ভারতীয় প্রেমিক শচীনের সঙ্গে পাক বধূ সীমা। ছবি: সংগৃহীত।
প্রেমের টানে ভারতে অনুপ্রবেশ করা পাক গৃহবধূ সীমা হায়দারকে পাকিস্তানে ফেরত না পাঠালে আরও একটা ২৬/১১ দেখবে ভারত! হুমকি এল মুম্বই পুলিশের ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুমে। বুধবার রাতে ফোন করে উর্দু ভাষায় এই হুমকি দেওয়া হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতে মুম্বই পুলিশের ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুমে ফোন করেন এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। ফোন করে ওই ব্যক্তি উর্দু ভাষায় হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘সীমাকে পাকিস্তানে ফেরত না পাঠালে আবার জঙ্গি হামলা হবে মুম্বইয়ে। আরও একটা ২৬/১১ দেখতে হবে। ধ্বংসের মুখে পড়বে ভারত। এবং উত্তর প্রদেশ সরকার এর জন্য দায়ী থাকবে।’’ এর পরেই ওই ব্যক্তি ফোন কেটে দেন।
ফোন কেটে যাওয়া পর পরই এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে মুম্বই পুলিশের অপরাধ দমন শাখা। মুম্বই পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুমে মাঝে মাঝেই এই ধরনের হুমকি ফোন আসে। তবে পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।
এই প্রসঙ্গে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি তরুণ প্রেমিকের টানে পাকিস্তান থেকে লুকিয়ে ভারতে চলে আসা পাক বধূ সীমা। বরং তিনি বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, তিনি মরে গেলেও পাকিস্তান ফিরে যাবেন না। তাঁর দাবি, তিনি কোনও মতেই প্রেমিক সচিন মিনাকে ছাড়তে রাজি নন। তাতে যদি তাঁকে মরতেও হয় তিনি মরবেন। পাশাপাশি তাঁর আশঙ্কা, সে দেশে ফিরলেই তাঁকে খুন করা হবে।
২০১৯ সালে পাকিস্তান থেকে পাবজি খেলার সূত্রে নয়ডার ২২ বছরের তরুণ সচিন মিনার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সীমার। আলাপ থেকে ক্রমে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সীমার রাজমিস্ত্রি স্বামী সৌদিতে থাকতেন। তাই সন্তানদের নিয়ে তাঁকে একাই থাকতে হত। সেই একাকিত্ব জন্ম দেয় প্রেমের। অবশেষে অনেক পরিকল্পনা করে তিন বছরের প্রেমের পর চার সন্তানের হাত ধরে পাকিস্তান ছেড়ে তরুণ প্রেমিকের জন্য ভারতে অনুপ্রবেশ করেন সীমা। নেপাল হয়ে গোপনে ভারতে প্রবেশ করেন তিনি। বেশ কয়েক দিনের লুকোচুরির পর গত ৪ জুলাই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। পেশায় মুদি দোকানের কর্মী প্রেমিক সচিনকেও গ্রেফতার করা হয়। সীমাকে থাকতে দিয়েছেন বলে গ্রেফতার হন সচিনের বাবা। সীমার সন্তানেরাও তাঁর সঙ্গে জেল হেফাজতে ছিল। তবে গত শুক্রবার দু’জনেই জামিন পেয়েছেন।
জেল থেকে বেরোনোর পর থেকেই সারা দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সীমা এবং সচিন। জেল থেকে বেরিয়েই সীমা জানিয়েছিলেন, তিনি আর পাকিস্তানে ফিরতে চান না। প্রেমিককে বিয়ে করে থেকে যেতে চান ভারতেই। নিজেকে ইতিমধ্যে ভারতীয় বলেও দাবি করে বসেছেন সীমা। তাঁর দাবি, অন্তর থেকে তিনি ভারতীয় সংস্কৃতি এবং হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে ফেলেছেন। সচিনের পরিবারের কথা ভেবে নিরামিষ খেতেও শুরু করেছেন তিনি। পাক বধূ জানিয়েছেন, তিনি প্রেমিকের সঙ্গে ভারতে নতুন করে সংসার পাততে চান। যদিও তাঁর সন্তানরা চাইলে পাকিস্তানে ফিরে যেতে পারে বলেও জানিয়েছেন সীমা।
সীমা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, তাঁর পাকিস্তানি স্বামী গোলাম তাঁর উপর প্রায়ই অত্যাচার করতেন। অন্য দিকে, গোলাম ভিডিয়োর মাধ্যমে খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে স্ত্রী এবং সন্তানদের ফিরে পাওয়ার আর্জি জানিয়েছেন।
জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকেই সীমা এবং সচিন সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছেন। সীমাকে দেখতে আশপাশের এলাকা থেকে প্রচুর মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন সচিনের বাড়িতে। তবে অভিযোগ, প্রাণনাশের বেশ কয়েকটি হুমকিও পেয়েছেন যুগল। তার মধ্যেই সীমাকে নিয়ে ২৬/১১-এর মতো আরও একটি জঙ্গি হামলার হুমকি এল মুম্বই পুলিশের কাছে।