ভুল অ্যাকাউন্টে টাকা! নজর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের

নোট বাতিলের জেরে অচল হয়ে যাওয়া টাকা বাঁচাতে নিত্যনতুন ফন্দি বার করছে কালো টাকার কারবারিরা। আর তাদের কৌশল বানচাল করতে নিত্যনতুন নির্দেশিকা জারি করছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও কেন্দ্রীয় সরকার।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

নোট বাতিলের জেরে অচল হয়ে যাওয়া টাকা বাঁচাতে নিত্যনতুন ফন্দি বার করছে কালো টাকার কারবারিরা। আর তাদের কৌশল বানচাল করতে নিত্যনতুন নির্দেশিকা জারি করছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও কেন্দ্রীয় সরকার।

Advertisement

৮ নভেম্বর নোট বাতিলের পরেই যেমন হিড়িক পড়েছিল রেল ও বিমানের টিকিট কিনে ফেলার। লক্ষ্য ছিল এখন পুরনো নোটে টিকিট কিনে পরে তা বাতিল করে নতুন নোট ফেরত নেওয়া। সেই কৌশল ঠেকাতে বিমানের টিকিট বাতিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ট্রেনের টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।

এ বার কালো নোট ভাল করার নতুন এক কৌশলের কথা জানা গিয়েছে। ভুল অ্যাকাউন্ট নম্বর লিখে ব্যাঙ্কে পুরনো নোট জমা দেওয়া।

Advertisement

সেটা সম্ভব কী ভাবে? ব্যাঙ্ক কর্তারা জানাচ্ছেন, টাকা জমা দেওয়ার স্লিপে লেখা নাম ও অ্যাকাউন্ট নম্বর না মিললে টাকা অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে না। থেকে যায় ব্যাঙ্কের হেফাজতে। অর্থাৎ, ধরা যাক আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের শেষ দু’টি নম্বর ৯৪। কিন্তু আপনি ভুল করে লিখলেন ৯৩। তা হলে টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে না। এক বছর পর্যন্ত তা পড়ে থাকবে ব্যাঙ্কের তহবিলে। এই সময়ের মধ্যে যদি আপনি টাকা জমা দেওয়ার স্লিপের কাউন্টার পার্ট দেখিয়ে ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন করেন, তা হলে সেই টাকা জমা করে দেওয়া হবে আপনার অ্যাকাউন্টে। না হলে তা বাজেয়াপ্ত করবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

ব্যাঙ্ক কর্তারা বলছেন, বেসরকারি ব্যাঙ্কে এ ভাবে টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ সেখানে টাকা জমা দেওয়ার সময়ই কম্পিউটারে অ্যাকাউন্ট নম্বর মিলিয়ে তা নথিভুক্ত করা হয়। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামের দিকের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে, যেখানে এমন ব্যবস্থা নেই বা সব সময় কম্পিউটার লিঙ্ক থাকে না, সেখানে কেউ কেউ এই ভাবে সরকারের নজর এড়িয়ে কিছু টাকা ফেলে রাখার চেষ্টা করছেন বলে খবর মিলছে। তাঁরা হয়তো ভাবছেন যে, এ ভাবে প্রায় এক বছর সময় পাওয়া যাবে। তার মধ্যে টাকা বাঁচানোর কোনও একটি উপায় নিশ্চয়ই মিলে যাবে।

সেই সম্ভাবনা ঠেকাতে ইতিমধ্যেই নড়েচড়ে বসেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এত দিন পর্যন্ত এই ধরনের হিসেব বহির্ভুত টাকার খবর এক বছরের আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে জানাতে হতো না। কিন্তু সাম্প্রতিক নির্দেশনামায় বলা হয়েছে, যে সব টাকার প্রকৃত মালিক নিয়ে সংশয় রয়েছে, তার হিসেব আলাদা করে জানাতে হবে। ফলে, ব্যাঙ্কগুলিকে আপাত মালিকবিহীন টাকার হিসেবও নিয়মিত দাখিল করতে হচ্ছে এখন। এবং এই কাজের জন্য একটি অ্যাপও চালু করা হয়েছে।

অনেক ব্যাঙ্ক অফিসারেরই বক্তব্য, এ ভাবে বেশি কালো টাকা সাদা করার চেষ্টা করা সম্ভব নয়। তবু ব্যাঙ্কের পরিকাঠামোর অভাবের কারণে অথবা ব্যাঙ্ক কর্মীদের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশ করে টাকা বদলের সামান্যতম সম্ভাবনাও বরদাস্ত করতে রাজি নয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্ক কর্তারা জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে কোনও গ্রাহক যদি ওই বেওয়ারিশ টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে ফেরাতে চান, তা হলে আর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নজর এড়িয়ে তা করা সম্ভব হবে না। তখন আরবিআইয়ের কাছে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে হবে তাঁকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement