বক্তা: কেদারনাথ মন্দিরের সামনে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার উত্তরাখণ্ডে। ছবি: পিটিআই।
মন্দির চত্বরে ঢুকেই সাষ্টাঙ্গে প্রণাম। মিনিট কুড়ির পুজো সেরে যখন বেরোলেন, কপালে তিলক, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। চোখে রোদচশমা। তখনও অবধি তিনি নেহাতই এক ভিভিআইপি পুণ্যার্থী। একটু পরেই মন্দির প্রাঙ্গণকে রাজনৈতিক মঞ্চ বানিয়ে ফেলে জড়ালেন এক বিরল বিতর্কে।
তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বৃহস্পতিবার দীপাবলির দিনটা জওয়ানদের সঙ্গে কাটিয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের গুরেজ সেক্টরে। তার পরের দিন, শুক্রবারই প্রধানমন্ত্রী গেলেন কেদারনাথ মন্দিরে। শীতের জন্য শনিবারই আগামী মাস ছয়েকের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে কেদারনাথ মন্দিরের কপাট। বিগ্রহ নেমে আসবে উখিমঠে। তার আগের দিন কেদারনাথে পুজো দিতে গিয়ে মন্দির প্রাঙ্গণে রীতিমতো জনসভা করে উন্নয়নের ফিরিস্তি পেশ করার পাশাপাশি কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করলেন।
কেদারনাথের মতো মন্দির চত্বরকে মোদী এ ভাবে রাজনৈতিক মঞ্চ করে তোলায় ক্ষুব্ধ বিরোধীরা। কংগ্রেসের কথায়, ‘‘বাবার প্রধান দরজার সামনে রাজনৈতিক মঞ্চ সাজিয়ে ঈশ্বরকে পিঠ দেখিয়ে ফের মিথ্যার বুলি আওড়ালেন মোদী! ভুলে গেলেন ভারতের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য।’’ আর ক্ষুব্ধ পরিবেশবিদেরা বলছেন, উন্নয়নের নামে এর আগেও কেদার-সহ হিমালয়ের বিস্তীর্ণ অংশের ধ্বংসই ডেকে এনেছে দিল্লির সরকার। মোদীর উন্নয়নের ফিরিস্তি সেই ধ্বংসকেই ত্বরান্বিত করবে।
আরও পড়ুন: ভোট কবে বলবেন মোদীই, কটাক্ষ চিদম্বরমের
এর আগে রাহুল গাঁধী কেদার দর্শন করেছেন। তিনি গিয়েছিলেন দীর্ঘ পথ হেঁটে। গুজরাত সফরে গিয়েও বহু মন্দির দর্শন করেছেন তিনি। রাহুলের এই পদক্ষেপ ভাঁজ ফেলেছে বিজেপির কপালে। দলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী ব্যঙ্গ করেছেন, ‘‘রাহুল তো আরতি করতেই জানেন না!’’ হিন্দু ভোট টানার এই প্রতিযোগিতায় রাহুলের মোকাবিলা করতেই মোদীর আজ কেদারনাথ যাত্রা। মোদী অবশ্য গেলেন হেলিকপ্টারে। এবং শুধু পুজো দেওয়াই যথেষ্ট নয় মনে করে মন্দির প্রাঙ্গণেই মঞ্চে উঠে কংগ্রেসকে বিঁধলেন। কেদার-প্রাঙ্গণকে বানিয়ে ফেললেন রাজনৈতিক মঞ্চ! ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল কেদারনাথ। এ দিন মোদীর দাবি, গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি কেদারনাথের মন্দির পুনর্নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের তৎকালীন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণাকে। মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে সম্মতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরে কেন্দ্রের তৎকালীন ইউপিএ সরকারের চাপে বহুগুণা জানান, গুজরাত সরকারের সাহায্য লাগবে না। সেই বহুগুণা এখন বিজেপিতে।
এ দিন মোদী জানান এখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি সেই কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘কেদারনাথের এই পুণ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে আমি ভোলেবাবার আশীর্বাদ চাইছি এবং শপথ নিচ্ছি, ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার মধ্যেই ভারতকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণের জন্য আমি নিজেকে নিয়োজিত করব।’’
কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা পাল্টা বলেন, ‘‘একে তো ভোলে বাবার প্রাঙ্গনে রাজনীতি। তাতেও এত অহঙ্কার! নিঃস্বার্থ সেবার লেশ মাত্র নেই। এখানেও মোদীর মিথ্যার ফুলঝুরি।’’
সনিয়া গাঁধীর ইতালি-যোগকে ব্যঙ্গ করতে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা রাহুলকে কটাক্ষ করে বলেন, কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ইতালির চশমা পরে আছেন। এ দিন সুযোগ পেয়ে জবাব দিল কংগ্রেস। দলের নেতা আর পি এন সিংহ বলেন, ‘‘মোদী নিজে ইতালিয়ান ব্র্যান্ডের চশমা ছেড়ে রাহুলের মতো ১৮ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে দেখান না, বাবার প্রতি তাঁর কত ভক্তি!’’
২০১৩ সালের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল কেদারনাথের। মূল মন্দির অক্ষত থাকলেও ধ্বংস হয়ে যায় তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা জনপদ। এ দিন কেদারনাথে পাঁচটি প্রকল্পের শিলান্যাস করে সেখানকার পর্যটন পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণের প্রতিশ্রুতি দেন মোদী। জানান, কেদারনাথকে আদর্শ তীর্থক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।