৭৪তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে ভাষণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। শনিবার। ছবি: পিটিআই
প্রতি বারই মাথায় পাগড়ি থাকে। এ বারে মাথার পাগড়িতে ক্রিম রঙের সঙ্গে গেরুয়ারই আধিক্য। গলায় ঝোলানো সাদা কাপড়েও গেরুয়ার ছোঁয়া।
এই নিয়ে সপ্তম বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লালকেল্লার প্রাচীরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন। কিন্তু এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বোধহয় তাঁকে আগে কখনও লালকেল্লার বক্তৃতা দিতে হয়নি। এক দিকে করোনা অতিমারির জেরে আতঙ্কের আবহ, অন্য দিকে লাদাখে চিনের আগ্রাসী মনোভাব। সর্বোপরি, অতিমারির আগে থেকেই ঝিমুনি ধরা অর্থনীতিতে লকডাউনের জেরে সঙ্কট আরও তীব্রতর। রুটিরুজি নিয়ে মানুষের দুর্ভাবনা চরমে।
দেশ জুড়ে এই হতাশার মনোভাবের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রধান কাজ ছিল, ‘ভোকাল টনিক’ দিয়ে দেশের মনোবল চাঙ্গা করা। লালকেল্লার প্রাচীর থেকে ৮৬ মিনিটের বক্তৃতায় সেই চেষ্টাই করলেন মোদী। বললেন, “করোনা বিপত্তি ঠিকই। কিন্তু এত বড় বিপত্তিও নয় যে তা আত্মনির্ভর ভারতের যাত্রাপথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।” মুঠো করা হাত তুলে ধরে বলেছেন, “এ বছর একের পর এক সমস্যা এলেও দেশ একটুও বিশ্বাস হারায়নি।”
দেশবাসীর আতঙ্ক কাটাতে আজ মোদী বলেন, তিন দিক থেকে দেশে টিকা আবিষ্কারের গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা সবুজ সঙ্কেত পেলেই লাখে লাখে টিকা উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে। নাম না-করেও পাকিস্তানের মতোই চিনের আগ্রাসী মনোভাবের উচিত জবাব দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ১১০ লক্ষ কোটি টাকার পরিকাঠামো প্রকল্পের রূপরেখা জানিয়েছেন।
এক ঝলকে ঘোষণা
• জাতীয় ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশন, সকলের জন্য স্বাস্থ্য আইডি কার্ড
• করোনার টিকা আবিষ্কার হলেই বিপুল সংখ্যায় উৎপাদন শুরু, গোটা দেশে বিলিবণ্টনের রূপরেখা তৈরি
• ১১০ লক্ষ কোটি টাকার জাতীয় পরিকাঠামো প্রকল্পের জন্য ৭ হাজার প্রকল্প চিহ্নিত
• দেশের ১০০টি শহরে দূষণ কমাতে বিশেষ অভিযান
• লাদাখকে কার্বন নিরপেক্ষ করার লক্ষ্য
• জম্মু-কাশ্মীরে আসন পুনর্বণ্টনের কাজ শেষ হলেই বিধানসভা নির্বাচন
• আসছে সাইবার নিরাপত্তা রণকৌশল
• আগামী ১ হাজার দিনের মধ্যে দেশের ৬ লক্ষ গ্রামের সবগুলিতে অপটিকাল ফাইবার সংযোগ, লক্ষদ্বীপে সমুদ্রের নীচ দিয়ে অপটিকাল ফাইবার
• ১৭৩টি সীমান্ত ও উপকূলবর্তী জেলায় ১ লক্ষ নতুন এনসিসি ক্যাডেটকে প্রশিক্ষণ দেবে সামরিক বাহিনী
এর আগে মোদী স্বচ্ছ ভারত থেকে উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনার মতো যে কোনও প্রকল্পকেই জন-আন্দোলনে পরিণত করতে চেয়েছেন। নোট বাতিলের জেরে আমজনতার হেনস্থা হলেও তাকে কালো টাকা, দুর্নীতি দূর করার জন্য আত্মত্যাগের তকমা দিয়েছেন। এ দিনও আত্মনির্ভর ভারতের জন্য আমদানি কমাতে, ছোট-মাঝারি শিল্পকে চাঙ্গা করতে দেশের মানুষের অংশগ্রহণ চেয়েছেন তিনি। বিদেশ থেকে আমদানি কমাতে গিয়ে শিল্পমহলের অসুবিধার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর যুক্তি, “উন্নয়নের এই মহাযজ্ঞে সবাইকেই আহুতি দিতে হবে।”
আরও পড়ুন: টিকার আশ্বাস, ঘোষণা স্বাস্থ্য কার্ডের
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার পরে তিন তালাক নিষিদ্ধকরণ, ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ, নাগরিকত্ব আইন থেকে রামমন্দিরের শিলান্যাস— গেরুয়া শিবিরের একের পর এক কর্মসূচিই মোদী সরকার রূপায়ণ করে চলেছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।
দশ দিন আগে অযোধ্যার শিলান্যাসে রামমন্দির আন্দোলনকে স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন মোদী। এ দিন গেরুয়া পাগড়ি মাথায় লালকেল্লা থেকে ফের অযোধ্যার উদাহরণ টেনে এনেছেন তিনি। রামমন্দিরের রায়ের পরেও দেশ জুড়ে সদ্ভাব ও ঐক্যের প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, এই সদ্ভাব ও ঐক্যই আত্মনির্ভর ভারতের শক্তি।
২০১৭-য় স্বাধীনতার ৭৫তম বছর ২০২২-এ নতুন ভারতের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মোদী। গত বছর বলেছিলেন, ২০২৪ সালে ভারত ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে। এখন লকডাউনের জেরে জিডিপি-র সঙ্কোচন অবশ্যম্ভাবী। তাই ৫ লক্ষ কোটি ডলারের কথায় যাননি প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে ফের ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর স্বপ্ন দেখিয়ে বলেছেন, “আমরা প্রায় পৌঁছেই গিয়েছি। এক কদম দূরে।” তাঁর দাবি, “আমি এক নতুন প্রভাতের লালিমা দেখতে পাচ্ছি। শুনতে পাচ্ছি আত্মনির্ভর ভারতের শঙ্খনাদ।”