রাজ্যসভায় মোদী
বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধের শেষ দিন ছিল আজ। আগামিকাল থেকে সব নজর ঘুরে যাবে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের দিকে। আর আজই বোঝা গেল, বুধবার রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে কটু বাক্য বলে গোটা বিরোধী শিবিরকে কতটা চটিয়ে ফেলেছেন নরেন্দ্র মোদী। এই অসন্তোষকে কাজে লাগিয়েই মোদীর বিরুদ্ধে এ বারে আরও এককাট্টা হয়ে সুর চড়াল বিরোধীরা।
নোট বাতিল নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে নেমে গত কালই রাজ্যসভায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সম্পর্কে আচমকাই কটু মন্তব্য করেছিলেন মোদী। আজ সেই মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই তৃণমূল, সিপিএম, এনসিপি-সহ একাধিক দলকে পাশে টেনেছে কংগ্রেস। সেই সম্মিলিত জোটের দাবি, প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে। এ নিয়ে রণকৌশল তৈরির জন্য আজ বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ। তার পরেই বিরোধীদের বিক্ষোভে দুপুর পর্যন্ত অচল হয়ে যায় রাজ্যসভা। লোকসভায় অবশ্য বাজেট নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়েছে। বিরোধীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধেও মোদীর ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে অনড় থাকবেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: নয়া নোটে দুর্নীতি বেড়েছে, দাবি চিদম্বরমের
নোট বাতিল নিয়ে যুক্তি সাজাতে গিয়ে গত কাল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সামনেই তাঁকে নিশানা করে মোদী বলেছিলেন, ‘‘ডক্টর সাহাবের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। এত কেলেঙ্কারির একটি দাগও তাঁর গায়ে লাগেনি! বর্ষাতি পরে কী করে স্নান করতে হয়, সেটি ডক্টর সাহাবই জানেন!’’ মোদীর এই মন্তব্যের প্রতিবাদে গত কাল রাজ্যসভা থেকে ওয়াকআউট করে কংগ্রেস। আজ রাজ্যসভায় মনমোহন জমানার অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘আমরা চাইলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার সময়ে গণ্ডগোল করতে পারতাম। সেই বিকল্পও ছিল। কিন্তু করিনি। কারণ, তাতে প্রধানমন্ত্রী পদের অসম্মান হয়। প্রধানমন্ত্রী একটি পদ, কোনও ব্যক্তি নন। ওঁর বোঝা উচিত, উনি যে আসনে বসেন, সেখানে জওহরলাল নেহরু বসতেন। বাজপেয়ী বসতেন।’’
মনমোহন সম্পর্কে মোদীর মন্তব্যে অখুশি অনেক বিজেপি নেতাও। তবে কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। উল্টে মোদীর নির্দেশে উত্তরাখণ্ডে ভোটের প্রচারে গিয়ে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ কংগ্রেসকেই ফের নিশানা করেছেন। কিন্তু তাতে যে বিজেপির অস্বস্তি কেটেছে, তা নয়।
সেই অস্বস্তি আরও বাড়িয়েই আজ চিদম্বরম বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে ঘরোয়া আলোচনায় বোঝান যে, ওঁর কথাবার্তা আরও মার্জিত, সম্মানজনক হওয়া প্রয়োজন। এমনকী আমেরিকায় ভোট প্রচারের সময়ে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক বেপরোয়া মন্তব্য করেছিলেন, তিনিও প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরে প্রেসিডেন্ট ওবামা, প্রেসিডেন্ট বুশ, প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টনকে সম্মান জানিয়ে বক্তৃতা শুরু করেছিলেন।’’ মোদীর মন্তব্যের নিন্দে করে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মোদীর একমাত্র জবাব হল, বর্ষীয়ান নেতাদের ব্যক্তিগত অপমান! দুর্বল ব্যক্তিরাই শক্তি দেখাতে অভদ্র আচরণ করেন।’’
আরও পড়ুন: সৌগতকে খোঁচা জেটলির
মোদীকে আড়াল করতে গিয়ে মুখে এ সব যুক্তি সাজালেও সরকারের মন্ত্রীরাই বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধ নিয়ে সংশয়ে। তাঁদের দাবি, তখন তো কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের সঙ্গেই আলোচনায় যেতে হবে, যাতে অধিবেশন ভেস্তে না যায়!