প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।
পাখির চোখ গুজরাতের জয়। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তা নিশ্চিত করতে সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার কৌশল নিলেন নরেন্দ্র মোদী। আজ দিনভর দফায় দফায় যে ক’টি কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সরব হলেন, তার মূল সুরটি ছিল গুজরাত ও গুজরাতের সাফল্যের কাহিনি।
আজ ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে গুজরাতবাসীর জন্য আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের কার্ড বিতরণ অনুষ্ঠান কেন্দ্রীয় প্রকল্প হওয়া সত্ত্বেও গোটা বক্তব্যই গুজরাতি ভাষায় রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তেমনি কৃষি সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি সরব হন কী ভাবে গুজরাতের বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিদেশে রফতানি করে সাফল্যের মুখ দেখছেন কৃষকেরা। বিরোধীরা বলছেন, কৃষক সমাজ ও নিচুতলার মানুষ যে বিজেপির উপর ভরসা উঠে গিয়েছে তা বুঝেই এখন শেষবেলায় তাঁদের মন জিততে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মোদীরা।
পাশাপাশি আগামিকাল গুজরাতের গান্ধীনগরে ডিফেন্স এক্সপোর উদ্বোধন করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কাল থেকে শুরু হওয়া পাঁচ দিনের ওই এক্সপোতে অংশ নেবে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ১৩০০টি সংস্থা, দশটি রাজ্য ও পঞ্চাশটি দেশের প্রতিনিধি। এ যাবত হওয়া প্রতিরক্ষা এক্সপোর মধ্যে সর্ববৃহৎ ওই জমায়েতে ৪০০টি মউ স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রায় ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। যে বিনিয়োগের একটি বড় অংশ হবে আয়োজক রাজ্য গুজরাতে। যা হলে রাজ্যের বড় মাপের চাকরির বাজার খুলে যাবে বলেই আশা করছে শাসক শিবির। বিজেপি সূত্রের মতে, এক্সপোর উদ্বোধন মঞ্চ থেকে বক্তব্যে গুজরাতে বিনিয়োগ ও চাকরির বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়ার কৌশল নিতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
গান্ধীনগরের এক্সপো ছাড়াও বুধবার রাজ্যের মোরবি, রাজকোট-সহ একাধিক এলাকার জন্য আরও প্রায় ৭,৭১০ কোটি টাকার বিনিয়োগের ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে রাজকোটে আমূল সংস্থায় ৪,৩০৯ কোটি টাকা, অনুন্নত অঞ্চল কাথিয়াবাড়ের মরবি জেলার পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ২,৭৩৮ কোটি ও রাজ্যের অন্যত্র পরিকাঠামো খাতে প্রায় ৬৬৩ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের ঘোষণা ও শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী। রাজকোট ও জামনগর স্টেশনের পুনর্নির্মাণ, রাজকোটের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সুষ্ঠু যোগাযোগ গড়ে তুলতে একাধিক রেল প্রকল্প ঘোষণা করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। মোরবি-তে মকানসর এলাকায় একটি গতিশক্তি টার্মিনালের ঘোষণা হতে চলেছে। লক্ষ্য স্পষ্ট, গত বারের রাজকোট, জামনগরের মতো সৌরাষ্ট্র এলাকায় বিপর্যয় এড়ানো নিশ্চিত করতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তা ছাড়া কেন্দ্র-রাজ্যে ডাবল ইঞ্জিন সরকারের থাকা যে আগামী দিনে রাজ্যের উন্নয়নকে নিশ্চিত করবে, কৌশলে সেই বার্তাও দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। যা দেখে বিরোধী কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, ‘‘গুজরাতের পরিস্থিতি যে যথেষ্ট চিন্তার তা বুঝেই শেষ মুহূর্তে ঘোষণার ঢল নামাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই কারণেই শাসক শিবিরের ইচ্ছানুযায়ী ওই রাজ্যে ভোটের দিন ক্ষণ ঘোষণা করা থেকে পিছিয়ে গিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তিন দশকের বিজেপি শাসন ও কেন্দ্রে দু’বার সরকারে থেকেও গুজরাত যে বুনিয়াদি পরিকাঠামোয় অনেক রাজ্য থেকে যা জাতীয় পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট।’’
আজ কৃষকদের একাধিক প্রকল্পের ঘোষণা করেন মোদী। তার মধ্যে যেমন ‘এক দেশ, এক সার’ প্রকল্প ছিল, তেমনি কিসান সমৃদ্ধি কেন্দ্র চালু করেন মোদী। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ কৃষিতে যখনই কোনও সাফল্যের কাহিনি প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেছেন তাতে উদাহরণ হিসাবে উঠে এসেছে ভোটমুখী গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশের নাম।
প্রাকৃতিক চাষের ক্ষেত্রে সাফল্যের বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গুজরাত ও হিমাচল প্রাকৃতিক চাষে বিপুল সাফল্য পেয়েছে। গুজরাতে তো জেলা ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তবে প্রকল্প তৈরি হচ্ছে।” তেমনি কৃষি পণ্য বিদেশে রফতানির সাফল্য প্রসঙ্গে মোদী বলেন, “গুজরাতের ড্রাগন ফ্রুট বা কমলম ফল আর হিমাচলের কালো রসুন বিদেশে রফতানি করে আয়ের মুখ দেখছেন কৃষকেরা।” বিরোধীদের মতে, বিতর্কিত কৃষি আইনের ফলে যে কৃষক সমাজ এক সময়ে সরকারের পিছন থেকে সরে গিয়েছিল, বিশেষ করে গ্রামীণ গুজরাতের কৃষকদের সমর্থন পেতে এখন নিজেদের কৃষক-দরদি প্রমাণে মরিয়া বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু প্রশ্ন হল, ২০২২ সালের কৃষকদের আয় দ্বিগুণের যে প্রতিশ্রুতি মোদী সরকার দিয়েছিল, তার কী হল? সেই জবাব কে দেবেন?