পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে সরকার

বাতাসে শীতের প্রকোপ বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন শৈত্য বাড়ছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কেও। আজ ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে কামান দাগলেন রাজনাথ সিংহ। একই মঞ্চে কাল এই সুর আরও চড়াতে পারেন নরেন্দ্র মোদী। সার্কের শেষ বেলায় নরেন্দ্র মোদী ও নওয়াজ শরিফের করমর্দনে আগেকার উষ্ণতা খুঁজতে চেয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি যে ঠিক তার উল্টো, আজ তা স্পষ্ট করে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। অসমের গুয়াহাটিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির ডিজিপিদের সম্মেলনে দাঁড়িয়ে পড়শি পাকিস্তানকে উদ্দেশ করে রাজনাথ বলেন, ভারতে অস্থিরতা তৈরির জন্য দায়ী সে দেশের সরকারি শক্তি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি ও দিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৪ ০২:০৫
Share:

উত্তর-পূর্ব ভারতের আট রাজ্যের ডিজিপি সম্মেলনের মঞ্চে তখন খোদ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। বক্তব্য রাখছেন দেশের নিরাপত্তা নিয়ে।

বাতাসে শীতের প্রকোপ বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন শৈত্য বাড়ছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কেও। আজ ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে কামান দাগলেন রাজনাথ সিংহ। একই মঞ্চে কাল এই সুর আরও চড়াতে পারেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

সার্কের শেষ বেলায় নরেন্দ্র মোদী ও নওয়াজ শরিফের করমর্দনে আগেকার উষ্ণতা খুঁজতে চেয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি যে ঠিক তার উল্টো, আজ তা স্পষ্ট করে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। অসমের গুয়াহাটিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির ডিজিপিদের সম্মেলনে দাঁড়িয়ে পড়শি পাকিস্তানকে উদ্দেশ করে রাজনাথ বলেন, ভারতে অস্থিরতা তৈরির জন্য দায়ী সে দেশের সরকারি শক্তি। আর এ কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন জম্মু-কাশ্মীরে পর পর দু’দিন জঙ্গি হামলার পরই। দুই হামলাতেই পাক জঙ্গিদের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করছে কেন্দ্র। কাল ওই সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। রাজনাথ আজ যে ভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন, অনেকে মনে করছেন কাল আরও কড়া ভাষায় ইসলামাবাদকে আক্রমণ শানাতে চলেছেন মোদী।

স্বাধীনতার পর এই প্রথম দিল্লির বাইরে কোনও ডিজি সম্মেলন হচ্ছে। আর তার জন্য অসমকে বেছে নেওয়াটাও তাৎপর্যপূর্ণ। গত এক দশক ধরে লাগাতার অনুপ্রবেশে অসমে মৌলবাদী শক্তিগুলি ক্রমশ নিজেদের ঘাঁটি শক্ত করেছে। উত্তর-পূর্বের একাধিক জঙ্গি সংগঠনও সক্রিয় রয়েছে এখানে। এদের প্রধান মদতদাতা যে আইএসআই, সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ কেন্দ্র। ২ অক্টোবর খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে প্রমাণ হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মাটিতেও দিব্যি শিকড় ছড়িয়েছে মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনগুলি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, আগামী দিনে উত্তর-পূর্ব ও পূর্ব ভারতের মাটি থেকে জঙ্গি নেটওয়ার্ক উপড়ে ফেলাই হবে কেন্দ্রের প্রাথমিক কর্তব্য। সেই কারণেই মোদী সরকারের প্রথম ডিজি সম্মেলনটির জন্য গুয়াহাটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। বার্তা স্পষ্ট আগামী দিনে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনীর আতস কাঁচের তলায় সর্বক্ষণ নজরে থাকতে চলেছে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত।

Advertisement

ছয় বছর আগে ঠিক এই সময়েই মুম্বই হামলা চালিয়েছিল পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আশঙ্কা, এ বার একই সময়ে এক সঙ্গে একাধিক শহরে হামলা করার ছক কষছে জঙ্গি সংগঠনগুলি। সম্প্রতি আল কায়দা-প্রধান আইমান আল জওয়াহিরি একটি ভিডিও বার্তায় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সন্ত্রাস ছড়ানোর হুমকি দেন। ভারতের শাখা খোলার কথাও ঘোষণা করেন তিনি। ওই ভিডিও বার্তার পরে নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রও।

দর্শকাসনে সিবিআই-প্রধান রঞ্জিত সিন্হা। শুনলেন না কিছুই। কারণ, তিনি ঘুমোচ্ছেন।

সাংবাদিকদের ক্যামেরায় এই ছবি ধরা পড়তেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অবসরগ্রহণের

বাকি আর মাত্র দু’টো দিন। গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টে টুজি-মামলা নিয়ে জোর

ধাক্কা খেয়েছিলেন তিনি। এ দিন ফের বিতর্কে। ছবি: পিটিআই।

গোয়েন্দাদের মতে, আল-কায়দা এখন হরকত-উল-মুজাহিদিন, জইশ-ই-মহম্মদ-এর মতো জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে সমন্বয় করে ভারতে হামলা চালানোর চক্রান্ত করছে। আর এ কাজে সূত্রধরের ভূমিকা নিচ্ছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে যথারীতি চালু রয়েছে জঙ্গি প্রশিক্ষণ। ভারতের দাবি, সব জেনেও না-দেখার ভান করছে পাক প্রশাসন। আজ তাই রাজনাথ বলেন, “আলোচনার সময়ে পাকিস্তান একটাই কথা বলে, জঙ্গিরা তাদের কেউ নয়। কিন্তু এটা জলের মতো সত্য জঙ্গিদের মদত দেওয়ার পিছনে আইএসআই-ই রয়েছে।” রাজনাথের পাল্টা প্রশ্ন, ওই গোয়েন্দা সংস্থা কি পাক প্রশাসনের অঙ্গ নয়?

পাক সীমান্ত এলাকায় জঙ্গি হামলার পিছনেও পাক সেনার মদত রয়েছে বলে আজ দাবি করেছেন রাজনাথ। গত কয়েক মাসে লাগাতর সংঘর্ষবিরতি চুক্তি উল্লঙ্ঘন করে গোলাগুলি চালায় পাক বাহিনী, যার আসল উদ্দেশ্য ছিল ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশে সাহায্য করা। গোয়েন্দাদের হাতে তথ্য এসেছে, জলপথেও আক্রমণ শানানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে পাক সহযোগী জঙ্গিরা।

এ ক্ষেত্রে নিশানা হতে পারে ভারতীয় নৌজাহাজগুলি। ইতিমধ্যেই হামলার আশঙ্কায় খিদিরপুরে নৌজাহাজের প্রদর্শনী বাতিল করেছে ভারতীয় নৌসেনা। আজ রাজনাথ বলেন, “পাক নৌবাহিনীর বেশ কিছু অফিসার ওই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।” পশ্চিমের পরিবর্তে পূর্ব উপকূল এখন জঙ্গিদের পাখির চোখ বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। পাশাপাশি ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্তও চিন্তায় রেখেছে কেন্দ্রকে। রাজনাথ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে আজ সরব হন আইবি প্রধান আসিফ ইব্রাহিমও। গোয়েন্দা প্রধান বলেন, “ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গি কার্যকলাপের উদ্বুদ্ধ হচ্ছে অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলিও। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন ফের নতুন সন্ত্রাস-মডিউল বানিয়ে এ দেশে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে।” তাঁর মতে, সন্ত্রাসের নতুন পীঠস্থানে পরিণত হয়ে উঠেছে ইরাক ও সিরিয়া।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement