সংস্কারের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। যোজনা কমিশনের প্রাক্তন তথা শেষ ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া চেষ্টাও করেছিলেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে যোজনা কমিশনের সার্বিক সংস্কার চেয়ে চিঠিও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই পরিকল্পনা দিনের আলো দেখেনি। উল্টে ক্ষমতায় এসে তিন মাসের মধ্যেই যোজনা কমিশনে ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। আঞ্চলিক দল কিংবা বণিক সংস্থাগুলি যখন কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্তের পক্ষে সরব, তখন রীতিমতো অস্বস্তিতে কংগ্রেস শিবির। দলীয় নেতৃত্ব যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করে নিচ্ছেন সময়ের দাবি মেনে এই সংস্কারের প্রয়োজন ছিল। তবু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণেই আগামী দিনে মোদীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুর চড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস।
কংগ্রেসও বুঝতে পারছে, বাজার অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করতে যোজনা কমিশনের সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণেই বিরোধী দল হিসেবে তাদের পক্ষে এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করা সম্ভব নয়। তাই প্রাথমিক ভাবে দু’টি বিষয়কে সামনে রেখে সরকারকে আক্রমণ করার রণকৌশল স্থির করেছে দল। প্রথমত, কংগ্রেস বলছে সংস্কারের এই উদ্যোগ আসলে ইউপিএ সরকারের ভাবনার ফসল। এআইসিসির নেতাদের বক্তব্য, বর্তমান সময়ের নিরিখে যোজনা কমিশনের ভূমিকা যে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন, তা আগের সরকারই বুঝতে পেরেছিল। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী কপিল সিব্বলের দাবি, “এ বিষয়ে মনমোহন সিংহের কাছে একটি রিপোর্টও পাঠান মন্টেক। সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছিল।” কপিলের ওই দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। দলের নেতা শাহনওয়াজ হুসেনের বক্তব্য, “সংস্কারের কাজ যদি শুরুই হয়ে থাকে, তা হলে কেউ জানতে পারল না কেন।”
এ ছাড়া, কংগ্রেসের অভিযোগ, যে ভাবে যোজনা কমিশন বিলোপের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে মোদীর ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। কেননা, এই সিদ্ধান্ত একার হাতে নিয়েছেন মোদী। গোটা এনডিএ-র রায় কী হবে, তা জানার প্রয়োজনবোধ করেন নি। তাই মোদীর এই মনোভাবকে তুলে ধরেই তাঁকে আক্রমণের কৌশল নিয়েছে কংগ্রেস শিবির। দলের নেতা গুলাম নবি আজাদের বক্তব্য, “এখন ভয় হল, গোটা ক্ষমতার রাশ মোদীর হাতে চলে যাবে না তো? যোজনা কমিশনের মূল ভাবনা ছিল জহওরলাল নেহরুর। এত দিন কমিশন ভালই কাজ করেছে। যদি মোদী একে আধুনিক রূপ দিতে চান, তা হলে দেখতে হবে যাতে সমস্ত ক্ষমতা তাঁর হাতে চলে না যায়।’’
একই আশঙ্কা সিপিএমেরও। তারা মনে করছে, এর ফলে সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ফেলতে পারেন মোদী। রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের মতে, “যোজনা কমিশন থাকায় আলোচনায় ভিন্নমত উঠে আসত। যা থেকে একটি পথ বেছে নেওয়া যেত।” অবশ্য বিজেপি শিবিরের যুক্তি,এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যগুলি নিজেদের মতো করে অর্থ খরচ করতে পারবে। রাজ্যগুলির আর্থিক ক্ষমতায়ন হবে। ওই যুক্তি খারিজ করে দিয়ে অসীমবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “ক্ষমতায়নই যদি উদ্দেশ্য হয়, তা হলে রাজ্যগুলিকেই তো কমিশনের সদস্য করে নেওয়া যেত।”
তা ছাড়া, যে ভাবে সংসদকে অন্ধকারে রেখে সরকার ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বিরোধিতায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস শিবির। এ ক্ষেত্রে বাম বা তৃণমূল কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলগুলিকে পাশে পাবে বলে আশা কংগ্রেসের। শীতকালীন অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছেন তাঁরা।