এ যাত্রা তিস্তা চুক্তি না-করার আশ্বাসে তাঁর আসন্ন ঢাকা সফরে সঙ্গী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। তবে বাংলাদেশে গিয়ে তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও কথা না-বললেও শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে জট ছাড়াতে উদ্যোগী হবেন প্রধানমন্ত্রী। এবং তাতে কোনও আপত্তি নেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর।
মোদীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতে নিযুক্ত সে দেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি। সেই বৈঠকেই মোদী জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সফরের অগ্রাধিকার কী। বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি সংসদের অনুমোদন পাওয়ার পরে সেই চুক্তি স্বাক্ষর করতেই ৬ জুন ঢাকা যাচ্ছেন মোদী। তিনি মনে করেন, স্থলসীমান্ত চুক্তি করাটা মোটেই ছোটখাটো ব্যাপার নয়। এর ফলে দু’দেশের কয়েক লক্ষ মানুষের দীর্ঘ কয়েক দশকের সমস্যার সমাধান হবে। এই চুক্তি নিয়ে নানা রাজ্যে বহু মতপার্থক্য ছিল। সে সবের নিরসন ঘটিয়ে দু’দেশের মধ্যে সীমান্তরেখা চূড়ান্ত করাকে ঐতিহাসিক ঘটনা বলেই মনে করছে ভারত সরকার।
স্থলসীমান্ত চুক্তির পরে যে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশা সব চেয়ে বেশি, সেটা অবশ্যই তিস্তা। এ নিয়ে জটিলতা কী ভাবে কাটবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। মোয়াজ্জেম আলি আজ বলেন, ‘‘২০১১ সালে তিস্তা চুক্তির একটি খসড়া তৈরি হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হয়।’’ কিন্তু ওই খসড়া নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন মমতা। তাঁর যুক্তি ছিল, যে সূত্র মেনে জলবণ্টনের কথা বলা হচ্ছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে গিয়ে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলতে চেয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কিন্তু মমতার আপত্তির জেরে তাঁকে পিছিয়ে আসতে হয়। কেন্দ্র তাঁকে না-জানিয়ে চুক্তি নিয়ে অগ্রসর হয়েছে, এই অভিযোগে মনমোহনের সঙ্গে ঢাকা যেতেও অস্বীকার করেন মমতা। কিন্তু তিনি যে তিস্তা চুক্তির বিরোধী নন, সে কথা একাধিক বার বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে এ ব্যাপারে বিস্তারিত
আলোচনা করে এসেছেন তিনি।
মমতার বক্তব্য, তিস্তা জট ছাড়াতে আলোচনার মাধ্যমে কূটনৈতিক পথ নির্দেশিকা খুঁজে বের করার ব্যাপারে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু চুক্তিটা এমন ভাবে করা হোক, যাতে পশ্চিমবঙ্গের কোনও সমস্যা না হয়। কিন্তু ঘটনা হল, ২০১১ সালের খসড়া চুক্তির পরে নতুন করে আর কোনও খসড়া তৈরি হয়নি। ফলে সমাধানসূত্র এখনও অধরা। তবে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গত কাল ফোন করে মমতাকে আশ্বাস দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থকে আঘাত করে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও চুক্তি দিল্লি করবে না।
অন্য দিকে বাংলাদেশ চাইছে, দু’দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া অন্য নদীগুলির জলবণ্টন নিয়েও পারস্পরিক সমঝোতা হোক। দু’দেশের উপর দিয়েই গিয়েছে এমন নদীর সংখ্যা ৫৪। মোয়াজ্জেম আলি আজ বলেন, ‘‘গঙ্গা ও তিস্তা ছাড়া বাকি ৫২টি নদী নিয়েও দু’দেশের মধ্যে দ্রুত আলোচনা শুরু হওয়া উচিত। সে জন্য জয়েন্ট বেসিন ম্যানেজমেন্টকে কার্যকর করে তুলতে হবে।’’
এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, মমতা ৬ জুন সন্ধেবেলা ঢাকা যাবেন। পর দিন সন্ধেয় ফিরে আসবেন। রবিবার ৭ তারিখ দু’দেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি সই হওয়ার কথা। সেই অনুষ্ঠানে মোদীর পাশে থাকবেন মমতা। তবে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর সব কর্মসূচিতে তিনি উপস্থিত থাকবেন না। মোয়াজ্জেম আলি আজ বলেন, ‘‘৩৬ ঘণ্টার সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করবেন নরেন্দ্র মোদী। রাতে তিনি সরকারি নৈশভোজে যোগ দেবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর অবদানকে স্বৃীকতি দেবে শেখ হাসিনা সরকার। বাজপেয়ীর হয়ে ওই সম্মান গ্রহণ করবেন মোদী।’’ বাংলাদেশ সরকার আয়োজিত এই সব অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে যাবেন। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাবেন বেলুড় মঠের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ। এ ছাড়া ঢাকেশ্বরী কালীবাড়ি, ভাষা শহিদ স্মারকস্থল ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।