নরেন্দ্র মোদী
২০১৮ সালের শেষে লোকসভা ভেঙে দিয়ে ভোট এগিয়ে আনতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী।
বেশ কয়েক জন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই ইচ্ছার কথা জানিয়েই থেমে থাকেননি। মোদী তাঁদের বলেছেন, দেশে আইন করে লোকসভার সঙ্গে সব রাজ্যে বিধানসভা ভোট করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। নির্বাচন কমিশন ও নীতি আয়োগের সঙ্গে কিছু দিন ধরেই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। সম্প্রতি নীতি আয়োগ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের মধ্যে এই ব্যবস্থা কার্যকর করা সম্ভব।
মোদী ওই মুখ্যমন্ত্রীদের বলেছেন, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি–মার্চের মধ্যে বিজেপি রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যাবে। এর পর যদি লোকসভা ও রাজ্যসভায় এ ব্যাপারে আইন পাশ করানো সম্ভব হয়, তা হলে ওই বছরে অর্থাৎ ২০১৮ সালের শেষে শীতকালে ভোট করা যাবে না কেন?
বসুন্ধরা রাজে, শিবরাজ সিংহ চৌহান, রমন সিংহের মতো বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীরা প্রকাশ্যে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা না করছেন না। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রী এর সমালোচনা করছেন। মমতার বক্তব্য, যে রাজ্যগুলিতে সবে জিতে এসেছে কোনও দল, তারা কেন তাড়াহুড়ো করে ভোটে যাবে? এই বিষয়ে অবশ্য পাল্টা প্রস্তাব রেখেছেন মোদী। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাওকে তিনি বলেছেন, উত্তরপ্রদেশ কিংবা পঞ্জাবের মতো যে রাজ্যগুলিতে সদ্য ভোট হয়েছে, তাদের এক বছর ‘গ্রেস’ দেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ সেখানে এক বছর পরে বিধানসভার ভোট হতে পারে। কিন্তু অসমের নেতাদের বক্তব্য, ‘গ্রেস’ বা অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে কীসের ভিত্তিতে?
আরও পড়ুন:রজনী-হাত ধরে দ্রাবিড়ে কি পা রাখবে বিজেপি
মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে মোদী যুক্তি দিয়েছেন, যে কোনও নতুন প্রস্তাব নিয়ে এগোতে গেলেই মতপার্থক্য হয়। শুরুতে ভয়, জড়তা থাকে। বাধা আসে। কিন্তু ভোট করাতে যে বিপুল অর্থ ব্যয়, তা থেকে দেশকে বাঁচাতেই একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট করা উচিত। খরচ বাঁচাতে একসঙ্গে ভোট করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা যদিও অনেক দিন থেকেই চলেছে। লালকৃষ্ণ আডবাণী যখন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিনিই প্রথম এই প্রস্তাব দেন। আর প্রধানমন্ত্রী হয়েই মোদী একে বাস্তবায়িত করতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন। দেশে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর সংখ্যা এখন অনেক। কিন্তু মোদী জানেন, একটি-দু’টি রাজ্যের বিরোধিতায় জিএসটির মতো আইন কার্যকর করতে কত জটিলতা হচ্ছে। ফলে লোকসভা-বিধানসভাগুলির ভোট একসঙ্গে করাও যে সহজ ব্যাপার নয়— প্রধানমন্ত্রী তা ভাল ভাবেই বুঝছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, যদি বিধানসভাগুলির ভোট একসঙ্গে না করা যায়, তা হলেও কি মোদী লোকসভার ভোট এগিয়ে আনবেন? লোকসভা ভোট নির্ধারিত ২০১৯-এ। বিজেপি সূত্র বলছে, সঙ্ঘ জানে উত্তরপ্রদেশে বিরাট জয়ের পরে এই মুহূর্তে মোদীর যে জনপ্রিয়তা, পরে হয়তো তা ধরে রাখা যাবে না। সরকার-বিরোধী অসন্তোষ বেড়ে যাওয়ার আগেই ভোটে গেলে সুবিধা রয়েছে। বিরোধীরাও ক্রমশ একজোট হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁদের যত কম সময় দেওয়া যায়, ততই ভাল। আর লোকসভার লড়াই বিজেপিকে প্রস্তুত রাখতে অমিত শাহও ‘ভারত যাত্রা’-র কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।