Reserve bank of India

৮৮ হাজার কোটি টাকা গেল কোথায়? টাঁকশালে ছাপা টাকার একটা অংশ পৌঁছল না রিজার্ভ ব্যাঙ্কে

তথ্যের অধিকার আইনে পাওয়া এই বিষয়টি জাতীয় অর্থনীতির নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।  প্রশ্ন উঠেছে, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ভল্টে নোটের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩ ০৭:৪৭
Share:

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। —ফাইল চিত্র।

ভারত সরকারের টাঁকশালে চরম গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ছাপা হয়েছিল নোটগুলো। অথচ তার একটা অংশ পৌঁছলই না দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের সিন্দুকে! সে টাকার পরিমাণও নেহাত কম নয়। ৮৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি! সব মিলিয়ে ৮৮,০৩২.০৫ কোটি টাকা।

Advertisement

টাকাগুলো তা হলে গেল কোথায়?

তথ্যের অধিকার আইনে পাওয়া এই বিষয়টি জাতীয় অর্থনীতির নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ভল্টে নোটের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও। তবে রাতে এই দাবি খারিজ করে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, বিষয়টির ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যে পরিমাণ নোট উধাও হওয়ার দাবি করা হয়েছে তা সঠিক নয়।

Advertisement

তিনটি সরকারি টাঁকশালে ছাপা হয় ভারতীয় নোট। এগুলি হল, বেঙ্গালুরুর ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক নোট মুদ্রণ (পি) লিমিটেড, নাশিকের কারেন্সি নোট প্রেস এবং মধ্যপ্রদেশের দেওয়সের ব্যাঙ্ক নোট প্রেস। ছাপার পরে সেই সব নোট পাঠানো হয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ভল্টে। সেখান থেকেই ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বাজারে আসে নোটগুলি।

তথ্যের অধিকার কর্মী মনোরঞ্জন রায়ের তথ্যের অধিকার আইনে (আরটিআই) করা প্রশ্নের জবাবে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ২০১৬-১৭ সালে তিনটি টাঁকশালে নতুন নকশার ৫০০ টাকার ৮৮১.০৬৫ কোটি নোট ছাপা হয়েছে। কিন্তু ওই তিনটি টাঁকশাল থেকে ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক পেয়েছে ৭২৬ কোটি নোট। গত মাসে মনোরঞ্জন রায়ের তথ্যের অধিকার আইনে করা আরও একটি প্রশ্নের জবাবে নাশিকের কারেন্সি নোট প্রেস তথ্য দিয়ে জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে ২১ কোটি নতুন নকশার ৫০০ টাকার নোট রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে সরবরাহ করেছিল তারা। হিসেব মিলছে না তারও। সব মিলিয়ে হিসেব থেকে উধাও বা হারিয়ে যাওয়া নোটের সংখ্যা ১,৭৬.০৬৫ কোটি। যার মূল্য ৮৮,০৩২.৫ কোটি টাকা।

তথ্যের অধিকার আইনে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ২০১৬-১৭ সালে নাশিকের কারেন্সির নোট প্রেস নতুন নকশার ১৬৬.২ কোটি ৫০০ টাকার নোট রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে সরবরাহ করেছিল। ওই একই সময়ে বেঙ্গালুরুর ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক নোট মুদ্রণ (পি) লিমিটেড ৫১৯.৫৬৫ কোটি এবং মধ্যপ্রদেশের দেওয়সের ব্যাঙ্ক নোট প্রেস ১৯৫.৩ কোটি ৫০০ টাকার নোট আরবিআইকে সরবরাহ করেছিল।

যেখানে তিন টাঁকশালে নতুন নকশার ৫০০ টাকার নোট মোট ছাপা হয়েছে ৮৮১.০৬৫ কোটি, সেখানে আরবিআই পেয়েছে ৭২৬ কোটি নোট। অর্থাৎ ১৫৫.০৬৫ কোটি ৫০০ টাকার নোট রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঘরে ফেরে নাই! তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে ২১ কোটি নতুন ৫০০ টাকার নোট, যা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে সরবরাহ করা হলেও তার খোঁজ মিলছে না বলে জানা গিয়েছে। সব মিলিয়ে উধাও হওয়া নোটের সংখ্যা ১,৭৬.০৬৫ কোটি। যার আর্থিক মূল্য ৮৮,০৩২.৫ কোটি টাকা। ফলে হিসেবে বড়সড় গরমিল।

তথ্যের অধিকার কর্মী মনোরঞ্জন রায়ের বক্তব্য, এ ভাবে বিপুল পরিমাণ নোট উধাও হয়ে যাওয়া কোনও ছেলেখেলার বিষয় নয়। টাঁকশালে ছাপা হওয়া মোট নোটের সংখ্যা ও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সিন্দুকে যাওয়া মোট নোটের পরিমাণের মধ্যে এই বিপুল অঙ্কের গরমিলের ফলে ভারতীয় অর্থনীতিতে বড় ক্ষতি হয়েছে। অথচ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এ নিয়ে উদাসীন, অভিযোগ তাঁর। গোটা ঘটনায় সেন্ট্রাল ইকনমিক ইন্টেলিজেন্স বুরো ও ইডিকে চিঠি লিখেছেন তিনি।

রাতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, তথ্যের অধিকার আইনে টাঁকশাল থেকে পাওয়া তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। টাঁকশাল থেকে আসা সব নোটের হিসাবই মিলেছে। এই বিষয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া তথ্যের উপরে ভরসা করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement