রোহিঙ্গা প্রশ্নে ফের সঙ্কটে মোদী সরকার

চাপ বহুমাত্রিক। ভারতে বসবাসকারী ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ, এই রোহিঙ্গা গোষ্ঠী জম্মু ও কাশ্মীরে ছড়িয়ে পড়ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:১১
Share:

চিনের সঙ্গে সংঘাত মিটতে না মিটতেই বিদেশনীতির প্রশ্নে ফের সঙ্কটে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে তা না পারা যাচ্ছে হজম করতে, না পারা যাচ্ছে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে চাপমুক্ত হতে। এ নিয়ে বিভিন্ন স্তরের চাপ কাটিয়ে সমাধানের পথ খোঁজাটাই এখন সাউথ ব্লকের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

Advertisement

চাপ বহুমাত্রিক। ভারতে বসবাসকারী ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ, এই রোহিঙ্গা গোষ্ঠী জম্মু ও কাশ্মীরে ছড়িয়ে পড়ছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, রোহিঙ্গা জঙ্গি গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)-র সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে লস্কর ই তইবা, জইশ ই মহম্মদ এবং পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর। কাশ্মীরের টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা জনজাতির আধিক্য উপত্যকায় বাড়াটা একেবারেই কাম্য নয়। বিনা জঙ্গি অনুপ্রবেশেই পাকিস্তান এই জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে কাশ্মীরে কলকাঠি নাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কিন্তু পরিস্থিতি এমনই যে তাদের মায়ানমারে ফেরানো এখন কার্যত অসম্ভব। গতকালই রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার জায়েদ রাদ আল হুসেন এই প্রসঙ্গে তীব্র সমালোচনা করেছেন ভারতের। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের প্রতিনিধি আজ সমালোচনার জবাবে বলেন,‘‘অন্য অনেক দেশের মতো ভারতও অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষত সেই অনুপ্রবেশকারীরা যদি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কাঁটা হয়ে দাঁড়ান। মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনারের বক্তব্যে আমরা বিস্মিত।’’ কিন্তু এই সমালোচনা নিঃসন্দেহে দিল্লির অস্বস্তি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস প্রশ্নে আগাগোড়া ভারতের পাশে দাঁড়ানো বাংলাদেশের হাসিনা সরকারও ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছে। দু’দিন আগেই নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোয়াজ্জেম আলি বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করে অনুরোধ জানিয়েছেন, বাংলাদেশে বসবাসকারী সাড়ে ছ’লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মায়ানমারে ফেরানোর জন্য সক্রিয় হোক ভারত। মোয়াজ্জেমের কথায়, ‘‘মায়ানমারের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরা সবাই বিমস্টেক গোষ্ঠীভুক্ত। ভারতের জোর দিয়ে মায়ানমারকে বলা উচিত সে দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে যাতে এঁরা নিজেদের দেশে ফিরতে পারেন।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:অতিথি অমিত, বিরসার ঘরে বসছে টাইলস

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, ভারতে থাকা শরণার্থীদেরই মায়ানমারে ফেরানোর অবস্থায় নেই দিল্লি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ ব্যাপারে সে দেশের নেত্রী ও সরকারের পরামর্শদাতা আউং সান সু চি-র সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, রোহিঙ্গা প্রশ্নে এতটুকুও আপস করার জায়গায় নেই সু চি। বিশেষ করে আরসা জঙ্গিরা রাখাইন প্রদেশে ৩০টি পুলিশ চৌকি ও একটি সেনা ছাউনিতে আক্রমণ করার পরে পরিস্থিতি প্রবল অগ্নিগর্ভ। আমেরিকা এ নিয়ে আজ মায়ানমারের সমালোচনা করলেও সু চি সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে চিন। ফলে বিষয়টি নিয়ে ভারতের অস্বস্তি আরও বেড়েছে।

রাখাইন প্রদেশের আর্থ সামাজিক উন্নতির জন্য নয়াদিল্লি পদক্ষেপ করবে বলে মায়ানমার নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। সেখানে উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করে পরিস্থিতিকে প্রশমিত করা এবং রোহিঙ্গা প্রশ্নে ভারতের ‘মানবিক মুখ’কে তুলে ধরাটাই লক্ষ্য দিল্লির। সেইসঙ্গে ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সেখানে পুর্নবাসনের চেষ্টাও এরপরে করা হবে। কিন্তু সেই আশা দুরাশা বলে ধারণা বিদেশ মন্ত্রকের একাংশের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement