মন্ত্রীরা ইস্তফা দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু চন্দ্রবাবু নায়ডুকে এনডিএতে ধরে রাখার জন্য এখনও প্রবল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিজেপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, চন্দ্রবাবুর এনডিএ ছাড়লে লোকসভা ভোটের আগে মোদীর নেতৃত্বে দিল্লির জোট সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে। শিবসেনা, পিডিপি-র মতো শরিকদের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্কে এমনিতেই টানাপড়েন রয়েছে। তার মধ্যে তেলুগু দেশমের মন্ত্রীরা মন্ত্রিসভা ছাড়ায় বড় ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। আর নিজের রাজ্যে সরকার-বিরোধী ভোট সামলাতে চন্দ্রবাবু যে ভাবে অন্ধ্রকে বঞ্চনার গোটা দায় মোদীর ঘাড়েই ফেলে দিয়ে তাঁকে খলনায়ক বানিয়েছেন, অন্য শরিকরাও সেই রাস্তায় গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। চন্দ্রবাবুর দলের মন্ত্রীদের ইস্তফা নিয়ে শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত তো সরাসরিই মন্তব্য করেছেন, ‘‘বিজেপির উপর সব শরিকরাই ক্ষুব্ধ। একে একে সবাই ওদের ছেড়ে যাবে।’’ মোদী শিবির বুঝছে, এনডিএ জোটের সঙ্কটকে ব্যবহার করতে তৎপর হয়েছেন রাহুল গাঁধী। সে কারণেই বিজেপির দক্ষিণের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার আজ বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস আর জগন্মোহন রেড্ডি অপপ্রচার করছে বলেই তেলুগু দেশমের মন্ত্রীদের ইস্তফা দিতে হল। তবে এনডিএ অটুট ছিল, থাকবেও।’’
মুখে এ সব দাবি করলেও বিজেপি নেতারা বুঝছেন, এনডিএতে নায়ডু আদৌ থাকবেন কিনা, তার এত টুকু ভরসা নেই। তাঁরা মনে করছেন, অন্ধ্রের বিশেষ মর্যাদার দাবি নিয়ে বিরোধী শিবির থেকে জগন্মোহন রেড্ডির মতো নেতারা যে ভাবে চাপ বাড়াচ্ছেন, তাতে চন্দ্রবাবু পক্ষে ভিন্ন সুরে কথা বলা মুশকিল। তিনি আসলে বিধানসভা ও লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে নিজের ঘর গুছিয়ে নিতে চাইছেন। এমনকী, রাজ্যে বিজেপির ভোটও কেটে নিতে চাইছেন চন্দ্রবাবু। আবার জগন রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির ভোটে বিজেপিকে সমর্থন করলেও এখন ভোটের আগে গেরুয়া শিবির থেকে দূরত্ব রাখতে আগ্রহী। ভোট এগিয়ে এলে তিনি আরও সরব হবেন অন্ধ্রের বঞ্চনা নিয়ে। ফলে গোটা পরিস্থিতিটাই মোদীর সামনে সঙ্কট নিয়ে এসেছে। এরই মধ্যে আজ তেলুগু দেশমের মন্ত্রীদের ইস্তফা গ্রহণ করেছেন মোদী। গত কাল রাতেই অন্ধ্রের মন্ত্রিসভা থেকে বিজেপি মন্ত্রীদের ইস্তফা গ্রহণ করেছিলেন চন্দ্রবাবু। মোদী আজ কিছুটা সময় নিয়েই চন্দ্রবাবুর দলের মন্ত্রীদের ইস্তফাপত্র গ্রহণ করলেন। রাষ্ট্রপতি ভবনের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অশোক গজপতি রাজুর ছেড়ে যাওয়া অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক নিজের হাতেই রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আর গত কাল মোদীর সঙ্গে কথা হওয়ার পরে আজ দলের জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন নায়ডু। তাঁর দলের এনডিএ-তে থাকার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। সূত্রের খবর, নিজেদের দাবিকে সংসদের বাজেট অধিবেশনে জোরালো ভাবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চন্দ্রবাবু। এনডিএ ছাড়ার ব্যাপারে আপাতত জল মাপতে চাইছেন তিনি। বাজেট অধিবেশনের পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন।