এক বছরেই মিথ্যেবাদী তকমা প্রথম মোদীরই

এত দিন গরিব ও কৃষকদের বিরোধী, কর্পোরেটদের বন্ধু, স্যুট-বুটের সরকার— এই রকম অনেক বাছা বাছা বিশেষণই লোকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে উপেক্ষা করে এসেছেন তিনি। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায়, সরাসরি ‘মিথ্যেবাদী’ তকমা পেয়েছেন কি কেউ? রাজধানীর অনেক প্রবীণ রাজনীতিক, আমলা ও সাংবাদিকই নরেন্দ্র মোদীর আগের কোনও প্রধানমন্ত্রীর নাম মনে করতে পারছেন না। এ ব্যাপারে মোদীই প্রথম, বলছেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

কংগ্রেসের রিপোর্ট কার্ড ‘এক সাল, দেশ বদহাল’-এ স্যুট-বুটে মোদী।

এত দিন গরিব ও কৃষকদের বিরোধী, কর্পোরেটদের বন্ধু, স্যুট-বুটের সরকার— এই রকম অনেক বাছা বাছা বিশেষণই লোকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে উপেক্ষা করে এসেছেন তিনি। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায়, সরাসরি ‘মিথ্যেবাদী’ তকমা পেয়েছেন কি কেউ? রাজধানীর অনেক প্রবীণ রাজনীতিক, আমলা ও সাংবাদিকই নরেন্দ্র মোদীর আগের কোনও প্রধানমন্ত্রীর নাম মনে করতে পারছেন না। এ ব্যাপারে মোদীই প্রথম, বলছেন তাঁরা।
সরকার তার এক বছরের সাফল্য শতমুখে প্রচার করবেই। কিন্তু পাল্টা সমালোচনার স্বরটিও সমান উচ্চতায় তুলে ধরতে আজ চেষ্টার খামতি রাখল না কংগ্রেস। গত কালই ‘অচ্ছে দিন’-এর আশ্বাসদাতা মোদী বিঁধেছেন, কংগ্রেসের ‘বুরে দিন’ দূর করার কোনও দায় তাঁর নেই। আর আজ মোদী সরকারের বর্ষপূর্তির দিনে সরকারের যে রিপোর্ট কার্ড কংগ্রেস প্রকাশ করল, তাতে গোটা দেশের ‘বদহাল’ করা জন্য দায়ী করা হয়েছে মোদীকে। কংগ্রেসের কটাক্ষ, শুধু ‘স্যুটবুটের’ নয়, এটা ‘ঝুটমুটের’ সরকার। ‘এক সাল, দেশ বদহাল’ নাম দিয়ে ৪০ পাতার রিপোর্ট কার্ডে ধরে ধরে উল্লেখ করা হয়েছে, মোদী কবে কোথায় মিথ্যে বলেছেন, কোথায় কী ভাবে ডিগবাজি খেয়েছেন নিজের ঘোষিত প্রতিশ্রুতি থেকে। সঙ্গে পাতায় পাতায় স্যুট-বুট-টাই পরা মোদীর কার্টুন। প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপির উলটপুরান তুলে ধরতে একটি ভিডিও-ও এ দিন প্রকাশ করা হয় কংগ্রেস দফতরে।

Advertisement

নয়াদিল্লিতে যখন এ সব কর্মকাণ্ড চলেছে, তখন সুদূর কেরলে এক জনসভায় ‘ফ্যাশন আইকন’ বলে প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করছেন রাহুল গাঁধী। তাঁর কথায়, ‘‘সংসদে বললে বিজেপির বন্ধুরা অসন্তুষ্ট হন। কিন্তু সংসদের বাইরে বলতে অসুবিধেনেই। তাই কংগ্রেসের তরফে স্যুট বুটের সরকারকে হ্যাপি বার্থডে-র শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’’

সরকারকে এমন আক্রমণ অবশ্য বিরোধীরা করেই থাকে। বিজেপিও করত। তবে কংগ্রেস এ ব্যাপারে বাড়তি অক্সিজেন পাচ্ছে, সরকারের কিছু পদক্ষেপ, বিশেষ করে আর্থিক নীতি নিয়ে অর্থনীতিবিদ, শিল্প মহল এবং সংবাদমাধ্যমকেও সমালোচনায় মুখর হতে দেখে। এক বছর আগে সংসদে শক্তির নিরিখে শুধু নয়, আত্মবিশ্বাসের দিক দিয়েও যে দলটা প্রায় তলানিতে পৌঁছে গিয়েছিল, তারাই ফের জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাচ্ছে মোদী সরকারের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও ব্যর্থতাকে পুঁজি করে।

Advertisement

রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ সরকারের রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করে দাবি করেছেন, ‘‘এই সরকার ডাহা ফেল করেছে এক বছরে।’’ কিন্তু এখানেই থেমে থাকেনি কংগ্রেসের সমালোচনা। প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ‘মিথ্যেবাদী’ প্রমাণ করার পাশাপাশি, কার্যত তাঁকে হাসির খোরাক করে তোলারও একটা প্রচ্ছন্ন চেষ্টা লক্ষ্য করা করা যাচ্ছে কংগ্রেস নেতাদের কটাক্ষ ও নানা মন্তব্যে। গুলাম নবি যেমন বলেন, ‘‘শূন্য কলসির আওয়াজ বেশি! সরকার ভাল কাজ করলে এত খরচ করে বিজ্ঞাপন দিতে হতো না, মোদীকেও মথুরা গিয়ে ঢোল পেটাতে হত না, আর সরকারের ঢাক পেটাতে নেতা-মন্ত্রীদের ঠেলে ঠেলে পাঠাতে হতো না।’’ রাতে মাত্র ঘণ্টা তিনেকে ঘুমোন বলে বারাক ওবামাকে জানিয়েছিলেন মোদী। সেই প্রসঙ্গ টেনে নবির কটাক্ষ, ‘‘ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, এটা মোটেই স্বাভাবিক নয়।’’

কংগ্রেসের অভিযোগকে প্রকাশ্যে আমল না দিয়ে সরকারের সাফল্য তুলে ধরার দিকেই আজ বেশি মন দিতে চেয়েছেন সরকারের মন্ত্রী-মুখপাত্ররা। তা ছাড়া সরকারের বর্ষপূর্তিতে দুটি খোলা চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে সরকার কী কী ইতিবাচক পদক্ষেপ করেছে, অন্নদাতাদের (কৃষকদের) সুখী রাখতে কী করা হয়েছে, আর কী ভাবেই বা দুর্নীতিমুক্ত শাসন কায়েম করেছেন তিনি।

এরই পাল্টা গুলাম নবি বলেছেন, চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘অন্নদাতা সুখী ভব। অথচ মোদী জমানায় কৃষক আত্মহত্যা মহামারীতে পরিণত হয়েছে। সহায়ক মূল্য বাড়ানোর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। উল্টে, জমি আইন বদলে কৃষকদের জমি কেড়ে নিতে চাইছে সরকার। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের স্লোগান পড়ে শোনান গুলাম নবি, ‘‘স্যুট বুট কি সরকার, হ্যায় জমিন লুঠ কি সরকার!’’ আবার দুর্নীতি দমনের প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, সবে এক বছর হয়েছে। তার মধ্যেই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ঠুঁটো করে দিতে শুরু করেছেন মোদী। ভিজিল্যান্স কমিশন, লোকপাল, তথ্য কমিশনে নিয়োগ বন্ধ করে রাখলে দুর্নীতি খুঁজে বের করবেন কারা? এরই পাশাপাশি সরকারের আর্থিক নীতি, বিনিয়োগে নেতিবাচক পরিবেশ, মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মন্তব্য নিয়েও আজ সরকারের সমালোচনা করেন গুলাম নবি। লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গেও এ দিন মুখর হন মোদীর সমালোচনায়। বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি ধ্বস্ত, মোদী মস্ত!’’ সরকারের বর্ষপূর্তিতে তাঁর মূল্যায়ন, ‘‘আশ ভি ঝুটি, শ্বাস ভি ঝুটি, মোদী কি সব বাত হ্যায় ঝুটি!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement