প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।
সংসদে সদ্য পাশ হওয়া কৃষি বিল নিয়ে প্রবল চাপের মুখে ফের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দাবি করলেন, সারা দেশের বাজারের দরজা চাষিদের সামনে খুলে দেওয়ার পরেও জারি থাকবে প্রতি মরসুমে সরকারের পক্ষ থেকে ফসল, আনাজ কিনে নেওয়ার রীতি। বিরোধীদের দুষলেন ইচ্ছাকৃত ভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য। ‘এমএসপি’ চালু থাকার হাতেগরম প্রমাণ দিয়ে এ দিন রবি ফসলের জন্য তা ঘোষণাও করে দিল কেন্দ্র। গত বছর যা করা হয়েছিল আরও এক মাস পরে (২৩ অক্টোবর)।
সোমবার ভোটমুখী বিহারের জন্য আরও এক গুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণার সময়ে কৃষি বিল ঘিরে রবিবার রাজ্যসভায় ধুন্ধুমারের প্রসঙ্গ টানেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “সমস্ত কৃষককে ফের আশ্বস্ত করতে চাই যে, এমএসপি-র সুবিধা যেমন চালু রয়েছে, তেমনই থাকবে। প্রতি মরসুমে সরকার যে ভাবে বিভিন্ন কৃষিপণ্য চাষিদের কাছ থেকে কেনে, জারি থাকবে সেই ব্যবস্থাও।”
বিরোধীদের প্রতি মোদীর কটাক্ষ, দশকের পর দশক মুষ্টিমেয় কিছু লোক আইনের বলে হাত-পা বেঁধে রেখেছিলেন চাষিদের। কিন্তু নতুন নিয়মে দেশের যে কোনও প্রান্তে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করার স্বাধীনতা পেলেন কৃষকরা। হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ বেরিয়ে যাওয়ার ভয়েই এমএসপি নিয়ে চাষিদের ভুল বোঝাতে মাঠে নেমেছেন কিছু লোক। এঁরাই এত দিন চাষিদের এই স্বাধীনতা দিতে চাননি। দীর্ঘদিন পায়ের তলায় চেপে রেখেছিলেন এমএসপি নিয়ে এম এস স্বামীনাথনের রিপোর্টকে। বিরোধীদের অবশ্য প্রশ্ন, এমএসপি হিসেবের ক্ষেত্রে মোদী সরকার স্বামীনাথন কমিটির রিপোর্ট পুরো মেনেছে কি? কেনই বা খোলা বাজারে চাষিদের কাছ থেকে ফসল কিনতে অন্তত এমএসপি দিতে বাধ্য থাকার কথা লেখা নেই নতুন আইনে? কেন্দ্রের কথায় কান না-দিয়ে জারি কৃষক বিক্ষোভও।
আরও পড়ুন: কৃষি সংক্রান্ত বিল পাশ করানোর বিরুদ্ধে গাঁধীমূর্তির নীচে ধর্না সারা রাত
আরও পড়ুন: আইনের ছাতাও হারাল শ্রমিক?
শুধু প্রধানমন্ত্রী নন। সংসদের ভিতরে ও বাইরে প্রবল চাপের মুখে চাষিদের উদ্দেশে বার্তা দিতে প্রচারে নেমে পড়েছে কার্যত পুরো সরকারই। বিবৃতি দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের দাবি, বিরোধীরা যে মিথ্যে প্রচার করছিলেন, তার প্রমাণ এমএসপি ঘোষণা করেই দিয়ে দিল কেন্দ্র।
এ দিনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী অর্থবর্ষে প্রতি কুইন্টাল গমের এমএসপি ১,৯২৫ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ১,৯৭৫ টাকা। নিট বৃদ্ধি ৫০ টাকা। বার্লি, মসুর ডাল, ছোলা, সর্ষের ক্ষেত্রে ওই অঙ্ক যথাক্রমে ৭৫, ৩০০, ২৫০ ও ২২৫ টাকা। মোদী এ দিনই বুক ঠুকে দাবি করেছেন, ২০১৪ সালের আগে ও পরের পাঁচ বছরে কত দামে সরকার কত ফসল কিনেছে, শুধু সেই পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই বোঝা যাবে, চাষিদের জন্য কাদের ভাবনা বেশি। করোনা-কালেও যে ভাবে কেন্দ্র ফসল কিনেছে, তার পরে বিরোধীদের প্রচার অর্থহীন বলে তাঁর দাবি। যদিও পরিসংখ্যান বলছে, এ বার গমের এমএসপি বেড়েছে ২.৬%। গত বার চালে বেড়েছিল ২.৯%। দুই বৃদ্ধির হারই ২০১০-১১ সালের পরে সব থেকে কম।
কৃষি বিল নিয়ে নীতীশ কুমারকে পাশে পেয়েছেন মোদী। নীতীশের বক্তব্য, ২০০৬-এ বিহারে এপিএমসি আইন তুলে দেওয়ার লাভ হয়েছে চাষিদের। কিন্তু কংগ্রেসের দাবি, সরকারি হিসেবেই স্পষ্ট যে, ওই আইন তুলে দিয়ে বিহারে কৃষকদের কোনও লাভ হয়নি। কৃষিতে আসেনি লগ্নিও।