতে বিশেষ আদালত এ বার ঠিক করবে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোন কোন ধারায় মামলা শুরু করা যায়।