আমজনতার ‘চোখে জল’, পরিস্থিতি সামালাতে আপাতত পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ

দেশের বিভিন্ন বাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমশ পেঁয়াজের দর বাড়ছে। কলকাতায় খুচরো বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে গড়পড়তা ৬০ টাকা কিলোগ্রাম দরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:২২
Share:

ছবি: পিটিআই।

দেশের প্রায় সর্বত্রই পেঁয়াজ অগ্নিমূল্য। ঝাঁঝে আমজনতার ‘চোখে জল’। আক্রমণ শানাচ্ছেন বিরোধীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে আপাতত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ রাখা-সহ একগুচ্ছ পদক্ষেপ করল কেন্দ্র। পাইকারি এবং খুচরো ব্যবসায়ীদের মজুতের ঊর্ধ্বসীমা বাঁধার পাশাপাশি, রাজ্যগুলিকে কড়া হাতে কালোবাজারি রুখতে বলল নরেন্দ্র মোদীর সরকার।।

Advertisement

দেশের বিভিন্ন বাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমশ পেঁয়াজের দর বাড়ছে। কলকাতায় খুচরো বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে গড়পড়তা ৬০ টাকা কিলোগ্রাম দরে। পোস্তা বাজার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রের খবর, বর্তমানে ৪০ কিলোগ্রামের পেঁয়াজের বস্তার পাইকারি দর ঘোরাফেরা করছে ১৭০০ থেকে ১৮৫০ টাকার মধ্যে।

দেশে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের মজুতের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, এখন ১০০ কুইন্টালের বেশি পেঁয়াজ মজুত করতে পারবেন না খুচরো বিক্রেতা। পাইকারি বিক্রেতার ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ৫০০ কুইন্টাল। আগে এমন ক্ষেত্রে সাধারণত রাজ্যগুলিকে নিজেদের মতো করে ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিতে বলত কেন্দ্র। কিন্তু এ বার কেন্দ্রই সারা দেশের জন্য তা ঠিক করে দিয়েছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে পেঁয়াজ মজুত রেখে যাতে দাম বাড়ানো না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য সব রাজ্যকে সজাগ থাকতে বলেছে কেন্দ্র। বলা হয়েছে কালোবাজারি রুখতে। গুদামে হানা দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে মোদী সরকার।

Advertisement

কেন্দ্র বলেছে, বাজারে জোগান বাড়াতে নতুন নির্দেশ জারি না-হওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজ রফতানি পুরোপুরি বন্ধ রাখা হবে। সম্প্রতি রফতানিতে রাশ টানতে প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রফতানি মূল্য ৮৫০ ডলারে বেঁধে দিয়েছিল তারা। কিন্তু রফতানি জারি থেকেছে। বিদেশমুখী সেই পেঁয়াজকে এ বার দেশের বাজারে আনতে তাই আপাতত রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত। মোদী সরকারের দাবি, চলতি বছরে রবি মরসুম শেষে জাতীয় কৃষি সমবায় বিপণন সমিতি (নাফেড) মারফত যে ৫৬,৭০০ টনের পেঁয়াজ-ভাঁড়ার তৈরি করা হয়েছে, তা দিল্লি, হরিয়ানা, অন্ধ্রপ্রদেশে জোগান বাড়াতে কাজে লাগানো হচ্ছে। এর ভাগ পেতে চাহিদা জানাতে পারে বাকি রাজ্যও।

পোস্তা বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের একাংশের মতে, এ বার অতিবৃষ্টির জেরে নাসিকের পেঁয়াজ চাষ ধাক্কা খেয়েছে। যেটুকু উৎপাদন হয়েছে, সেখান থেকে তা-ও ঠিক মতো আসছে না। ফলে দর চড়েছে।

পেঁয়াজ নিয়ে পদক্ষেপের পিছনে রাজনীতিও রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানায় অক্টোবরেই বিধানসভা নির্বাচন। বছর ঘুরলে দিল্লিতেও ভোট। এই অবস্থায় পেঁয়াজের দাম কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া কেন্দ্রের উপায় ছিল না।

অতীতে একাধিক বার পেঁয়াজের দরে কপাল পুড়েছে বিভিন্ন সরকারের— কেন্দ্রে প্রথম অকংগ্রেসি সরকারই হোক বা মহারাষ্ট্রে মনোহর জোশীর সরকার। অনেকে বলেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর তখ্‌তে সুষমা স্বরাজের ফিরতে না-পারার অন্যতম কারণ ছিল পেঁয়াজ। ২০১০ সালেও পেঁয়াজের চড়া দর নিয়ে দেশ জুড়ে ক্ষোভের মুখে পড়েছিল মনমোহন সিংহের সরকার। তখনও রফতানি বন্ধ করতে হয়েছিল। কিন্তু পরে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, দাম বৃদ্ধির মূল কারণ ছিল মজুতদারি এবং কালোবাজারি। এ বার রফতানিতে রাশ টানার পাশাপাশি, তাই কালোবাজারি বন্ধেও জোর দিতে চাইছে মোদী সরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement