Parliament

প্রচার বারণ তো কী! সংসদে মুখ অনুরাগ-প্রবেশ

অনুরাগের বলা ‘দেশের বিশ্বাসঘাতকদের গুলি মারা উচিত’ মন্তব্যকে হাতিয়ার করে তাঁকে ‘গুলি-মারা মন্ত্রী’ তকমা দিয়ে  প্রবল হইচই শুরু করেন বিরোধীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:০৩
Share:

সংসদে ভাষণ দিচ্ছেন অনুরাগ ঠাকুর।

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের প্রভাব পড়ছে সংসদেও। শনিবার বাজেট পেশের পরে সংসদের প্রথম কাজের দিন ছিল আজ। সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে বিরোধীদের তুমুল প্রতিবাদে রাজ্যসভা এ দিন দফায় দফায় বন্ধ হয়ে যায়। লোকসভাতেও প্রশ্নোত্তর পর্বে জবাব দিতে গিয়ে বিরোধীদের প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েন মন্ত্রীরা। তাতে অবশ্য দমেনি শাসক শিবির। কুকথা বলায় কমিশনের নির্দেশে শাস্তিপ্রাপ্ত দিল্লির বিজেপি সাংসদ প্রবেশ বর্মাও লোকসভায় বক্তব্য রাখার সময়ে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলতে শুরু করেন। লোকসভা কার্যত হয়ে দাঁড়ায় নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চ।

Advertisement

কুকথা বলায় কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর তিন দিন ও দিল্লির সাংসদ প্রবেশ বর্মা চার দিন ভোট প্রচারে থাকতে পারবেন না। কমিশনের এই শাস্তিকে কার্যত আজ ঘুরিয়ে বুড়ো আঙুল দেখাল বিজেপি। সংসদের অধিবেশন গোটা দেশে সরাসরি সম্প্রচার হয়। তার সুযোগ নিতে আজ অনুরাগকে অর্থ মন্ত্রক সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার উপরে ধন্যবাদসূচক বিতর্কে বলার ভার পান প্রবেশ বর্মা। অতীতেও এমন কৌশল নিয়েছে বিজেপি। অতীতে একই ধরনের কারণে প্রচার করা বারণ হওয়ায় যোগী আদিত্যনাথ এমন সব কর্মসূচি নিয়েছিলেন, যা গোরক্ষা-সহ গেরুয়া শিবিরের ধর্মীয় মেরুকরণের স্পষ্ট বার্তা দেয়। খবর হিসেবে যার ঢালাও প্রচার ঠেকানোর সুযোগ ছিল না নির্বাচন কমিশনের।

লোকসভায় অধিবেশনের শুরু থেকেই এনআরসি এবং সিএএ প্রশ্নে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কংগ্রেস সাংসদেরা। প্রশ্নোত্তর পর্বে দ্বিতীয় প্রশ্নটিই ছিল অর্থ মন্ত্রকের। জবাব দিতে অনুরাগ দাঁড়াতেই প্রবল চিৎকার ও বিক্ষোভ শুরু করেন বিরোধীরা। অনুরাগের বলা ‘দেশের বিশ্বাসঘাতকদের গুলি মারা উচিত’ মন্তব্যকে হাতিয়ার করে তাঁকে ‘গুলি-মারা মন্ত্রী’ তকমা দিয়ে প্রবল হইচই শুরু করেন বিরোধীরা। প্ল্যাকার্ড হাতে অনুরাগের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। ঘটনাচক্রে প্রশ্নোত্তর পর্বে আজ মোট সাত বার মুখ খুলতে হয় অনুরাগকে। যত বার উত্তর দিতে ওঠেন ততবার বিরোধীরা সরকার-বিরোধী স্লোগান ছেড়ে অনুরাগকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করার কৌশল নেন। লাগাতার আক্রমণে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়েন অনুরাগ। পরে ক্ষোভ উগরে দেন লোকসভার বাইরে। গুলি করার বুলি ছেড়ে অনুরাগ বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে হিংসার কোনও স্থান নেই। গণতন্ত্রে ব্যালটের জোর বুলেটের চেয়ে অনেক বেশি।’’ প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হতেই বিরোধীদের বিক্ষোভে সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দিতে হয় লোকসভার অধিবেশন।

Advertisement

মধ্যাহ্নভোজের পরে লোকসভায় শুরু হয় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার উপরে ধন্যবাদজ্ঞাপক বিতর্ক। প্রথম বক্তা প্রবেশ বর্মা। তাঁকে উঠতে দেখেই বিতর্ক বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস। বেরিয়ে যান সাংসদেরা। লোকসভা থেকেই কার্যত দিল্লিবাসীর জন্য বার্তা দেওয়ার কৌশল নেন বিজেপির ওই নেতা। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের চেয়ে মূলত আক্রমণ শানান কী ভাবে গত দু’দশকে দিল্লির উন্নতিতে ব্যর্থ হয়েছেন কেজরীবাল ও রাহুল গাঁধীর দল। শাহিন বাগ থেকে সিএএ— মেরুকরণ সম্ভব এমন প্রতিটি বিষয়ে মুখর হন তিনি। প্রবেশের কথায়, ‘‘এটা রাজীব ফিরোজ গাঁধীর সরকার নয়। মোদী সরকার কোনও ভাবেই সিএএ প্রত্যাহার করবে না।’’ শিখ দাঙ্গা প্রসঙ্গে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পাশাপাশি কেজরীবাল সরকার কেন মসজিদদের ইমামদের ভাতা দিচ্ছেন সেই প্রশ্ন তোলেন।

দিল্লির দূষণ নিয়ন্ত্রণে কেজরীবালের ব্যর্থতা ও দিল্লি সরকারের বাস কেনার অর্থ পড়ে থাকা নিয়ে প্রবেশ সরব হলে আপত্তি জানান তৃণমূলের সৌগত রায়। স্পিকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘সাংসদ তো ভোটে প্রচার করছেন!’’ স্পিকারের আসন থেকে জবাব আসে, ‘‘রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের জবাবি বিতর্কে সব কিছুই বলা যায়।’’ শেষে সৌগতের বারবার টিপ্পনীতে ক্ষুব্ধ প্রবেশ দমদমের সাংসদের উদ্দেশে বলে বসেন, ‘‘দাদা, জয় শ্রী রাম বলে ফেলুন। সমস্ত পাপ কেটে যাবে।’’ এর পরেই তিনি লোকসভায় দাঁড়িয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ জপতে থাকেন জোর গলায়। গলা তুলে সমর্থন জানায় শাসক শিবির। এতে হতভম্ব হয়ে পড়েন বিরোধীরা।

রাজ্যসভায় এ দিন বিরোধীদের বিক্ষোভে দফায় দফায় অধিবেশন ভেস্তে যায়। আগামিকাল রাজ্যসভার কাজ মুলতুবি করে এনআরসি-সিএএ প্রশ্নে মানুষের যে ক্ষোভ রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য নোটিস দিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement