এই সুটকেসই উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ছবি: টুইটার থেকে
গত সোমবার যখন মুম্বইয়ের মাহিমের উপকূলে সুটকেসটা উদ্ধার হয়েছিল, অনেকেরই মনে পড়ে গিয়েছিল ‘বাজিগর’ সিনেমার একটি দৃশ্যের কথা। খুন করে মৃতদেহ সুটকেসে ভরে ফেলে ব্রিজের উপর থেকে নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন পর্দার নায়ক শাহরুখ খান। রিলের সেই ঘটনাই যেন ফিরে এল রিয়েল লাইফে। সেই মায়ানগরী মুম্বইয়েই। সুটকেসে টুকরো করে কাটা মৃতদেহের সঙ্গে থাকা জামাকাপড়ের সূত্র ধরে প্রৌঢ়কে খুনের অভিযোগে তাঁরই পালিতা মেয়েকে গ্রেফতার এবং তার নাবালক প্রেমিককে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। ওই নাবালিকা অবশ্য বাবার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন।
সান্তাক্রজ পূর্ব এলাকার বাসিন্দা নিহত বেনেট রেইবেলো (৫৯) মুম্বইয়ে বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। পুলিশ জানিয়েছে, দীর্ঘ তদন্তপ্রক্রিয়ার জাল গুটিয়ে নিহতের পালিতা মেয়ে আরাধ্যা জীতেন্দ্র পাতিল ওরফে রিয়া বেনেট রেইবেলোকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর ১৬ বছরের প্রেমিককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতেরা খুনের কথা স্বীকার করেছে।
কী ভাবে তদন্তের জাল গোটাল পুলিশ? গত সোমবার মাহিমে সমুদ্র উপকূলে যে সুটকেস মিলেছিল, তার মধ্যে ছিল এক প্রৌঢ়ের দেহের খণ্ডবিখণ্ড করা কিছু অংশ। সঙ্গে ছিল দু’টি জামা, একটি সোয়েটার এবং একটি প্যান্ট। ওই জামাকাপড়ের মধ্যে বেলগামী এলাকার ‘আলম’স মেনসওয়্যার’ নামে একটি দর্জির দোকানের স্টিকার ছিল। সেই সূত্র ধরেই এগোতে শুরু করে পুলিশ। ওই দোকানের রেজিস্টার মিলিয়ে ওই জামাকাপড়ের মালিক হিসেবে উঠে আসে বেনেটের নাম।
এ বার তাঁর নাম দিয়ে খোঁজ শুরু হয় ফেসবুকে। সেখানে আবার ওই সুটকেসে উদ্ধার হওয়া সোয়েটার পরে বেনেটের একটি ছবিও পেয়ে যায় পুলিশ। আর ফেসবুক থেকেই মেলে তাঁর বাড়ির ঠিকানাও। কিন্তু তদন্তকারী অফিসাররা ওই বাড়িতে গিয়ে দেখেন তালাবন্ধ। প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারেন, পালিতা কন্যা আরাধ্যার সঙ্গেই থাকতেন বেনেট। কিন্তু গত কয়েক দিন বাড়িটি তালাবন্ধ।
আরও পডু়ন: ‘অপরাধ করলে এনকাউন্টার হবেই’, লাইসেন্স দিলেন তেলঙ্গানার আরও এক মন্ত্রী
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘তদন্তে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর দু’জনকে হেফাজতে নেওয়া হয়। তবে আরাধ্যা প্রথমে দাবি করেছিলেন, তাঁর বাবা কানাডায় রয়েছেন। কিন্তু পরে তিনি স্বীকার করেছেন, তাঁর প্রেমিকের সাহায্যে খুন করেছেন, কারণ তাঁর বাবা তাঁকে যৌন হেনস্থা করছিলেন।’’
বেনেটকে কী ভাবে খুন করা হয়েছিল, তারও বর্ণনা আরাধ্যা দিয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। পুলিশের দাবি, আরাধ্যা জানিয়েছেন, ২৬ নভেম্বর প্রথমে বেনেটকে একটি লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। তার পর ছুরি দিয়ে খুন করেন। খুনের পরেও তাঁদের সান্তাক্রুজের ফ্ল্যাটেই তিন দিন রেখে দিয়েছিলেন বেনেটের দেহ। ওই সময়ে তাঁরা দেহটি খণ্ড খণ্ড করে কাটার কাজ করেন। তার পর একটি সুটকেসে ভরে ভাকোলার কাছে মিঠি নদীতে সেই সুটকেসটি ফেলে দেন।
আরও পডু়ন: ‘ভাইয়া, আমি বাঁচতে চাই’, দাদার গলা জড়িয়ে ধরে শেষ আর্তি উন্নাওয়ের তরুণীর
এর পর গত সোমবার মাহিমের উপকূলে সেই সুটকেটসটি সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে ডাঙায় উঠে আসে। তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, আরাধ্যার দাবিগুলি কতটা সত্যি সেটা জানতে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে যৌন হেনস্থার অভিযোগও।