টানা তিন দিন উদ্ধারকাজে ব্যস্ত ছিলেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একাধিক সদস্য। ছবি: পিটিআই।
কারও তিন দিন ধরে খাওয়া বন্ধ। কেউ চোখ বুজলেই দেখছেন সারি সারি মৃতদেহ। কারও কানে ভেসে আসছে আহতদের আর্তনাদ। কেউ জলের জায়গায় দেখছেন চাপ-চাপ রক্ত। শুক্রবার সন্ধ্যায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পর থেকে টানা তিন দিন উদ্ধারকাজে ব্যস্ত থাকা জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)-এর একাধিক সদস্য এমনই মানসিক অস্থিরতা ও বিভ্রমের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করলেন ওই বাহিনীর ডিজি অতুল কারওয়াল। তিনি জানান, যাঁদের এ ধরনের সমস্যা হয়েছে তাঁদের তো বটেই, অন্য যাঁরা উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের জন্যও মনোবিদের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
করমণ্ডল দুর্ঘটনার উদ্ধারকাজে এনডিএআরএফ-এর মোট ৯টি দল সক্রিয় ছিল বলে আজ জানিয়েছেন অতুল। বাহিনী সূত্রে দাবি করা হয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজেদেরই এক কর্মীর ফোনে দুর্ঘটনার প্রথম খবর পয়েছিল তারা। কলকাতায় এনডিআরএফ-এর দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়নে কর্মরত বেঙ্কটেশ এন কে নামে ওই কর্মী করমণ্ডল এক্সপ্রেসেই কলকাতা থেকে চেন্নাইতে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি ছিলেন এসি থ্রি টিয়ারে। দুর্ঘটনার অভিঘাতে নিজের আসন থেকে ছিটকে পড়েন বেঙ্কটেশ। ঘন অন্ধকারে মোবাইলের আলোকে ভরসা করে ট্রেন থেকে বেরিয়ে এসে প্রথমেই দুর্ঘটনার খবর জানান কলকাতা-স্থিত তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন দুর্ঘটনাস্থলের ‘লাইভ লোকেশন’-ও। অন্ধকার সত্ত্বেও দুর্ঘটনাস্থলের ঠিকানা জানা থাকায় এক ঘণ্টার মধ্যে ওড়িশার রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। ফলে বেশ কিছু প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, সব মিলিয়ে ১২১টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে এনডিআরএফ। ধ্বসংস্তূপে আটকে পড়া ও গুরুতর আহত অসংখ্য মানুষকে বারও করে এনেছে তারা।
সাধারণত এই ধরনের উদ্ধারকাজ থেকে ফিরে এলেই উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের মনোবিদের কাছে পাঠানো হয়ে থাকে। আজ অতুল বলেন, ‘‘উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া এমন এক জনের সঙ্গে দেখা হয়, যিনি জলের বদলে কেবল রক্ত দেখতে পাচ্ছেন। আর এক জন আমায় জানান, তিন দিন ধরে তিনি কিছু খেতে পারছেন না।’’ বাহিনী সূত্রে বলা হয়েছে, বড় মাপের দুর্ঘটনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই উদ্ধারকারীদের মানসিক অবস্থা ঠিক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে মনোবিদদের সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও যাঁদের মধ্যে এমন অস্থিরতা ও বিভ্রম দেখা যাচ্ছে, তাঁদের মানসিক ভাবে সুস্থ করে তুলতে সব ধরনের পদক্ষেপ করা হয়েছে।