আর্থিক ক্ষেত্র বেহাল, ‘অচ্ছে দিন’ আসেনি। অসহিষ্ণুতা আর দলিত নিগ্রহের অভিযোগ এমনিতেই চিন্তায় রেখেছে। সেনা অভিযানের সাফল্য নিয়ে তবু ঢাক পেটানো চলছিল। কিন্তু তার উপরে এসে পড়ল ভুয়ো সংঘর্ষ আর সেনা-আত্মহত্যার ঘটনা। একের পর এক ধাক্কার মোড় ঘোরাতে উত্তরপ্রদেশে অতিকায় রথযাত্রায় নামছে নরেন্দ্র মোদীর দল।
উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে ঠেকাতে ‘মহাজোট’-এর তোড়জোড় চলছে। এই পরিস্থিতিতে সাবেকি উন্নয়নের ইস্যুকে পুঁজি করেই রথযাত্রার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। কিন্তু দলীয় সূত্রের মতে, যেখানে যখন প্রয়োজন হবে, বাকি ইস্যুও তোলা হবে সুকৌশলে। সে কারণেই ঠাকুর রাজনাথ, ব্রাহ্মণ কলরাজ, ওবিসি ও হিন্দু মুখ উমা ভারতীকে সামনে আনা হয়েছে। অমিত শাহ এখনও পর্যন্ত কাউকেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে তুলে ধরার কথা ভাবছেন না। মুখে উন্নয়নের কথা বললেও আসলে জাত-পাত-ধর্মের ঘুঁটি দিয়েই রথযাত্রা সাজানো হয়েছে।
পরিবারের কোন্দল মাথায় নিয়েই আজ রথযাত্রায় বেরিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। পাল্টা রথের ঘোষণাও আজই করল বিজেপি। পরশু থেকে ১৭ হাজার কিলোমিটারের যাত্রা শুরু করবে দল। রাজ্যের চার প্রান্ত থেকে চারটি যাত্রা মিলবে লখনউতে, ২৪ ডিসেম্বর। এই যাত্রাপথে ৬টি বড় সভা করবেন মোদী নিজে। অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ, কলরাজ মিশ্র আর উমা ভারতী মিলিয়ে আরও তিরিশটি বড় সভা হবে।
দিল্লিতে যখন দু’দিন ধরে রাহুল গাঁধী আর অরবিন্দ কেজরীবাল দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, বিজেপি তখন এমন একটি ভাব করছে যেন কিছুই ঘটেনি। গোটা ঘটনাটি এড়িয়েই আজ দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশের রথযাত্রার ঘোষণা করা হল। প্রধানমন্ত্রী হাসিমুখে সাংবাদিকদের সঙ্গে নিজস্বীতে মাতলেন। রবিশঙ্কর প্রসাদ বললেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গলের খেলার মতো ঘটনা ঘটে। কখনও এসপি, কখনও বিএসপি জেতে। ক্ষমতায় এসে কেউই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না। এই দুর্নীতি, বেহাল আইন-শৃঙ্খলা, পরিবারবাদ থেকে মুক্তি দিতেই বিজেপির আসা দরকার।’’ স্লোগান ঠিক হয়েছে, ‘পূর্ণ বহুমত, সম্পূর্ণ বিকাশ, বিজেপি পর হ্যায় বিশ্বাস।’
রথযাত্রা সফল করতে ভিন রাজ্য থেকেও নেতাদের আনা হচ্ছে। বিজেপির জাতীয় সচিব পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিংহও অংশ নেবেন এই যাত্রায়। রাজ্যের ৪০৩ টি বিধানসভা কেন্দ্রে এই রথযাত্রায় সামিল করা হচ্ছে ১৫ হাজার যুবককে। দলিত, মহিলা, পিছিয়ে পড়া শ্রেণিদের নিয়ে পৃথক সম্মেলন হবে। কিন্তু মুলায়মের মহাজোটের ভাবনা কিছুটা হলেও ভাবাচ্ছে বিজেপিকে। রবিশঙ্কর মুখে অবশ্য বললেন, ‘’৮৯ সাল থেকে এই মহাজোট ভাঙে আবার গড়ে। দু’বছরের বেশি একসঙ্গে থাকতে পারে না। লোহিয়াবাদীরা আপাদমস্তক কংগ্রেস-বিরোধী রাজনীতি করে এখন কংগ্রেসের দ্বারস্থ হচ্ছে।’’
কিন্তু সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে যে সাফল্যের প্রচার করতে নেমেছিল বিজেপি, সেনার আত্মহত্যা কি তাতে এক রাশ জল ঢেলে দেয়নি? অমিত শাহ কিন্তু খুব দুশ্চিন্তায় নেই। তিনি আশা করছেন, আর একটি কোনও বড় ঘটনা সামনে এলেই সেনা-আত্মহত্যা ধামাচাপা পড়ে যাবে। ঠিক যেমন সেনা-আত্মহত্যার ঘটনা সামনে আসার পর মধ্যপ্রদেশে সিমির ৮ জনকে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। সুতরাং নিজেদের অবস্থানে অটল থেকেই দলের অঙ্ক সাজাতে চাইছেন বিজেপি সভাপতি। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেওছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ২০ লক্ষ লোক ওআরওপি-র সুবিধা পেয়েছেন। ফলে তাঁরা কোনও উচ্চবাচ্য করছেন না। এ ছাড়া ওআরওপি-র সঙ্গে যাঁদের কোনও লেনদেন নেই, তাঁদের উপর এর প্রভাব পড়বে বলেও মনে হয় না।’’