আগে তুলেছিলেন ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। আজ মুখ খুললেন তিন তালাক নিয়ে। এ বারেও সেই ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে দাঁড়িয়ে।
গো-বলয়ের সব থেকে বড় রাজ্যে মেরুকরণের তাস উস্কে দিয়ে ধীরে ধীরে উত্তাপ বাড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু মেরুকরণের রাজনীতিতে ধুয়ো দিতে পাল্টা জবাব দেওয়ার কথা যাদের, সেই সমাজবাদী পার্টিই এখন ঘরের কোন্দলে ব্যস্ত। সে কারণে তিন তালাকের প্রসঙ্গ টেনে আনার পরেও আজ কৌশলে কিছুটা বদল এনে সমাজবাদীর পাশাপাশি মায়াবতীকেও আক্রমণের নিশানায় আনতে হল প্রধানমন্ত্রীকে।
বিভিন্ন সমীক্ষায় গোড়া থেকেই লখনউ তখ্ত দখলের লড়াইয়ে মায়াবতীকে এগিয়ে রাখা হচ্ছিল। কিন্তু বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘সমাজবাদী পার্টিই বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ।’’ কারণটি সহজবোধ্য। বিজেপি খেলবে হিন্দু-তাস, মুলায়মের দল সংখ্যালঘু। সেই রসায়নেই গত লোকসভায় বিজেপি উত্তরপ্রদেশের আশিটির মধ্যে সত্তরের বেশি আসন ঝুলিতে পুড়েছে। এ বার বিধানসভা ভোটেও সেই পথে এগোতে গিয়ে গোড়া থেকে মুলায়মের দলকে সামনে রেখেই ছায়া-যুদ্ধ করে যাচ্ছে বিজেপি। কখনও ‘জয় শ্রীরাম’ করে, কখনও আবার রামায়ণ সংগ্রহশালা, কখনও আবার তিন তালাক বিতর্ককে সামনে টেনে এনে।
কিন্তু বিজেপি নেতারা কবুল করছেন, বেশ কয়েক মাস ধরে যাদব বংশের কলহে নিজেদের ঘুঁটিও ঠিকমতো সাজিয়ে উঠতে পারছে না তাঁরা। মুলায়মকে ঘা দেওয়ার কৌশল নেওয়া হয়েছিল, যাতে তাঁকে গুরুত্ব দিয়ে মায়াবতীর ধার কিছুটা কমানো যায়। কিন্তু এখন খোদ নেতাজিই দলের কোন্দলে ঘেঁটে আছেন, বিজেপিকে জবাব দেবেন কী? সে কারণেই আজ বুন্দেলখণ্ডের সভায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সমাজবাদী পার্টির পাশাপাশি আক্রমণ করতে হল মায়াবতীকেও। মোদী বলেন, ‘‘এক পক্ষ নিজের পরিবার বাঁচাতে ব্যস্ত। অন্য পক্ষ কুর্সি বাঁচাতেই ব্যস্ত হয়ে যায়। আমরাই একমাত্র দল, যারা উত্তরপ্রদেশকে বাঁচাতে চাইছি। সমাজবাদী পার্টি আর বিএসপির চক্র থেকে উত্তরপ্রদেশকে রক্ষা করতে হবে।’’
এর পরেই প্রধানমন্ত্রী টেনে আনেন তিন তালাক প্রসঙ্গ। এ নিয়ে রাজনীতি না করার কথা বলেও পুরোদস্তুর রাজনীতিই করেছেন তিনি। মোদী বলেন, ‘‘যদি কোনও হিন্দু, মায়ের গর্ভের কন্যাভ্রূণ হত্যা করে তাকে জেলে যেতে হবে। ঠিক সেই ভাবে আমার মুসলিম বোনের কী অপরাধ যে তাকে টেলিফোনে তিন তালাক দেওয়া হচ্ছে? তার জীবন তো শেষ হয়ে গেল।’’ প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘মুসলিম মা-বোনেদের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা কি উচিত নয়?’’ মোদী বলেন, মুসলিম মহিলারাই আদালতে এ নিয়ে লড়াই করছেন। আদালত সরকারের মতামত জানতে চাওয়ায় কেন্দ্র অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর দাবি, এ ব্যাপারে সরকার ও বিরোধীদের লড়াই থাকা উচিত নয়।
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য মনে করছেন, যাদব পরিবারের কলহ অচিরেই মিটবে। যেদিনই ঘর গুছিয়ে নিতে পারবেন মুলায়ম, তখনই বিজেপির বিরুদ্ধে ফোঁস করা শুরু করবেন নেতাজি। তাতেই জমবে ভোটের আসর। এরই মধ্যে স্মৃতি ইরানি থেকে রবিশঙ্কর প্রসাদের মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা আক্রমণ করেছেন রাহুল গাঁধীকে। বলছেন, বিজেপির ভয়ে রাহুল এখন অখিলেশের দ্বারস্থ। তবে মুলায়মের দলে ভাঙনের সম্ভাবনায় যতটা আহ্লাদিত হওয়ার কথা ছিল বিজেপির, তারা ততটা উৎসাহিত হচ্ছে না। কারণ একটাই, বিজেপি ভেবেছিল, মেরুকরণের রাজনীতিতে মুলায়ম যদি সংখ্যালঘু তাস খেলে তা হলে বিজেপির হিন্দু তাস খেলা সহজ নয়। সে ক্ষেত্রে মায়াবতী প্রধান প্রতিপক্ষ হবেন না। কংগ্রেসের সম্ভাবনাও দূর অস্ত্। কিন্তু মুলায়মের দলে ভাঙনের সম্ভাবনা সব সমীকরণ পাল্টে দিয়েছে।