বাদুড় থেকেই ছড়ায় নিপা ভাইরাস।
প্রথমে গা পুড়ে যাওয়া জ্বর। সঙ্গে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট। নিম্ন রক্তচাপ, মাথাব্যথা, অবসাদ, সারা ক্ষণ ঘুম ঘুম ভাব। আর ওই সব উপসর্গ দেখা যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই রোগী চলে যাচ্ছেন কোমায়। ঢলে পড়ছেন মৃত্যুর কোলে।
এই ভাবেই ভয়াবহ নিপা ভাইরাসের হানায় কেরলে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে আরও ৮ জনকে।
কেরল সরকারের সংক্রামিত রোগ দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা চিকিৎসক রীনা ওই খবর দিয়ে জানিয়েছেন, মৃত ৬ জনের মধ্যে ২ জন একই পরিবারের সদস্য। দুই ভাই। আর তাঁদের হাসপাতালে দেখতে গিয়ে তাঁদেরই এক মহিলা আত্মীয় আক্রান্ত হন ওই ভাইরাসে। পরে সেই মহিলারও মৃত্যু হয়। কোঝিকোড় মেডিক্যাল হাসপাতাল সহ কেরলের মোট ৪টি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে ওই ভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৮ জনকে। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই ৮ জন কোনও না কোনও ভাবে মৃত ৩ জনের সংস্পর্শে এসেছিলেন।
নিপা ভাইরাসের হানাদারি যাতে কেরলে আরও ভয়াবহ হয়ে না ওঠে, তার ব্যবস্থা নিতে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের অধিকর্তার নেতৃত্বে তিরুঅনন্তপুরমে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। রবিবারই টুইট করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা জানিয়েছেন, কেরলের উপদ্রুত জেলাগুলি ঘুরে তিনি ওই বিশেষজ্ঞ দলকে আপৎকালীন ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন টুইট করে জানিয়েছেন, নিপা ভাইরাসের মোকাবিলায় রাজ্য জুড়ে অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার জন্য ২৪ ঘণ্টার জন্য উপদ্রুত জেলাগুলিতে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
আরও পড়ুন- চরিত্র বদল করছে ডেঙ্গির ভাইরাস
আরও পড়ুন- ডেঙ্গির জীবাণু মিলতে আসরে স্বাস্থ্য দফতর
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‘হু’)-র তরফে জানানো হয়েছে, এই নিপা ভাইরাস রোখার জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও টিকা বা প্রতিষেধকের আবিষ্কার হয়নি। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারদের লক্ষ্য থাকে একটাই। তা হল, যে কোনও ভাবে রোগীর কষ্ট যতটা লাঘব করা যায়।
মূলত বাদুড় থেকে ছড়ায় এই ভাইরাস। সংক্রমণের ৭-১৪ দিন পরেই এটা খুব দ্রুত ছড়াতে শুরু করে দেয়। ছড়ায় বাতাস বা থুতুর মাধ্যমে। যে সব ফল বাদুড়ের প্রিয়, তার থেকেও ছড়ায় এই নিপা ভাইরাস। জ্বর, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, নিম্ন রক্তচাপ, মাথাব্যথা, অবসাদ, সারা ক্ষণ ঘুম ঘুম ভাব- এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গগুলির অন্যতম। এর ফলে এনসেফেলাইটিস হয়। রোগী আক্রান্ত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোমায় চলে যান। তবে শুয়োর থেকেও যে এই ভাইরাস ছড়ায়, তারও প্রমাণ মিলেছে।