মুস্তাক শেখ
জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা বাড়িতে জানিয়েছিলেন। তার পর থেকেই মাঝে মাঝে স্বামীকে বোঝাতেন উজমা। জামাইকে বোঝাতেন তাঁর বাবাও। কিন্তু, কে কার কথা শোনে! শোনেননি মুস্তাকও। ‘ভাল কাজে’র দোহাই দিয়ে স্ত্রী-শ্বশুরকে পাল্টা বুঝিয়েছিলেন আইএস-এর কাজকর্ম।
মুস্তাক অর্থাত্ মুদ্দাবির মুস্তাক শেখ। মুম্বইয়ের কাছে মুম্ব্রার বাসিন্দা। গত শুক্রবার আইএস জঙ্গি সন্দেহে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযানে তাঁকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় গোয়ন্দা সংস্থা। ওই দিন দেশের ৬টি শহরে একসঙ্গে তল্লাশি চালান তাঁরা। গ্রেফতার করা হয় ১৪ সন্দেহভাজনকে। ধৃত সকলেই নতুন একটি সংগঠন ‘জানুদ-উল-খলিফা-ই-হিন্দ’-এর সদস্য। এ দেশে হামলা চালাতে এই সংগঠন তৈরি করা হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। আর সেই গোষ্ঠীর স্বঘোষিত নেতা ছিলেন এই মুস্তাক।
আরও পড়ুন: পঠানকোটে গায়েব গাড়ি, তুঙ্গে সতর্কতা
দুই মেয়ে এবং স্ত্রী উজমাকে নিয়ে অমরুত নগরের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন মুস্তাক। পেশায় আইটি কর্মী। বছর দেড়েক আগে তিনি গোরেগাঁও-এর একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন। গোয়েন্দাদের দাবি, সেখানে মুস্তাক প্রায় ৫০ হাজার টাকা বেতন পেতেন। কিন্তু, আচমকাই সেই চাকরি ছেড়ে দেন। কেন? উজমা জিজ্ঞেস করলে বলতেন, ‘‘৩০ লাখ টাকা জমানো আছে। কিছু জমিজমাও কিনে রেখেছি। অসুবিধা হবে না।’’ চাকরি করতে তাঁর ভাল লাগত না। এর পর থেকেই স্থানীয় এক মসজিদে তাঁকে দেখা যেত নিয়মিত। দিনে পাঁচ বার সেখানে প্রার্থনা করতে যেতেন। কথা বলতেন বিভিন্ন লোকের সঙ্গে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকত ধর্ম। এর মধ্যেই এক দিন স্ত্রীকে জানালেন তাঁর আইএস যোগের কথা।
‘‘প্রথমে মনে হয়েছিল মেয়ে দুটোর কী হবে! পরিবারটা তো ভেসে যাবে! ওকে বোঝাই। আমার বাবাও কথা বলে ওর সঙ্গে। কিন্তু, কোনও কাজ হয়নি। পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, ও একটা ইসলামিক গোষ্ঠীর সদস্য। তারা নাকি ভাল কাজ করে!’’— স্বামীকে গ্রেফতারের পর বলেন উজমা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায়ই বলত সিরিয়া চলে যাবে।’’ দুই মেয়েকে নিয়ে সদ্য তিরিশের উজমা অমরুত নগরের ফ্ল্যাট ছেড়ে আপাতত এক আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছেন। তাঁর দাবি, মুস্তাকের সঙ্গে আইএস-এর সম্পর্ক মাত্র কয়েক মাসের। শুধু তাই নয়, মাসখানেক ধরে সেই সম্পর্কে ভাটা চলছিল বলেও তাঁর দাবি। যদিও গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, বছর তিনেক ধরে মুস্তাকের সঙ্গে আইএসের সম্পর্ক। এমনকী, আইএস প্রধান বাগদাদির সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। গত ছয় মাস ধরে গোয়েন্দাদের নজরে ছিলেন মুস্তাক। এর পর গত শুক্রবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
অমরুত নগরের ফ্ল্যাটে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে মুস্তাককে জেরা করেন গোয়েন্দারা। তল্লাশির সময় তাঁর কাছ থেকে প্রচুর যৌনতা সংক্রান্ত তথ্য উদ্ধার হয়েছে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, যৌনতার টোপ দিয়েই মুস্তাককে আকর্ষণ করে আইএস। আর সেই ফাঁদে পা দেন মুস্তাক। গোয়েন্দাদের দাবি, তিনি সারা ক্ষণ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেই থাকতেন। গোষ্ঠীর লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে ইন্টারনেট কল-ই করতেন। সিরিয়াতেও সেই ফোন যেত। সমস্তটাই খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। তবে প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন নথি, ফোন কল লিস্ট, কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক এবং মোবাইল ফোন খতিয়ে দেখে গোয়েন্দারা নিশ্চিত আইএস-এর সঙ্গে মুস্তাকের নিবিড় যোগাযোগ ছিল।
তবে অমরুত নগরের মসজিদে মুস্তাকের সঙ্গে যাঁদের পরিচয় ছিল, তাঁর এই জঙ্গি যোগে তাঁরা বেশ অবাক। এক জনের কথায়, ‘‘মসজিদে মাঝে মাঝেই দেখতাম ওঁকে। কখনও খারাপ কিছু মনে হয়নি। খুব কম কথা বলতেন।’’ তবে, গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ওই ধর্মস্থানে আইএস-এর উদ্দেশ্য প্রচার করতেন মুস্তাক।