লালকেল্লায় নরেন্দ্র মোদী।
অতীতেও নেননি। স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার মঞ্চ থেকেও চিনের নাম করলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সন্ত্রাসের প্রশ্নে নাম নিলেন না পাকিস্তানেরও। তবে আক্রমণের নিশানায় দু’টি দেশকে একই পঙ্ক্তিতে রেখে বুঝিয়ে দিলেন চিন ও পাকিস্তান আসলে সম্প্রসারণবাদ ও সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা।
লালকেল্লার মঞ্চ থেকে মোদী মনে করিয়ে দিলেন, ভারতের দিকে হাত বাড়ালে ফল ভুগতে হবে। কারণ, এ দেশের সার্বভৌমত্বকে যখনই কেউ চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে, তখনই ভারতীয় সেনা তার যোগ্য জবাব দিয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর ঘোষণা, সীমান্তবর্তী এলাকার এক লক্ষ এনসিসি ক্যাডেটকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নিত্য-নতুন সাইবার হানার কথা মাথায় রেখে আসতে চলেছে নতুন সাইবার নীতিও। সেনার বীরত্বের প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে একসুর হলেও, কংগ্রেসের প্রশ্ন, আজকের দিনেও কেন অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিনের নাম নিলেন না প্রধানমন্ত্রী?
দফায় দফায় বৈঠকের পরেও পূর্ব-লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে এসে একাধিক স্থান জবরদখল করে বসে রয়েছে চিনা সেনা। তাই লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কী বলেন, তা নিয়ে আগ্রহ ছিল সর্বস্তরেই। চিন-পাকিস্তানের নাম না-করলেও এ দিন মোদীর বক্তব্যের নির্যাসটি ছিল এই রকম: দেশ এক অসাধারণ লক্ষ্য নিয়ে অসাধারণ যাত্রা শুরু করেছে। চলার পথ প্রতিকূলতায় ভরা। সম্প্রতি সীমান্তে কিছু দুর্ভাগ্যপূর্ণ গতিবিধি দেশকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। কিন্তু যারাই নিয়ন্ত্রণরেখা বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় দেশের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল, দেশের সাহসী সেনারা তাদের যোগ্য জবাব দিয়েছেন। বিশ্ব দেখেছে লাদাখে দেশকে রক্ষার প্রশ্নে ভারতের সেনা কী করতে সক্ষম। আজ লালকেল্লার এই প্রাঙ্গন থেকে মাতৃভূমির জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী সেনাদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানাই।
আরও পড়ুন: পরিকাঠামোয় লগ্নি, কিন্তু টাকা দেবে কে?
চিনের সঙ্গে পাকিস্তানকেও নিশানায় রেখে মোদীর বক্তব্য, সম্প্রসারণবাদ ও সন্ত্রাসবাদ— এই দুইয়ের অশুভ আঁতাতের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে ভারতকে। এই লড়াইয়ে গোটা বিশ্ব ভারতের পাশে রয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য হিসেবে ভারতের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে ১৯২টি দেশের মধ্যে ১৮৪টি দেশের সমর্থনই তার প্রমাণ।
সীমান্ত প্রশ্নে মোদী চিনের নাম না করায় কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার কটাক্ষ, “প্রত্যেক কংগ্রেসকর্মী এবং ১৩০ কোটি ভারতবাসী সেনার জন্য গর্বিত এবং তাদের উপরে দেশবাসীর সম্পূর্ণ ভরসা রয়েছে। চিনকে প্রতি বার যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য আমরা সেনাকে কুর্নিশ জানাই। কিন্তু যাঁরা ক্ষমতায় বসে আছেন, তাঁরা কেন চিনের নাম নিতে ভয় পাচ্ছেন?”
সীমান্তের উত্তপ্ত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ইজ়রায়েলের ধাঁচে ছাত্র-ছাত্রীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুপারিশ করেছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত বছরের সেই সুপারিশ এ বারে বাস্তবায়ন করবে সরকার। মোদী জানিয়েছেন, সীমান্ত এলাকার যে এক লক্ষ পড়ুয়াকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তার এক-তৃতীয়াংশ হবেন মেয়েরা। উপকূলবর্তী এলাকার ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ দেবে নৌসেনা। যে সীমান্তের কাছে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে, সেখানে ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নেবে বায়ুসেনা। ভবিষ্যতে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন এঁরা। সীমান্ত ও উপকূল এলাকায় বিপর্যয় মোকাবিলাতেও কাজ লাগানো হবে এই প্রশিক্ষিত ক্যাডেটদের।