কড়কড়ডুমায় জনসভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী।
দিল্লির ভোটপ্রচারে এসে অরবিন্দ কেজরীবালের সরকারের বিরুদ্ধে সেই জামিয়া মিলিয়া ও শাহিন বাগের বিক্ষোভকেই হাতিয়ার করলেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার কড়কড়ডুমার জনসভা থেকে মোদীর দাবি, বিক্ষোভকারীরা দেশের পতাকা ও সংবিধানকে সামনে রেখেই একের পর এক আইনবিরুদ্ধ কাজ করে চলেছেন। এই বিক্ষোভের পিছনে আম আদমি পার্টি (আপ) ও কংগ্রেসের চক্রান্ত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। অমিত শাহের মতো বিরোধীদের সরাসরি ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’ বলে দাগিয়ে দেননি মোদী। তবে তারা দেশকে ‘টুকরো-টুকরো’ করতে চাইছে বলে ফের এক বার অভিযোগ করেছেন। কিন্তু, সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে গুলি চালানো নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি প্রধানমন্ত্রী।
এ দিনের জনসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন মোদী। সদ্য পেশ হওয়া বাজেট নিয়েও খরচ করেছেন অনেকটা সময়। তার পর ধাপে ধাপে তিনি চলে আসেন জামিয়া মিলিয়া ও শাহিন বাগে চলা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী বিক্ষোভের প্রসঙ্গে। কেজরীবালের নাম না করে মোদী বলেন, ‘‘কিছু লোক রাজনীতি বদলাতে এসেছিলেন, কিন্তু এখন তাঁদের মুখোশ খসে গিয়েছে। এঁরাই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। সেনার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁদের অপমান করেছিলেন।’’ এর পর স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘‘এমন দিল্লি কি দিল্লিবাসী কখনও চেয়েছিলেন?’’ মোদী দাবি করেন, ‘‘একটা সময় ছিল, যখন দিল্লিতে প্রায়শই সন্ত্রাসবাদী হামলা হত। এই হামলায় জড়িতদেরই যখন বাটলা হাউসে পুলিশ মেরেছিল, তখন এঁরাই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এঁরাই ভারতকে টুকড়ে-টুকড়ে করতে চায়।’’
এর পরই জামিয়া মিলিয়া ও শাহিন বাগ দীর্ঘদিন ধরে চলা বিক্ষোভের প্রসঙ্গ টেনে এনে ঘটনাক্রমকে এক সুতোয় গাঁথার চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘‘জামিয়া, শাহিন বাগ, গত কয়েকদিন ধরে সিএএ নিয়ে বিক্ষোভ চলছে। কিন্তু, এটা শুধুমাত্র বিক্ষোভ নয়। এটা আসলে ষড়যন্ত্রের ব্যবহারিক প্রয়োগ চলছে। এর পিছনে আপ ও কংগ্রেসের রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে।’’
আরও পড়ুন: স্তব্ধ না হলেও শম্বুক গতি, টালা সেতুর চাপ সামলাতে হিমশিম পুলিশ
কোন সূত্রে সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকে ‘চক্রান্ত’ বলে দাগিয়ে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী? তাঁর মতে, ‘‘এটা শুধু মাত্র আইনের বিরোধিতা হলে তা সরকারের যাবতীয় আশ্বাসের পর মিটে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দেশের পতাকা ও সংবিধানকে সামনে রেখে জ্ঞান দেওয়া হচ্ছে। বিক্ষোভে হিংসা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। কিন্তু, এঁরা আদালতের কথা মানেন না। এঁরা আদালতের কথা শোনেন না। অথচ গোটা দুনিয়াকে দেশের সংবিধান দেখাচ্ছেন।’’
সিএএ-বিরোধী এই বিক্ষোভকে ভোটের ইস্যু করে মোদীর অভিযোগ, এর জন্য অসুবিধায় পড়েছেন দিল্লিবাসী। তাঁদের দিল্লি থেকে নয়ডা যেতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। তাঁর মতে, ‘‘ষড়যন্ত্রকারীদের এখানেই না থামালে তারা অন্য কোথাও গিয়ে আন্দোলন করবে।’’
আরও পড়ুন: শাহিন বাগ বিতর্ক তুঙ্গে তুলছে বিজেপি, কেজরীবাল কি শাঁখের করাতে?
এ দিনের জনসভা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের একের পর এক কাজ তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ, রামমন্দির নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়, সিএএ-এর মতো বিষয়। শনিবার বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বাজেট নিয়ে নিজের সরকারের পিঠ চাপড়ে দিয়ে এ দিন মোদী দাবি করেন, ‘‘শুধু চলতি বছর নয়, শনিবার যে বাজেট পেশ হয়েছে তা গোটা দশক ধরে দিশা দেখাবে দেশকে। এর মাধ্যমে দিল্লির যুবক, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, গরিব, মহিলা ও ব্যবসায়ী সকলেই লাভবান হবেন।’’ তাঁর সরকারের আমলে বিপুল কাজ হয়েছে বলে দাবি করেছেন মোদী। দাবি করেছেন, ‘‘সরকার এত দ্রুত কাজ করছে যে বিরোধীরা বলছে ধীরে কাজ করুন।’’
আরও পড়ুন: অনুরাগের ‘গোলি মারো’ মন্তব্য নিয়ে সংসদে তুমুল হট্টগোল, ওয়াকআউট বিরোধীদের
দিল্লির বিধানসভা ভোটের আগে মোদীর প্রথম জনসভা। সেখান থেকে তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গোটা দেশের নিরিখে অনেকটা পিছিয়ে দিল্লি। কেজরীবাল সরকার তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প আয়ুষ্মান যোজনা চালু করেনি বলেও তোপ দেগেছেন মোদী।