ক্রিকেট-দুর্নীতি বিতর্কে নীরবতা ভেঙে প্রথম বার মুখ খুলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির পাশে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে হাওয়ালা কাণ্ডে লালকৃষ্ণ আডবাণীর উদাহরণ তুলে নতুন এক বিতর্কের জন্ম দিয়ে বসলেন তিনি!
আজ সকালে সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে দলের সাংসদদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় আডবাণীর বিরুদ্ধে হাওয়ালা কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে হাত পুড়িয়েছিল কংগ্রেস। আডবাণী নিষ্কলঙ্ক প্রমাণিত হয়েছিলেন। এখন অরুণ জেটলির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছে, সেটিও ভিত্তিহীন। আডবাণীর মতো তিনিও নিষ্কলঙ্ক প্রমাণিত হবেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তাঁর সবচেয়ে কাছের লোক বলে পরিচিত জেটলি গত ক’দিন ধরে ক্রিকেট-দুর্নীতি বিতর্কে হাবুডুবু খাচ্ছেন। তার মধ্যে দলেরই সাংসদ কীর্তি আজাদ যে ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে পরপর দু’দিন সরব হয়েছেন, তাতে ক্ষুব্ধ জেটলি গত কালই মোদীর দ্বারস্থ হয়ে তাঁকে শাস্তি দেওয়ার দাবি তুলেছেন। তার পরেও কাল লোকসভায় জেটলির সামনেই ক্রিকেট-দুর্নীতি নিয়ে কীর্তি ফের মুখ খোলায় পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় মোদী আজ জেটলির পাশে দাঁড়ালেও কীর্তি প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি! সংসদীয় দলের এই বৈঠকে অবশ্য কীর্তি ছিলেন না।
জেটলির পক্ষ নিয়ে করা মোদীর মন্তব্য ঘিরেই নতুন ঝড় উঠেছে। বিরোধীরা তো বটেই, বিজেপির অন্দরে জেটলি-প্রতিপক্ষরাও বলছেন, আডবাণীর উদাহরণ তুলে মোদী পরোক্ষে অর্থমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতেই বলেছেন। কারণ ১৯৯৬ সালে হাওয়ালা-কাণ্ডে নাম জড়ানোর পরেই আডবাণী পদত্যাগ করেছিলেন।
সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘আডবাণীর সঙ্গে তুলনা করে মোদী জেটলিকে বুঝিয়েছেন যে, তিনি পদত্যাগ করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে ফিরে আসুন।’’ কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদেরও প্রশ্ন, ‘‘হাওয়ালা-কাণ্ডে নাম ওঠার পরেই আডবাণী ইস্তফা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী কি জেটলিকেও সেই পরামর্শ দিলেন?’’
জেটলি-সমর্থকেরা অবশ্য এই মত মানতে নারাজ। মোদীর ঘনিষ্ঠ মহলও বলছে, প্রধানমন্ত্রী এই বার্তা দেননি। তিনি পুরোদস্তুর জেটলির পাশেই দাঁড়িয়েছেন। আর শুধু জেটলি নন, আজ ব্যপম-কাণ্ডে অভিযুক্ত শিবরাজ সিংহ চৌহান, ললিত মোদী-বিতর্কে অভিযুক্ত বসুন্ধরা রাজে, সুষমা স্বরাজেরও নাম করে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মোদী। যদিও দলের জেটলি-বিরোধীদের বক্তব্য, এ সব করে দুর্নীতিতে নাম জড়িয়ে যাওয়া সকলের সঙ্গেই অর্থমন্ত্রীকে একাসনে বসিয়ে দিলেন মোদী!
বিজেপির অন্য একটি অংশের বক্তব্য অবশ্য ভিন্ন। তাঁরা বলছেন, গোটা ব্যাপারটায় মোদী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। এ দিন তিনি স্পষ্ট করেই ক্রিকেট-দুর্নীতি বিতর্ক থেকে দূরে থেকেছেন। একই সঙ্গে বুঝিয়ে দিয়েছেন, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে আডবাণী যেমন নিজের লড়াই নিজেই লড়েছিলেন, তেমনই জেটলিকেও সেই লড়াই লড়ে নিজের সততা প্রমাণ করতে হবে।
এখন প্রশ্ন, মোদী-মন্ত্রিসভার অঘোষিত দু’নম্বর জেটলিকে তোপ দাগা কীর্তি আজাদের শাস্তি কি আদৌ হবে? বিজেপির একটা অংশের বক্তব্য, সে চাপ প্রচণ্ডই। বিহার বিজেপির নেতা তথা প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদীও কীর্তির শাস্তির দাবিতে সরব। মোদী যখন বিদেশে থাকবেন, তখন কীর্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করতেই পারেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। কিন্তু তাতে কীর্তি বিদ্রোহী হয়ে আরও বড় সমস্যা করতে পারেন। অন্য অংশের বক্তব্য, কীর্তির হাতে জেটলি-বিরোধী নতুন অস্ত্র নেই। তাই তাঁকে নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।