ভোটের লড়াই থেমে গিয়েছে। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে সংঘাতের পথে না গিয়ে সহযোগিতার বার্তা দিতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে বৈঠকে মোদীর নির্দেশ, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি তাদের লড়াই চালিয়ে যাক। কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্য ‘তু তু ম্যায় ম্যায়’ পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা উচিত। মোদী বৈঠকে আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি আসবেন। তার আগে পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত না করে দ্রুত তিস্তা চুক্তির জট ছাড়ানো দরকার। মমতা দিল্লি এলে মোদী তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। উত্তরবঙ্গের জলসঙ্কট মেটাতে বিভিন্ন জলাধার তৈরি ও এই সংক্রান্ত প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করা সরকারের অগ্রাধিকার। পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক প্যাকেজের বিষয়ে মমতার সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য জেটলিকে বলেছেন মোদী।
মমতাও তাঁর প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করেছেন, বিজেপির সঙ্গে মতাদর্শগত পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু সংসদের কাজে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি নীতি প্রণয়নে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা করবে। অক্টোবরে বিমস্টেক সম্মেলনে যোগ দিতে গোয়া আসবেন শেখ হাসিনা। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আলোচনা হবে। তার আগে মমতার সঙ্গে তিস্তা নিয়ে আলোচনা করতে চান প্রধানমন্ত্রী। সব কিছু ঠিকঠাক চললে অক্টোবরের পরে হাসিনার আবার ভারত সফর হবে। বাংলাদেশের নির্বাচন ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯-এর জানুয়ারি মাসের মধ্যে। তবে তিস্তা নিয়ে হাসিনা অপেক্ষা করতে চাইছেন না। ২৭ তারিখ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মমতা যেমন মোদীকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তেমনই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন হাসিনাকেও। তাঁরা আসুন না আসুন মমতার দিক থেকে এটা সৌজন্য। মমতার শপথের দিন প্রধানমন্ত্রী শিলং যাচ্ছেন আগরতলা-শিলচর-গুয়াহাটি-কলকাতা ট্রেন ফ্ল্যাগ অফ করতে। হয়তো তিনি কলকাতায় শপথ গ্রহণে হাজির হবেন না। অরুণ জেটলি বা পীযূষ গয়াল বা নিতিন গডকড়ীর মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পাঠিয়ে সংঘর্ষ বিরতির বার্তা দেবেন। মমতাও তাঁর সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক বিষয় নিয়ে জেটলি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে চাইবেন। জেটলি বলেন, ‘‘আমাদের সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে। আগেও মমতার আমন্ত্রণে কলকাতা গিয়েছি। রাজ্যের বিষয়গুলি নিয়ে আবার আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।’’ অন্য দিকে অমিত শাহের মন্তব্য, ‘‘রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকবে। কিন্তু মমতাদিদির জয়ের পরে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি।’’
জাতীয় রাজনীতিতে এর পরে উল্লেখযোগ্য ভোট উত্তরপ্রদেশে। তার আগে কংগ্রেস-বাম-নীতীশ-লালুরা মোদী-বিরোধী মঞ্চ গঠনে তৎপর। আবার মমতা, জয়ললিতা এমনকী নীতীশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে রাহুল গাঁধীর মঞ্চ গঠনের চেষ্টাকে ভণ্ডুল করে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী। বিজেপির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, বাম-কংগ্রেস জোট লোকসভা ভোট পর্যন্ত অক্ষত থাকলে মমতার পক্ষে সেই শিবিরে যোগ দেওয়া অসম্ভব। এই কারণেই জেটলি এবং রাজনাথ সিংহ প্রথম থেকেই মমতা সম্পর্কে নরম মনোভাব নেওয়ার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু অমিত শাহ এখনও মনে করেন, কংগ্রেস পাঁচমারি ঘোষণার পর থেকে জোট ধর্মের যুক্তিতে যে ভাবে আঞ্চলিক দলের লেজুড়বৃত্তি করছে তাতে বিহারে লাভ পেলেও পাঁচ রাজ্যের ভোটে তারা সফল হয়নি। বরং বিজেপির ‘একলা চলো রে’ নীতি কেরল, পশ্চিমবঙ্গে দলের ভোট বাড়াতে পেরেছে। বিজেপি-কে যদি হিন্দি বলয়ের বাইরেও বের হতে হয়, তা হলে এই পথে এগোনোই ভাল। তবে জেটলি, রাজনাথদের যুক্তি, অসমে জোট করেই লাভ হয়েছে বিজেপির। সেই কারণে এনডিএ-র সম্প্রসারণের কথাও ভাবতে হবে।
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এই বিতর্কের মধ্যেই মমতা সম্পর্কে মোদীর অবস্থান হল, লোকসভা ভোটের রণকৌশল পরে ঠিক হবে। কিন্তু সরকারি স্তরে সংঘর্ষের পরিস্থিতি না থাকাই উচিত।