করিমগঞ্জের সন্তরবাজার। ছবি: শীর্ষেন্দু শী।
ব্যবসায়ীদের শর্ত মেনে করিমগঞ্জ সন্তরবাজার তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করল পুরসভা। এতে পুরআইন ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধী শিবির। তবে পুরকর্তারা এ কথা মানতে চাননি।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ১৭ জুন বাজারের বিক্রেতারা গোপালজি মার্কেটে স্থানান্তরিত হবেন। ২০ জুন থেকে শুরু হবে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ। করিমগঞ্জের সন্তরবাজারের নতুন বাড়ি তৈরি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল, তা আজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছে পুরসভা।
করিমগঞ্জ পুরসভার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সন্তরবাজার। বাজার পরিষ্কার, ব্যবসায়ীদের দোকান বণ্টন, কর সংগ্রহ করে পুরসভাই। প্রাক্তন পুরপ্রধান দেবর্ষি ভট্টাচার্যের আমলে ওই বাজারে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু এখনও তা করা যায়নি। আসন্ন বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ রাজ্যের নগরোন্নয়ন ও পুরমন্ত্রী অজন্তা নেওগকে দিয়ে নতুন ভবনের শিলান্যাস করান। তার পর দু’বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করতে পারেনি পুরসভা। ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল, বাজারের বিক্রেতারা নতুন ভবনেও যে দোকান পাবেন তা লিখিত ভাবে জানাতে হবে। কিন্তু বিক্রেতাদের সঙ্গে কোনও ধরনের চুক্তি করা পুরআইনের পরিপন্থী।
২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন। করিমগঞ্জ শহরের প্রধান বাজারের নতুন ভবন তার আগে তৈরি না হলে, ভোট-ব্যাঙ্কে তার প্রভাব পড়তে পারে ভেবে যে কোনও উপায়ে বাজার নির্মাণে উদ্যোগী হন কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষবাবু। বাজারের ব্যবসায়ীদের আপত্তি সত্ত্বেও তড়িঘড়ি নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বিধায়ক। কিন্তু এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা চরম আপত্তি তোলেন। তাঁরা হুঁশিয়ারি দেন, পুরসভা তাঁদের সঙ্গে এ নিয়ে লিখিত চুক্তি না করলে বাজার নির্মাণের কাজ করতে দেওয়া হবে না। পুলিশ-সিআরপি বাহিনী পাঠিয়েও লাভ হয়নি। পুরপ্রধান-সহ অন্য পুরকর্তারা এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তাই নাগরিক সভা ডাকা হয়। নাগরিক সভার প্রথম বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত মানেননি সন্তরবাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এ দিন ফের নাগরিক সভার বৈঠকে যোগ দেন পুরকর্তা এবং বিধায়ক। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিক্রেতাদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করবে পুরসভা। বাজারের নতুন ভবনে দোকান দেওয়ার ক্ষেত্রে বিক্রেতা, ভেন্ডার এমনকী নালার উপরে থাকা ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও আগাম চুক্তি করা হবে। এর পরই বাজারের ব্যবসায়ীরা সন্তরবাজার খালি করতে রাজি হন।
পুরআইন অনুযায়ী, পুরবাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে আগাম চুক্তির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকলেও, তা মেনে নিয়েছে কংগ্রেস পরিচালিত করিমগঞ্জ পৌরসভা। বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, বাজার নির্মাণের ক্ষেত্রে বার বার নাগরিকসভা আহ্বান করে নিজেদের দুর্বলতাকেই প্রকাশ্যে এনেছে পুরনেতৃত্ব। অগ্রিম চুক্তি করতে রাজি হয়ে আইনও ভেঙেছেন তাঁরা। জেলার বিজেপি নেতা রথীন্দ্র ভট্টাচার্য, মানস দাসদের বক্তব্য— পুরআইন ভেঙে এ ভাবে লিখিত চুক্তির শর্ত মেনে নেওয়া যায় না। পুরপ্রধান মৌখিক ভাবেই বিক্রেতাদের আশ্বাস দিতে পারতেন।
উপ-পুরপ্রধান পার্থসারথি দাস অবশ্য এ কথা মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বার বার এ নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। কিন্তু বাজারের ব্যবসায়ীরা অন্য কোনও পদক্ষেপে রাজি ছিলেন না। বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। না হলে বাজারের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা ফেরত চলে যেত।’’