যাবতীয় রোগের কারণ অপুষ্টিই। —ফাইল চিত্র।
ভারতে গ্রামীণ মানুষের চার জনের মধ্যে তিন জনই পুষ্টিকর খাবারদাবার পান না। তাঁদের যাবতীয় রোগের কারণ অপুষ্টিই। ‘ফুড পলিসি’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র এ কথা জানিয়েছে।
গবেষণাপত্রটি এও জানিয়েছে সেই গ্রামীণ মানুষজন যদি তাঁদের আয়ের পুরোটাই খরচ করেন খাদ্যের জন্য, তা হলেও প্রতি তিন জনের মধ্যে দু’জনই সবচেয়ে সস্তার পুষ্টিকর খাবারদাবার কিনতে পারেন না।
বিশেষজ্ঞদের একাংশে মতে, এই গবেষণা দেখাল খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে সরকারি বাগাড়ম্বর কতটা ফাঁপা।
দেশের গ্রামীণ জনসংখ্যা পুষ্টিকর খাদ্য পাচ্ছেন কি না তা নিয়ে কেন্দ্রের আর্থিক সমীক্ষাগুলি তৈরি করা হয় যে সব মানদণ্ডের ভিত্তিতে এই গবেষণা তার ব্যাপ্তি বাড়িয়েছে। যাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে এই সমীক্ষার আওতায় আনা যায়। পুষ্টিকর খাবার কিনে খাওয়ার মতো তাঁদের আর্থিক স্বচ্ছ্বলতা সত্যি সত্যিই এসেছে কি না সেটা আরও ভাল ভাবে বোঝা যায়। ফলে এই গবেষণায় শিল্পশ্রমিকদের পাশাপাশি অদক্ষ কর্মী, শ্রমিকদের গড় দৈনিক বা মাসিক আয়ের মানদণ্ডটিও ব্যবহৃত হয়েছে। পুষ্টিকর খাবারদাবারের মধ্যে ডেয়ারিজাত দ্রব্য, ফল, টাটকা আনাজপাতি ও শাকসব্জিকেও ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মোদীর ওয়েবসাইট থেকে কয়েক লক্ষ লোকের তথ্য চুরি, দাবি মার্কিন সাইবার সংস্থার
আরও পড়ুন: মিঠুনের স্ত্রী-পুত্রের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের মডেলের
গবেষণাপত্রটির শিরোনাম ‘অ্যাফোর্ডাবিলিটি অব নিউট্রিশাস ডায়েটস ইন রুরাল ইন্ডিয়া’। গবেষকদলের নেতৃত্বে রয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ কল্যাণী রঘুনাথন।
গত শুক্রবারই প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক। তাতে দেখা যাচ্ছে চিন তো অনেক দূর, ক্ষুধা সূচকে এমনকী পাকিস্তান, বাংলাদেশের চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে ভারত। এগিয়ে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, নেপালও। মোট ১০৭টি দেশের তালিকায় ক্ষুধার সূচকে ভারত রয়েছে ৯৪তম স্থানে। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান রয়েছে যথাক্রমে ৬৬, ৭৩, ৭৫ এবং ৮৮তম স্থানে। অপুষ্টি, শিশুমৃত্যু, পাঁচ বছরের কমবয়সি শিশুদের উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের মতো কয়েকটি মাপকাঠিতে তৈরি হয়েছে এই বিশ্ব ক্ষুধা সূচক।
সাম্প্রতিক গবেষণা জানাল, ভারতের গ্রামীণ মানুষ আগের চেয়ে বেশি ক্যালোরি মূল্যের খাবারদাবার খেলেও কেন্দ্রীয় সরকারের বেঁধে দেওয়া পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত খাচ্ছেন না। খেতে পাচ্ছেন না অর্থাভাবে।
দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর নিউট্রিশন-এর গাইডলাইন বলছে, পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি দিন ৩৩০ গ্রাম করে খাদ্যশস্য এবং ৭৫ গ্রাম করে ডাল খাওয়া উচিত। সঙ্গে খেতে হবে ৩০০ গ্রাম করে ডেয়ারিজাত খাবার, ১০০ গ্রাম করে ফল এবং ৩০০ গ্রাম করে আনাজপাতি। তার মধ্যে অন্তত ১০০ গ্রাম টাটকা শাকসব্জিও থাকা বাঞ্ছনীয়।
গবেষণা হিসাব কষে এও জানিয়েছে, এই সব পুষ্টিকর খাবার রোজ খেতে গেলে খরচ হবে ৪৫ থেকে ৫১ টাকা করে। তারই প্রেক্ষিতে গবেষণা জানিয়েছে আয়ের পুরোটাই খাবার কেনার জন্য খরচ করলেও ভারতের গ্রামীণ মানুষের ৬৩.৩ শতাংশই এই খাবার কিনতে পারছেন না। সংখ্যার হিসাবে ৫২ কোটিরও বেশি ভারতীয়। আর যদি তাঁরা আয়ের দুই-তৃতীংয়াংশ পুষ্টিকর খাবার কেনায় খরচ করেন তা হলে ৭৬ শতাংশেরও বেশি গ্রামীণ মানুষ ওই সব খাবারদাবার খেতে পারছেন না।