কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ। —ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদী জামানায় ক্রমশ কমে আসছে সরকারি ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ। চাকরি কমছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে। বাড়ছে ঠিকাকর্মী। চাকরির বাজারের ওই দুর্দশার ছবিটি তুলে ধরে সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদী সরকারকে ধারাবাহিক আক্রমণ শানিয়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা ও রাহুল গান্ধী। আজ সেই অভিযোগের জবাব দিতে মাঠে নামেন কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ। তাঁর দাবি, “ইউপিএ সরকারের ১০ বছরের তুলনায় মোদী সরকারের দশ বছরে অনেক বেশি চাকরি তৈরি হয়েছে।” পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ইউপিএ-র দু’পর্বে যেখানে ছ’লক্ষ সরকারি চাকরি হয়েছিল সেখানে তাঁদের সময়ে গত ন’বছরে ৯ লক্ষ চাকরি সৃষ্টি হয়েছে। যদিও ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে দু’কোটি চাকরির। সেই প্রতিশ্রুতি কেন পালন হল না তা নিয়ে নীরব শাসক শিবির।
বিষয়বস্তুর মতোই ওই সাংবাদিক বৈঠক ঘিরেও পরে বিতর্ক বাধে। বিজেপি আজ চাকরি সৃষ্টির প্রশ্নে সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে সাংবাদিক বৈঠকে ডাকে জিতেন্দ্রকে। যেমনটি রোজ ডাকা হয় অন্য মন্ত্রীদের। কিন্তু সন্ধ্যায় জিতেন্দ্রের মন্ত্রক বিজেপির ডাকা ওই সাংবাদিক বৈঠকের বিষয়বস্তু ও ছবি দিয়ে প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করে। ছবিতে জিতেন্দ্রের পাশে বসে দেখা যায় বিজেপি মুখপাত্র কে কে শর্মাকে। রাজনৈতিক দলের সাংবাদিক বৈঠক কেন সরকারি প্রেস বিবৃতি দিয়ে প্রচার করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। কংগ্রেসের কটাক্ষ, সরকার ও দলের মঞ্চ যে এক নয়— সেই বোধটাই হারিয়েছেন বিজেপির মন্ত্রীরা।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ জিতেন্দ্র সিংহ দাবি করেন— সরকারি চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন স্টার্ট আপ সংস্থাগুলি বেসরকারি খাতে যে চাকরির সুযোগ তৈরি করছে, সেগুলিকেও পরিসংখ্যানের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। কিন্তু কেন বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি হওয়া চাকরিকে সরকারের সাফল্য হিসাবে দেখা হবে, তার ব্যাখ্যায় যাননি জিতেন্দ্র। বিরোধীদের কথায়, নতুন সরকারি চাকরি তৈরিতে সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট। উল্টে বিভিন্ন মন্ত্রকে কয়েক লক্ষ পদের বিলোপ করা হয়েছে এই ৯ বছরে। তাই মুখ রক্ষায় এখন সরকারের সম্বল বেসরকারি ক্ষেত্রের চাকরিও দেখানোর চেষ্টা। জিতেন্দ্রের দাবি, ইউপিএ সরকারের শেষে যেখানে দেশে ৩৫০টি স্টার্ট আপ ছিল, এখন তা বেড়ে এক লক্ষ হয়েছে— যা নতুন চাকরির বাজার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
সরকারের নিয়োগের মূলত তিনটি ক্ষেত্রে রয়েছে। প্রথমত, স্টাফ সিলেকশন কমিশন (এসএসসি)। জিতেন্দ্রের দাবি, ২০০৪ থেকে ১৩-র মধ্যে এসএসসি-র মাধ্যমে ২,০৭,৫৬৩ জনের নিয়োগ হয়েছিল। সেখানে গত ন’বছরে এসএসসি-এর মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন ৪,০০,৬৯১ জন। দ্বিতীয়ত, ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি)-এর মাধ্যমে ইউপিএ জামানায় চাকরি পেয়েছিলেন ৪৫,৪৩১ জন। সেখানে মোদী জামানায় ইউপিএসসি-তে নিয়োগ হয়েছে ৫০,৯০৬ জন। তৃতীয়ত, রেল। ইউপিএ জামানায় যেখানে রেলে নিয়োগপত্র পান ৩,৪৭,২৫১ জন, সেখানে গত ন’বছরে রেলে চাকরি পেয়েছেন ৪,৩০,৫৯৪ জন।