মোদীর ভিটেয় ধর্মীয় সহিষ্ণুতার কুমির ছানা

রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা ভোটকে নজরে রেখে হাসপাতাল উদ্বোধন করতে কাল বাদ পরশু মোদী আসছেন তাঁর শিকড়ে। তার আগে এই সংখ্যালঘু গ্রামগুলিকে সাজিয়ে তুলতে যে শোরগোল পড়ে গিয়েছে, তার মধ্যমণি এই গুলাম মহম্মদ।

Advertisement

অগ্নি রায়

বডনগর (গুজরাত) শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৫৫
Share:

হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী গরু মাতা। গরুকে তাঁরা যত্ন করে পালন করেন। এখানকার কোনও গ্রামেই গোমাংস খাওয়ার রেওয়াজ নেই। মাংসের জন্য ছাগল-মুরগি জবাই হয়।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার দূরে মসজিদের পাশে দাঁড়িয়ে উঁচু গলায় যিনি এই কথা বলছেন, তাঁর নাম গুলাম মহম্মদ মুনির পটেল! স্থানীয় পঞ্চায়েত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, এবং খুবই হাঁকডাকের মানুষ। মোদীর জন্মভিটেকে ঘিরে যে ৬টি মুসলিম গ্রাম রয়েছে, সেখানে এই বিজেপি সংখ্যালঘু নেতার খুবই দাপট। তাঁকে আবার ঘিরে রেখেছেন ছোটবড় আরও কিছু সংখ্যালঘু নেতা।

রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা ভোটকে নজরে রেখে হাসপাতাল উদ্বোধন করতে কাল বাদ পরশু মোদী আসছেন তাঁর শিকড়ে। তার আগে এই সংখ্যালঘু গ্রামগুলিকে সাজিয়ে তুলতে যে শোরগোল পড়ে গিয়েছে, তার মধ্যমণি এই গুলাম মহম্মদ। যিনি সাংবাদিকদের সামনে নামতার মতো বলেই চলেছেন এখানে পরম শান্তির বাতাবরণের কথা। খেতে উপছে পড়া সোনালি ফসল এবং কাপড়ের দোকান থেকে পেট্রোল পাম্পের সোনালি ব্যবসার কথা। ধর্মীয় সৌভ্রাতৃত্বের কথা। সর্বোপরি মোদীর ‘সহিষ্ণু’ নীতির কথাও।

Advertisement

অমদাবাদ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে মোদীর গ্রাম বডনগরে প্রধানমন্ত্রী নিজে পদার্পণ করেননি ২০১১ সালের পর। কিন্তু গত তিন বছরে এই গ্রাম যেন আরও বেশি মোদীময়! পল্লবিত তাঁকে ঘিরে উপকথা। “ফোনে নিয়মিত খোঁজখবর নেয়। জানতে চায় বৃদ্ধাশ্রম কেমন চলছে। নতুন স্কুল কলেজের কী হাল। এটা তো আগে অজ গাঁ ছিল! গত কয়েক বছরে অনেক

কিছুই হয়েছে, বাকি ছিল একটি হাসপাতাল। এ বার সেটাও হচ্ছে,” জানাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদীর সব চেয়ে বড় ভাই শোভাভাই মোদী। এখানে তাঁর প্রবল দাপট, কিন্তু সক্রিয় রাজনীতি করেন না শোভা। থাকেন ২০০১-এ তৈরি করা একটি চোখ জুড়ানো বৃদ্ধাশ্রম নিয়েই। ভাই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে কদাপি দিল্লিও যাননি। কারণ, “দিল্লি গিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করলে অন্তত ১ ঘণ্টা সময় আমি নিয়ে নেব। ওই এক ঘণ্টা সরকারের এবং দেশের থেকে চুরি করা হবে!”

তবে তিনি দিল্লি না-গেলেও বা সক্রিয় বিজেপি না করলেও বড় ভাইয়ের দরবারে ভিড় কমতি নেই। গোটা এলাকায় তিনিই যে সর্বেসর্বা, তা কিছু ক্ষণ বসতেই মালুম হল। সাংবাদিকরা এসেছেন শুনে চলে এলেন প্রধানমন্ত্রীর স্কুলের সহপাঠী সুধীর জোশী, তাঁর গুজরাতি এবং সংস্কৃতের শিক্ষক প্রবীণ প্রহ্লাদ পটেল। দশম এবং একাদশে মোদীকে পড়িয়েছেন প্রহ্লাদ। বলছেন, “ও বিতর্ক সভায় খুব উৎসাহী ছিল।

সেটা দেখেই বলেছিলাম, ভাল করে সংস্কৃত শ্লোক মুখস্থ করো। পরে নরেন্দ্র আমাকে জানিয়েছে, এতে ওর সুবিধা হয়েছে। বক্তৃতায় জোর বেড়েছে।”

স্কুলে এগারো বছর পাশাপাশি বেঞ্চে বসা বন্ধু সুধীরের কথায়, “অল্প বয়সে রাজনীতির ধারে কাছে ছিল না নরেন্দ্র। এগারো ক্লাসে যখন মনিটর হওয়ার জন্য ফর্ম জমা দেয়, আমি বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম এখানে আমাদের কাজ শুধু লেখাপড়া করা। তখন ও বলে, এক বার যা ঠিক করেছি তা থেকে পিছিয়ে আসব না।’’ সুধীরের মত, এই জেদটাই ওকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।

খোদ বারাক ওবামা ভারত সফরে এসে মোদীর সঙ্গে কুমিরের লড়াইয়ের উল্লেখ করেছিলেন! ঠিক কী ঘটেছিল? বড় ভাই হাসলেন। বললেন, “ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। এখানকার একটা বড় ঝিলে আমরা স্নান করতে যেতাম। তার মাঝে ছিল একটু দ্বীপের মত চড়া। একটা কুমির ছানাকে রোদ পোয়াতে দেখে ও সেটা বাড়ি এনে হাজির! মা বকাবকি করায় পরে গিয়ে ফেরত দিয়ে এসেছিল নরেন্দ্র।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement