দিল্লিতে দলের কর্মী সম্মেলনে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই
উপলক্ষ ছিল দিল্লির আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে দলীয় সভা। কিন্তু সেখানেও বিজেপি সভাপতির বক্তব্যে শুধুই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)। নিশনায় সনিয়া-রাহুল-প্রিয়ঙ্কা থেকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। পাকিস্তানের নানকানা সাহিব গুরুদ্বারে হামলার প্রসঙ্গ টেনে আপ- কংগ্রেসকে এক বন্ধনীতে বসিয়ে অমিত শাহের হুঙ্কার, যাঁরা সিএএ-র বিরোধিতা করছেন, নানকানা সাহিব গুরুদ্বারে হামলাই তাদের ‘জবাব’। সম্প্রতি পাকিস্তানের এই গুরুদ্বারে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে।
আসন্ন দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে রবিবার বিজেপির ‘কার্যকর্তা সম্মেলন’-এ যোগ দেন অমিত শাহ। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘সনিয়া, রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল সিএএ-র বিরোধিতা করছেন। আমি তাঁদের বলতে চাই, সম্প্রতি পাকিস্তানের নানকানা সাহিব গুরুদ্বারে হামলার দিকে তাকিয়ে দেখুন। ওই হামলাই সিএএ-বিরোধীদের জবাব।’’
শুক্রবার পাক পঞ্জাব প্রদেশের নানকানা সাহিব গুরুদ্বারে হামলা চালায় প্রায় ৪০০ জনের একটি দল। বাইরে থেকে গুরুদ্বার লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন তাঁরা। চলতে থাকে শিখবিরোধী এবং মুসলিমপন্থী স্লোগান। যদিও পাক প্রশাসনের যুক্তি ছিল, গুরুদ্বার সংলগ্ন এলাকায় দু’টি গোষ্ঠীর গন্ডগোলকেই সাম্প্রদায়িক রঙ চড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। ঘটনা যাই হোক, সেই বিষয়টিই এ দিন উল্লেখ করেছেন বিজেপি সভাপতি। পাশাপাশি এ দিন ১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী অভিযানের প্রসঙ্গও টেনে আনেন তিনি। বলেন, ‘‘নানকানা সাহিবে কী হয়েছে এবং কী ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন দেখুন। ভারত যদি আশ্রয় না দেয়, তাহলে আমাদের শিখ ভাইয়েরা কোথায় যাবেন।’’
গত ১১ ডিসেম্বর সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পর থেকেই তুমুল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয় কার্যত গোটা দেশে। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে। সেই পরিস্থিতি কিছুটা স্তিমিত হলেও এখনও পুরোপুরি থেমে যায়নি। বিজেপি প্রথম থেকেই বলে আসছে, বিরোধীদের ভুল বোঝানো এবং মুসলিম সম্প্রদায়কে উস্কানির জেরেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রবিবার ফের সেই অভিযোগ সামনে আনলেন অমিত শাহ। সনিয়া-রাহুল-প্রিয়ঙ্কা গাঁধী এবং অরবিন্দ কেজরীওয়ালের নাম করে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে উস্কানি দিচ্ছেন যে তাঁদের নাগরিকত্ব থাকবে না। আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের বলতে চাই যে তাঁরা নাগরিকত্ব হারাবেন না। কারণ নতুন আইনে কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কোনও সংস্থান নেই।
সিএএ সমর্থনের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত একটি নম্বর শেয়ার করেছিলেন। ওই নম্বরে মিসড কল দিলেই এই আইনের পক্ষে সমর্থন বলে নথিভুক্ত করা হবে। কিন্তু সেই নম্বরে বন্ধুত্ব-যৌনতার আমন্ত্রণ, বিনোদন অ্যাপের সাবস্ক্রিপশন, চাকরির প্রস্তাবের দিয়ে ওই নম্বরে ফোন করতে বলা হচ্ছে বলে খবর মিলেছে। তার জেরে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে বিজেপিকে। অমিত শাহ এ দিন বলেন, সিএএ সাপোর্ট হেল্পলাইন নেটফ্লিক্সের নম্বর নয়।
দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু বিজেপি সভাপতি তাঁর বক্তব্যে অধিকাংশ সময়ই ব্যয় করেছেন সিএএ নিয়ে। দিল্লির প্রসঙ্গে শুধু বলেন, পাঁচ বছর আগে দিল্লিতে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এবং একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। কিন্তু কেউ এক বারই মানুষকে বোকা বানাতে পারে, সব সময় নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দিল্লিতে বিজেপিই ক্ষমতায় আসবে।