সরকারি পরিসংখ্যান অবশ্য বলছে, মোদী জমানায় গত পাঁচ বছরে ইডি-র মামলা সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ২০১৫-১৬-তে ইডি ১১১টি মামলার তদন্ত শুরু করেছিল। ২০২০-২১-এ ৯৮১টি। ২০ বছরে ইডি মোট ৪,৭০০টি মামলা দায়ের করেছিল।
প্রতীকী ছবি। —ফাইল চিত্র।
মুম্বইয়ে মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিকের গ্রেফতারির পরে ফের যখন রাজনৈতিক স্বার্থে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক স্বার্থে ইডি-কে কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠছে, ঠিক তখনই দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করল, ইডি তো এ যাবৎ খুব বেশি সংখ্যক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেনি।
শীর্ষ আদালতে মোদী সরকারের যুক্তি, ইডি-র প্রধান অস্ত্র আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইন পাশ হয়েছে ২০০২ সালে। এই আইনে ইডি ৪,৭০০টি মামলার তদন্ত করছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত গত বিশ বছরে মাত্র ৩১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনের পক্ষে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার যুক্তি, এই আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইন বা বা পিএমএলএ (প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট)-কে হাতিয়ার করেই বিজয় মাল্য, নীরব মোদী, মেহুল চোক্সীর মতো বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ব্যাঙ্কের প্রতারণায় অভিযুক্তদের থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আদালত দমনমূলক পদক্ষেপ না করার নির্দেশ দেওয়ায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা উদ্ধার করার কাজ আটকে রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিরোধী শাসিত রাজ্যে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হওয়ায় অভিযোগ উঠেছিল, মোদী সরকার পিএমএলএ-তে ইডি-কে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়ে ফেলেছে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একগুচ্ছ মামলা হয়। প্রশ্ন ওঠে, কারও বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, তা তাঁকে না জানিয়েই ইডি কী ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে পারে! মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল ইডি-কে ‘লাগামহীন ঘোড়া’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ইডি কাউকে গ্রেফতার করলে, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করা না পর্যন্ত জামিন মিলছে না। ফলে নাগরিকদের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারে আঘাত আসছে।
আজ বিচারপতি এ এম খানউইলকরের বেঞ্চে মোদী সরকারের হয়ে সওয়াল করতে উঠে সলিসিটর জেনারেল মেহতা পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, আদালত দমনমূলক পদক্ষেপ করতে বাধা দেওয়ায় বহু ক্ষেত্রে সাক্ষ্যপ্রমাণ উধাও হয়ে যাচ্ছে। কারণ আর্থিক নয়ছয়ের ক্ষেত্রে স্রেফ কম্পিউটারের বাটন ক্লিক করেই নথি উধাও করে দেওয়া যায়।
সরকারি পরিসংখ্যান অবশ্য বলছে, মোদী জমানায় গত পাঁচ বছরে ইডি-র মামলা সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ২০১৫-১৬-তে ইডি ১১১টি মামলার তদন্ত শুরু করেছিল। ২০২০-২১-এ ৯৮১টি। ২০ বছরে ইডি মোট ৪,৭০০টি মামলা দায়ের করেছিল। তার মধ্যে গত পাঁচ বছরে ২,১৮৬টি। মেহতার অবশ্য যুক্তি, আমেরিকা, ব্রিটেন, চিন, হংকং, রাশিয়া, বেলজিয়ামের মতো দেশে অনেক বেশি আর্থিক নয়ছয়ের মামলা দায়ের হয়। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স’-এর অঙ্গ হিসেবে ভারতকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ীই অপরাধ, সন্ত্রাসে আর্থিক মদত, দুর্নীতি রুখতে কড়া পদক্ষেপ করতে হয়। কারণ আন্তর্জাতিক দুনিয়া মেনে নিয়েছে, একটি আর্থিক নয়ছয়ের অপরাধ এমন ভাবে বিভিন্ন দেশে জাল ছড়ায় যে আলাদা ভাবে একটি দেশের পক্ষে তার মোকাবিলা সম্ভব নয়। সেই অনুযায়ীই ভারতকে আইন কঠোর করতে হয়েছে।
মেহতার অবশ্য দাবি, কোনও তদন্তকারী সংস্থাই যাতে লাগামহীন ঘোড়া না হয়ে যায়, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে।