পরিবেশের উপর প্রভাবের বিষয়ে সমীক্ষা না করেই ২ হাজার ৮৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রস্তাবিত ক্ষমতাসম্পন্ন দিবাং বহুমুখী জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে ছাড়পত্র দেওয়ার অভিযোগে অরুণাচল ও অসমে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার নামনি সুবনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রাজ্যের বিভিন্ন সংগঠনের আপত্তিতে এখনও থমকে। এই অবস্থায় এনএইচপিসিকে নতুন বৃহৎ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক। তবে, অরুণাচলের বাকি ৫টি প্রকল্পকে বিভিন্ন কারণে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। মন্ত্রকের বক্তব্য, বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ মেনেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ৯ বছরের মধ্যে ২৫ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রকল্পের
কাজ শুরু হওয়ার ৫ বছর পর নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের উপরে প্রকল্পের প্রভাব যাচাই করানো হবে।
অরুণাচলের নামনি দিবাং ভ্যালি জেলায় ওই বাঁধের উচ্চতা হবে ২৮৮ মিটার বা ৯৪৫ ফুট। বাঁধের জলাধার হিসেবে থাকবে দিবাং ও তার উপনদী আঁসু পানির ৪৩ কিলোমিটার এলাকা।
সুবনসিরি প্রকল্পের ক্ষেত্রে অসমবাসীর আপত্তি থাকলেও অরুণাচল তাতে আপত্তি জানায়নি। কিন্তু, দিবাং-এর ক্ষেত্রে দু’তরফেই তীব্র বিরোধিতা চলছে। স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রস্তাবিত ২ হাজার ৮৮০ মেগাওয়াটের দিবাং, ২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের নামনি সিয়াং, ১ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াটের ডিমৌ প্রকল্প চালু হলে, অসমের আগে অরুণাচলবাসীই সমস্যা পড়বেন। তাঁদের মতে, কেন্দ্রের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি কম্পিউটারের তথ্যের ভিত্তিতে বাঁধের প্রভাব হিসেব করেছে। তার সঙ্গে সরেজমিনে জরিপের অনেক তফাৎ থাকে। দিবাং-এ বাঁধ গড়া শুরু হলে ৫টি গ্রাম মুছে যাবে। ৩৯টি গ্রামের জমি অধিগ্রহণ করা হবে। তার বিরুদ্ধে দিবাং-এ আন্দোলন চলছে।
আসু, কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি এবং অসম-অরুণাচলের বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঁধ গড়ার ৫ বছর পর পরিবেশের উপরে প্রভাব যাচাই করার অর্থ— অন্তত ১৫ বছরের ব্যবধানে সমীক্ষা হওয়া। পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রে যা প্রভাব পড়ার তার আগেই পড়বে। তা আর ঠিক করা সম্ভব হবে না। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে অসমের ডিব্রু-শইখোয়া জাতীয় উদ্যান। কিন্তু, কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক ছাড়পত্র দেওয়ার আগে শুধু অরুণাচলের দিক নিয়ে আলোচনা করলেও অসমের উপরে প্রভাব নিয়ে কোনও আলোচনা করা হয়নি বলে অভিযোগ।
নামনি সুবনসিরির ক্ষেত্রেও প্রথমে অসম্পূর্ণ সমীক্ষা চালিয়েই বাঁধ নির্মাণ করছিল এনএইচপিসি। পরে, আন্দোলনের চাপে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হয়। তার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভূকম্পপ্রবণ এলাকায় বেলে পাথরের ভিতের উপরে বাঁধের নকশা ত্রুটিপূর্ণ। তার জেরে ২০১১ সাল থেকেই বন্ধ রয়েছে সুবনসিরির কাজ।
উল্লেখ্য, এনডিএ ক্ষমতায় আসার আগে বৃহৎ বাঁধের বিরোধিতা করে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে, অরুণাচলের পাসিঘাটে নির্বাচনী সভায় এসে নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, বাঁধ গড়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষের মতকে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি ছোট বাঁধের পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন। তার আগে, রাজনাথ সিংহ গেরুকামুখে নামনি সুবনসিরি বাঁধ গড়ার বিপক্ষে আন্দোলনে সামিল হন। এনডিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে, দিল্লিতে বাঁধ-বিরোধী সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনার পরে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল আশ্বাস দিয়েছিলেন, সমীক্ষা না চালিয়ে উত্তর-পূর্বে বাঁধ গড়া হবে না।