নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালার উদ্বোধনে নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার। পিটিআই
এত দিন যা মূলত দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহওরলাল নেহরুর বাসভবন তথা নেহরু মিউজিয়াম হিসাবে পরিচিত ছিল, তিন মূর্তি মার্গের সেই ভবনটিই আজ পেল তার নতুন পরিচয়। নতুন নাম হল ‘প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়’। স্বাধীনতার পর থেকে এখনও পর্যন্ত দেশ যে ১৪ জন প্রধানমন্ত্রীকে পেয়েছে, তাঁদের সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য রয়েছে ওই সংগ্রহশালায়। তাঁদের জীবনের নানা অধ্যায় থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, সবই প্রদর্শিত হয়েছে সেখানে। ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রীদের জীবন এবং কর্মকাণ্ডও এই প্রদর্শশালায় স্থান পাবে।
বি আর অম্বেডকরের ১৩১তম জন্মবার্ষিকীতে ওই সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অনলাইনে ১০০ টাকার টিকিট (নগদে কিনলে ১১০ টাকা) কেটে সংগ্রহশালায় প্রবেশ করেন তিনি। প্রায় ২৭১ কোটি টাকা খরচে নির্মিত ওই সংগ্রহশালায় দেশের সব প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে অডিও-ভিসুয়াল মাধ্যমে তথ্য পরিবেশন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁদের পাওয়া উপহার, ব্যক্তিগত ব্যবহারের উল্লেখযোগ্য সামগ্রী (যেমন লালবাহাদুর শাস্ত্রীর ব্যবহৃত একমাত্র ডাকঘরের খাতা) তুলে ধরা হয়েছে। দর্শকদের জন্য থাকছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রযুক্তির সাহায্যে নিজস্বী তোলার সুযোগও!
নেহরুর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত প্রায় ১৬ বছর তাঁর বাসভবন ছিল তিন মূর্তি ভবন। তার পরে এটিকে নেহরু মিউজিয়াম হিসাবে গড়ে তোলা হয়। কেন্দ্র জানিয়েছে, নেহরু মিউজিয়ামের অংশটি এবং নবনির্মিত ভবন— দুয়ের মোট এলাকা প্রায় ১৫ হাজার ৬০০ বর্গমিটার। গোটা প্রদর্শনীতে ৪৩টি গ্যালারি রয়েছে। তার মধ্যে আছে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ভারতের সংবিধান সংক্রান্ত গ্যালারিও। ওই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা, প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্রনাথ মিশ্র বলেন, ভারতের ১৪ জন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে জনমানসে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যেই সংগ্রহশালাটি তৈরি করা হয়েছে। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘নতুন প্রজন্ম যে স্বাধীনতা উপভোগ করছে, কষ্টার্জিত সেই স্বাধীনতার মাহাত্ম্য এবং তথ্য ও সত্যের বোধকে তাঁদের সামনে তুলে ধরতেই এই প্রচেষ্টা।’’
বিজেপির বরাবরের অভিযোগ, কংগ্রেসের ষাট বছরের শাসনে নেহরু-গান্ধী পরিবারের বাইরে অন্য কিছু ভাবতে পারেনি দল। সেই কারণে শুধু অন্য দলের নয়, পি ভি নরসিংহ রাও বা মনমোহন সিংহের মতো কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রীরাও উপেক্ষিত রয়ে গিয়েছেন। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, পরিবারবাদী রাজনীতির সেই ‘ঐতিহাসিক ভুল’ শুধরে দেশের সব প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্ব সমান ভাবে তুলে ধরতেই মোদী উদ্যোগী হয়েছেন। আজ নিজের বক্তব্যে সরাসরি কংগ্রেসের পরিবারবাদ নিয়ে কিছু না বলেও প্রচ্ছন্ন ভাবে বিষয়টি ছুঁয়ে গিয়েছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘এটা ভারতবাসীর কাছে গর্বের যে, এ দেশে যাঁরা প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তাঁদের অধিকাংশই সমাজের নিচু তলা থেকে উঠে এসে দেশের হাল ধরেছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ দেশের কোনও প্রান্তের বাসিন্দা, কেউ খুব গরিব ঘরে জন্ম নিয়েছেন, কেউ আবার কৃষকের সন্তান। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হয়েছেন। এটাই হল ভারতীয় গণতন্ত্রের মহান আদর্শের উপরে ভরসা রাখার সুফল।’’ ২০১৪ সালের ভোটের আগে নিজেকে এক জন গরিব চা-বিক্রেতা পরিবারের ছেলে হিসাবে তুলে ধরে কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছিলেন মোদী। আজ সেই প্রসঙ্গ তুলে তিনি দেশের তরুণ সমাজের কাছে বার্তা দিয়েছেন যে, পরিবারবাদী রাজনীতির বাইরে গিয়ে একেবারে সাধারণ ঘর থেকে উঠে এসেও ভারতের মতো সুবিশাল দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া সম্ভব।
আজ নিজের বক্তৃতায় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমলে হওয়া জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গও আলগোছে ছুঁয়ে গিয়েছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছরের ইতিহাসের প্রতিটি ধাপে গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করে তোলার চেষ্টা দেখা গিয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সামনে বার বার চ্যালেঞ্জ এসেছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক ভাবেই সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা হয়েছে।’’ মোদীর মতে, আগামী দিনেও গণতন্ত্রের সামনে চ্যালেঞ্জ আসতে পারে।
গণতান্ত্রিক ভাবেই তার মোকাবিলা করতে হবে। গণতন্ত্রে ভিন্ন মতের উপস্থিতিকেও স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘‘কেবল একটি বিচারই শ্রেষ্ঠ, তা আসলে নয়। একই বিষয়ে ভিন্ন বিচার থাকতে পারে।’’ সম্মতি এবং অসম্মতির সহাবস্থানের উপরে জোর দেন তিনি। যদিও মোদীর এই কথাকে কটাক্ষ করে বিরোধীদের বক্তব্য, যে শাসক শিবির কে কী খাবে, কে কী ভাষায় কথা বলবে তার ফরমান জারি করে, সেই সরকারের প্রধানের মুখে ওই কথা মানায় না।