ভুটানের বাঁধ থেকে জল ছাড়ায় ডুবেছে নামনি অসমের বিস্তীর্ণ অংশ। পাশাপাশি, টানা বৃষ্টি-ধসে বিপর্যস্ত উজানি অসম, অরুণাচল প্রদেশ।
উজানি অসমের যোরহাট, তেজপুর, তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে ব্রহ্মপুত্র। গোলাঘাটে ধনসিরি, শোণিতপুরে জিয়াভরালি, ধুবুরিতে ব্রহ্মপুত্র, চিরাংয়ে গঙ্গাধর, বরপেটায় বেকি, লখিমপুরে সুবনসিরি, গোলকগঞ্জে সঙ্কোশ ও কামরূপে পুঁথিমারি নদীও বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। রাজ্যের ১৩টি জেলা এখন বন্যা কবলিত। তার মধ্যে ভুটান থেকে আসা জলে শোচনীয় অবস্থা নামনি অসমের বঙাইগাঁও, ধুবুরি, কোকরাঝাড়, বরপেটা ও চিরাং জেলার। বন্যা কবলিতের সংখ্যা সব মিলিয়ে পাঁচ লক্ষেরও বেশি। খোলা হয়েছে ৭০টি ত্রাণ শিবির। গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর লখিমপুর ও মায়ংয়ে বন্যায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
চিরাং জেলায় বন্যা কবলিতদের উদ্ধার করতে হেলিকপ্টার ও সেনাবাহিনীকে নামানো হয়েছে। সেখানে ভুটান থেকে আসা জলে আচমকাই বেড়ে যায় গঙ্গধর নদীর জলতল। ধুবুরি-কচুগাঁওয়ের মধ্যে থাকা রাস্তা ভেসে যায়। ফলে ধুবুরি ও গোঁসাইগাঁওয়ের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বৃষ্টি ও ভুটানের জলের ধাক্কায় আগামী ২৪ ঘণ্টাও নামনি অসমে বন্যার সতর্কবার্তা থাকছে। সেনাবাহিনী চিরাংয়ের খুংগ্রি থেকে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করেছে। বঙাইগাঁও, মরিগাঁও, বরপেটা জেলায় উদ্ধার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ২০টি নৌকা।
তিনসুকিয়ায় বন্যার জল বেড়ে ডিব্রু-শইখোয়া জাতীয় উদ্যানের হাতি, বুনো ঘোড়াদের অবস্থা বিপন্ন। গোগামুখে ভেঙে পড়েছে সেতু। গুয়াহাটির অময়াপুর পথ ও গুরুকুল গ্রামার স্কুলের কাছে ধস নামে। তবে কেউ হতাহত হননি। গত কাল গুয়াহাটির নুনমাটি এলাকায় ধস নেমে এক বৃদ্ধা মারা যান।
স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলির অভিযোগ, ভুটানের কুরশি, চুখা, ভালা ও বাসাও নদীর জল ধুবুরি, বঙাইগাঁও, বরপেটায় ফি বছর বন্যার সৃষ্টি করলেও ভারত সরকার এ নিয়ে ভুটানের সঙ্গে আলোচনায় বসছে না। জল ছাড়ার আগে ভুটানও ভারতকে আগাম সতর্ক বার্তা দিচ্ছে না। এ দিন বনমন্ত্রী প্রমীলারানি ব্রহ্ম কোকরাঝাড়ের বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন। ডিব্রুগড় ও গুয়াহাটিতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ডিব্রুগড়ে বিন্ধাকাটা মুলুকগাঁওয়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের আদিবাড়ি-সহ সিংহভাগ এলাকা জলের তলায়। সিয়াং নদীর জল বেড়ে অসমের লখিমপুরে মূল বাজার, গাঁধী চক, কয়েকটি কলোনি এলাকা ডুবেছে। ধেমাজি জেলার দিখারি নদী গতিপথ বদলে জোনাইয়ের উলুয়ানি, জামুগুড়ি, মোলানের দিকে ঢুকে পড়ে। শিঙরা নদীর জলে নাওবৈচা ও লালুকও বন্যা কবলিত।
এ দিকে, অসমে বন্যা এবং ভূমিক্ষয় রোধে প্রযুক্তিগত সাহায্য দেওয়ার অঙ্গীকার করল বিশ্বব্যাঙ্ক। গত কাল মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের সঙ্গে দিসপুরে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে বৈঠক করেন। বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা জানান: মেকং, মিসিসিপি ও ব্রহ্মপুত্রের বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা বিরাট চ্যালেঞ্জ। রাজ্য সরকার ব্রহ্মপুত্রের বন্যা ও ভূমিক্ষয় নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রের কাছে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব জমা দিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে চিন যে ভাবে হোয়াং হো নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ করেছে তা শিখতে রাজ্যের বিশেষজ্ঞদের চিনে পাঠানো হবে।
অন্য দিকে, অরুণাচলে সেইজোস, নামসাই এলাকায় বন্যা শোচনীয় আকার নিয়েছে। পূর্ব কামেং জেলার বিভিন্ন স্থানে ধস নেমে রাস্তা বন্ধ। নোয়া ডিহিং নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। আপার সুবনসিরি জেলায় ধস নেমে বেশ কিছু সরকারি ভবন চাপা পড়েছে।
লোহিত জেলার বেশ কিছু এলাকা জলের তলায়। চাংলাং জেলায় অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। নামসাইতে জেংথু নদীর জলও বিপদসীমার উপরে। লোহিত, কামলং, বেরেং ও টেঙাপানি, সুনপুরায় বালিজান ও কালিখোলা নদী পাড় ভাসিয়ে বইছে। মিয়াও, জয়রামপুরে হড়পা বানে অনেক গ্রাম ভেসেছে। পাসিঘাট-সহ পূর্ব সিয়াং জেলার অনেকাংশও বন্যা কবলিত।