মোদীর সঙ্গে জাপান সফরে গেলেন না মুকেশ

ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে নরেন্দ্র মোদীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। আবার গন্তব্য শিল্পের অন্যতম তীর্থ জাপান। তাই জাপান সফরে মোদীর সঙ্গী হতে হুড়োহুড়ি ছিল শিল্পমহলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিনিধি দলে যোগ দিলেন না মুকেশ অম্বানী। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলে ধারণা রাজনৈতিক শিবিরের। মোদীর সঙ্গে মুকেশের ঘনিষ্ঠতা সুবিদিত।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০০
Share:

স্বাগত। নরেন্দ্র মোদীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা শিনজো আবের। শনিবার। জাপানের কিয়োটোয়। ছবি: এএফপি

ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে নরেন্দ্র মোদীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। আবার গন্তব্য শিল্পের অন্যতম তীর্থ জাপান। তাই জাপান সফরে মোদীর সঙ্গী হতে হুড়োহুড়ি ছিল শিল্পমহলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিনিধি দলে যোগ দিলেন না মুকেশ অম্বানী। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলে ধারণা রাজনৈতিক শিবিরের।

Advertisement

মোদীর সঙ্গে মুকেশের ঘনিষ্ঠতা সুবিদিত। দেশের প্রথম সারির শিল্পপতি ও গুজরাতি ব্যবসায়ী হিসেবে বরাবরই গুজরাতের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন মুকেশ। উপস্থিত থাকতেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লগ্নি টানার উদ্দেশ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও। মুকেশ ও গৌতম আদানির মতো শিল্পপতিদের স্বার্থেই মোদী কাজ করেন বলে বার বার দাবি করেছেন আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ বিরোধীরা। লোকসভা ভোটের সময়ে মোদীকে মুকেশ-সহ শিল্পপতিরা নানা ভাবে সাহায্য করেছেন বলে দাবি নানা শিবিরের।

তাই জাপানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশে মোদীর সফরে মুকেশের না যাওয়া অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সরকারি সূত্রে খবর, যেতে পারবেন না বলে দুঃখপ্রকাশ করে বার্তা পাঠিয়েছেন মুকেশ। তবে না যাওয়ার কারণ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অফিসাররা। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই বিষয়ে তাঁর কিছু বলার নেই।

Advertisement

রাজনৈতিক সূত্রে খবর, প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম নির্ধারণ-সহ কয়েকটি বিষয়ে মোদী সরকার তাঁকে অনেক বেশি সহায়তা করবে বলে আশা করেছিলেন মুকেশ। রিলায়্যান্স অন্যায় ভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলাও হয়েছে। কিন্তু কেবল তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার কৌশল নিতে চান না বলে গোড়া থেকেই বার্তা দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আর এক ব্যবসায়ী হলেন গৌতম আদানি। তাঁর বিরুদ্ধে কিন্তু মোদী জমানাতেই সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, কোনও অভিযোগ উঠলে আইন যে নিজের পথেই চলবে সেই বার্তাও দিতে চেয়েছেন মোদী। অনেকের মতে, প্রত্যাশিত সাহায্য না পেয়েই হয়তো জাপান সফরে না গিয়ে বার্তা দিতে চেয়েছেন মুকেশও।

তবে মুকেশ না গেলেও জাপানে মোদীর সফরসঙ্গী হবেন আদানি, সুনীল ভারতী মিত্তল, শশী রুইয়া, আজিম প্রেমজির মতো শিল্পমহলের প্রথম সারির অনেক ব্যক্তিত্বই। তাঁরা আগামী কাল বিকেলে টোকিও পৌঁছবেন। সে দিনই কিয়োটো থেকে টোকিও যাবেন প্রধানমন্ত্রীও।

ঐতিহ্য ও আধুনিকতার যে মেলবন্ধন দেখা যায় কিয়োটোতে তা বারাণসীতেও করে দেখাতে চান মোদী। তাই তাঁর উপস্থিতিতে আজ ‘অংশীদার শহর’ হল কিয়োটো ও বারাণসী। এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন জাপানে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপা ওয়াধওয়া ও কিয়োটোর মেয়র দাইসাকু কাডোকাওয়া। বিশেষ সৌজন্য দেখাতে আজ মোদীকে অভ্যর্থনার জন্য কিয়োটো আসেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। জাপানি প্রথা মেনে মাছকে খাবার খাওয়ান দু’জনে। পরে মোদীর সম্মানে একটি নৈশভোজেরও আয়োজন করেন আবে। তাঁকে বিবেকানন্দকে নিয়ে লেখা কিছু বই ও গীতা উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তবে এই সফরে জাপানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে ধারণা বিদেশ মন্ত্রকের অফিসারদের। পরমাণু জ্বালানি সরবরাহ করার বিষয়ে বিশেষ ভাবে স্পর্শকাতর হিরোশিমা-নাগাসাকির দেশ জাপান। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, সামরিক পরমাণু প্রকল্প চালু রেখেই আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু জ্বালানি সংক্রান্ত চুক্তি করেছে ভারত। জাপানের ক্ষেত্রেও একই ধরনের চুক্তি চায় দিল্লি। কিন্তু আর কোনও পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটানো হবে না, এই মর্মে প্রতিশ্রুতি চায় টোকিও। ভারতের পরমাণু চুল্লিগুলিতে আরও বেশি আন্তর্জাতিক নজরদারিও চায় তারা। জাপানি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও চলতি সফরে চূড়ান্ত ফয়সালার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা।

টোকিওতে সফরের দ্বিতীয় পর্বের জন্য এখন অপেক্ষায় দু’পক্ষই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement