ফাইল চিত্র।
ইন্টারনেটে নারীদের জীবনসংগ্রামের কাহিনি জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ভারতে কতজন নারী আদৌ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পান, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে সাম্প্রতিক সমীক্ষা। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যেও রয়েছে লিঙ্গ বৈষম্য। তাই প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান কতটা যুক্তিযুক্ত, প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (আইএএমএআই) ও নিয়েলসেনের সাম্প্রতিক সমীক্ষা, ‘ইন্ডিয়া ইন্টারনেট ২০১৯’-এর রিপোর্ট জানাচ্ছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের সংখ্যা নজরে পড়ার মতো কম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে পুরুষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৫ কোটি ৮০ লক্ষ। মহিলার সংখ্যা তার প্রায় অর্ধেক।
এমনিতেই দেশের জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ইন্টারনেটের সুবিধা পান না। সেই মহিলারা কী করে প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে সাড়া দেবেন, প্রধানমন্ত্রীর বার্তার পরে সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। মানবী বিদ্যাচর্চার এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘নারী দিবস এখন ক্যালেন্ডারে উদ্যাপনের একটা দিন হয়ে উঠেছে। কিন্তু রাষ্ট্র নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্যর মতো বিষয়ে কতটা বরাদ্দ বাড়াচ্ছে, যাতে নারীদের দৈনন্দিন সংগ্রাম কমে? ইন্টারনেট অবধি পৌঁছনোই তো বিরাট সংখ্যক নারীর কাছে একটা সংগ্রাম। তাঁরা সে কথা জানাবেন কী করে?’’
ওই সমীক্ষায় প্রকাশ, গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে মাত্র ২৮ শতাংশ মহিলা। তাই প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁরা নিজেদের জীবনসংগ্রামের কাহিনি কীভাবে ইন্টারনেটে আপলোড করবেন সেই প্রশ্ন রয়েইছে। এ ক্ষেত্রে অনেকে টেনে এনেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের উজ্জ্বলা যোজনার প্রসঙ্গ। গত লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্রের একটি ছবি ছড়ায়। তাতে দেখা যাচ্ছিল, তিনি ওড়িশার একটি গ্রামে গিয়েছেন, যে বাড়িতে কাঠের উনুনে রান্না হচ্ছে। সেই ছবি দেখিয়েই বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘তাহলে কি উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাসের সংযোগ পৌঁছয়নি? নাকি একবার গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর নতুন সিলিন্ডার কেনার সামর্থ্য নেই গ্রামের বাসিন্দাদের?’’
সমীক্ষা অনুযায়ী, কেবল কেরল, তামিলনাড়ু ও দিল্লিতে মহিলা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মোট সংখ্যা খানিকটা বেশি। পঞ্চাশ লক্ষের বেশি জনসংখ্যা বিশিষ্ট মেট্রো শহরগুলিতে পুরুষ মহিলার অনুপাত মোটামুটি ৬০-৪০। তবে যে সব মহিলারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাঁরাও নিজের মত প্রকাশের ক্ষেত্রে কতটা নিরাপদ অনুভব করেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। এর আগে অনেক মহিলাই টুইটারে গেরুয়া-শিবিরের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কটূক্তি বা ‘ট্রোলের’ অভিযোগ তুলেছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে ফেসবুক-টুইটারেও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বার্তার পরে কি বিরোধী মত পোষণকারী মহিলারা নির্ভয়ে সমাজমাধ্যমে নিজের মত প্রকাশ করতে পারবেন?’’