দিল্লি কী ভাবে ‘গ্যাস চেম্বার’ হয়ে উঠল? শুনানি সুপ্রিম কোর্টে

ডিজেল-চালিত জেনারেটরের ব্যবহার আপাতত দশ দিনের জন্য বন্ধ। ঘরবাড়ি তৈরি বা সংস্কারের কাজ করা যাবে না আগামী পাঁচ দিন। দশ দিন বন্ধ থাকবে বদরপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৫
Share:

ধোঁয়াশায় ঝাপসা ইন্ডিয়া গেট। দূষণ থেকে বাঁচতে ভরসা এখন মাস্ক। রবিবার রাজধানীতে। ছবি: পিটিআই

ডিজেল-চালিত জেনারেটরের ব্যবহার আপাতত দশ দিনের জন্য বন্ধ।

Advertisement

ঘরবাড়ি তৈরি বা সংস্কারের কাজ করা যাবে না আগামী পাঁচ দিন।

দশ দিন বন্ধ থাকবে বদরপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

Advertisement

বৃহস্পতিবার থেকে শহর পরিষ্কার করার পাশাপাশি উড়ন্ত ধুলোর কণা রুখতে জলও ছেটানো হবে রাস্তাঘাটে।

‘গ্যাস চেম্বার’ রাজধানীকে স্বস্তি দিতে আজ তড়িঘড়ি এই চার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। গত ১৭ বছরে এমন ভয়াবহ দূষণ দেখেনি দিল্লি। যার জেরে গত কাল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রাজধানীর শতাধিক সরকারি-বেসরকারি স্কুল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেই ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে আরও তিন দিন। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি হবে মঙ্গলবার।

কারণ আজ, রবিবারেও সরেনি ধুলোর চাদর। রঞ্জি ট্রফির দু’টি ম্যাচ গত কাল থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল দিল্লিতে। বাংলা বনাম গুজরাত এবং হায়দরাবাদ বনাম ত্রিপুরা। ধোঁয়াশার দাপটে কাল প্রথম দিনের খেলা শুরুই করা যায়নি। শ্বাসকষ্ট থেকে বাঁচতে মুখোশ পরে থাকতে হয়েছিল মনোজ তিওয়ারিদের। আজ সেই দু’টি ম্যাচই বাতিল ঘোষণা করেছে বোর্ড।

কেজরীবাল দিল্লিবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন, দরকারে বাড়িতে বসেই অফিসের কাজ করুন। স্কুল বন্ধ হলেও রাজধানীর নগরজীবন— পথঘাট, দোকানবাজার যে স্তব্ধ, এমন নয়। কিন্তু চেনা ছন্দ নেই কোথাও। ধোঁয়াশার জেরে ভরদুপুরেই নেমে এসেছে সন্ধে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় কিছুটা হাল্কা দিল্লির চেনা যানজটও। আর পথচারীদের মুখ ঢাকা মুখোশে। নানা নকশার মুখোশ নব্বই থেকে দু’হাজার টাকায় বিকোচ্ছে দোকানে-দোকানে। গত এক সপ্তাহে বেড়েছে এয়ার-পিউরিফায়ারের বিক্রিও।

গত কাল দিল্লিকে ‘গ্যাস চেম্বার’ তকমা দিয়েছিলেন কেজরীবাল। বলেছিলেন, পড়শি রাজ্যগুলির খেতে ফসল তোলার পর সেখানে শুকনো খড় পোড়ানো হচ্ছে। দূষণ বাড়ছে তা থেকেও। দূষণমুক্তির পথ খুঁজতে আজ মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন তিনি। সেই বৈঠক শেষে কেজরীবাল বলেন, ‘‘দিল্লির দূষণ নিয়ে রাজনীতি করার বদলে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করতে হবে। দূষণ ইতিমধ্যেই মাত্রা ছাড়িয়েছে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছি। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।’’

সেই জরুরি পদক্ষেপেরই ফল ওই চার দফা নির্দেশিকা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আগামী দশ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হচ্ছে কয়লা চালিত বদরপুর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। সেখানে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় প্রতিদিন। এ ছাড়াও কয়লা পুড়ে তৈরি হওয়া ছাই যাতে উড়ে বাতাসে না মিশতে পারে, তার জন্য জল ঢালা হবে ছাইয়ের গাদাগুলিতে। রাস্তা থেকে ধুলো ওড়া রুখতেও একই ব্যবস্থা। এর জন্য রোজ রাস্তা ভেজানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পূর্ত দফতরকে। ধুলোর পাশাপাশি বাতাসে ধোঁয়ার মাত্রাও ভাবাচ্ছে প্রশাসনকে। হাসপাতাল বা মোবাইল টাওয়ারের মতো জরুরি পরিষেবাগুলি ছাড়া তাই ডিজেল-জেনারেটর চালানো বন্ধ রাখা হচ্ছে আগামী ১০ দিন। এমনকী যে ‘বেআইনি’ বস্তিগুলিতে ডিজেল জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে এই ক’দিন দিল্লি সরকারই বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও দূষণ রুখতে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগে করে আজ যন্তরমন্তরে বিক্ষোভও হয়েছে।

এই অবস্থায় দিল্লির রাস্তায় ফের জোড়-বিজোড় গাড়ি-নীতি ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছে প্রশাসন। আজ কেজরীবাল বলেছেন, ‘‘আমরা আবার চাইছি জোড় ও বিজোড় সংখ্যার গাড়ি আলাদা আলাদা দিনে রাস্তায় বেরোক। আগামী কয়েক দিন দেখব। তার পর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা।’’ গত কাল কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী অনিল দাভের সঙ্গেও বৈঠক করেন কেজরীবাল। তিনি জানান, কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি তৈরি করে দিল্লিকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে কথা হয়েছে কেন্দ্রের সঙ্গে। কোথাও পাতা বা আবর্জনা পোড়ানো হচ্ছে দেখলে সে বিষয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য অ্যাপের সাহায্য নেওয়ার কথা বলেছে রাজ্য পরিবেশ দফতর।

শুধু দিল্লি নয়, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব ও হরিয়ানাতেও পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। এ দিন গাড়ি দুর্ঘটনায় হরিয়ানার কার্নালে মৃত্যু হয়েছে এক মহিলা-সহ তিন জনের। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়ার অন্যতম কারণ আর্দ্রতা। ভাসমান দূষিত কণাগুলি আর্দ্রতার জন্য জমাট বেঁধে যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে ধোঁয়াশা। তবে বিশেষজ্ঞদের আশা, সোমবারের পর শুকনো উত্তুরে হাওয়া বয়ে আসবে দিল্লিতে। তখন খানিকটা বদলাতে পারে পরিস্থিতি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement