National News

সব আপত্তি উড়িয়ে মনমোহনের জামাইকেই গোয়েন্দা গ্রিডের প্রধান করলেন মোদী

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের জামাই, গোয়েন্দাকর্তা অশোক পট্টনায়েককেই জাতীয় গোয়েন্দা গ্রিডের প্রধান হিসাবে নির্বাচিত করলেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এই সংস্থার কর্তা হিসাবে অশোক পট্টনায়েকের নামের বিরোধিতা করেছিল।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৬ ১৭:৪২
Share:

মনমোহনের জামাই অশোক পট্টনায়েককেই (ছবি:ইনসেটে) বেছে নিলেন নরেন্দ্র মোদী।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের জামাই, গোয়েন্দাকর্তা অশোক পট্টনায়েককেই জাতীয় গোয়েন্দা গ্রিডের প্রধান হিসাবে নির্বাচিত করলেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এই সংস্থার কর্তা হিসাবে অশোক পট্টনায়েকের নামের বিরোধিতা করেছিল। মনমোহন সিংহের জমানায় চিদম্বরম যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখন এই সংস্থা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে এই সংস্থার চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার পদটি দীর্ঘ সময় ধরে খালি ছিল।

Advertisement

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিশেষ সচিব অশোক প্রসাদ গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এই পদের অতিরিক্ত দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। প্রসাদের অবসরগ্রহণের পরে এই পদটি শূন্য ছিল। রাজনাথ সিংহ চেয়েছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার অশোক প্রসাদকেই ওই পদের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হোক। বিশেষত ১৯৮৩ সালের ব্যাচের গোয়েন্দাকর্তা এই অশোক পট্টনায়েক হলেন মনমোহন সিংহের কন্যা দমনের স্বামী। তাই এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে পট্টনায়েককে দায়িত্ব দেওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন অনেক গোয়েন্দাকর্তা। গোয়েন্দাকর্তা তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাজে আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবার বিশেষ উৎসাহ রাখে। এই কারণে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর জামাতার নামে অনেকেই আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গোটা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। তিনি গুজরাত ক্যাডারের এই ওড়িয়া অফিসার সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এই সংস্থাটির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নজরদারি— এ সবই হল ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স গ্রিডের কাজ। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, অশোক প্রসাদের চেয়ে পট্টনায়েক এই কাজে অনেক বেশি যোগ্য।

আরও পড়ুন: মোদীকে চাপ দিতে উনায় মমতার সাংসদরা

Advertisement

চিদম্বরম যখন এই সংস্থা তৈরি করেন তখন তৎকালীন গোয়েন্দাপ্রধান নেহচল সান্ধু এই ন্যাট গ্রিড গঠনের ঘোরতর বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, এই গ্রিড গঠনের অর্থ হচ্ছে আরও একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে সামন্তরাল ভাবে গড়ে তোলা। এতে দেশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা আইবি-র ভূমিকা লঘু হয়ে যাবে। যার পরিবর্তে ন্যাট গ্রিড একটি পাল্টা সংস্থায় পরিণত হবে। মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি ২০১১ সালে এই ন্যাট গ্রিডের জন্য ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রায় ৭০ জনকে নিয়োগও করা হয়। যদিও নানা বিতর্কে ন্যাট গ্রিডের আর কাজ করা শুরু হয়নি। এর মধ্যে চিদম্বরম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দায়িত্ব থেকে বিদায় নেন ২০১২ সালের জুলাই মাসে।

মনমোহনের জামাতাকে ন্যাট গ্রিডের প্রধান করে দেওয়ায় অবশ্য স্বরষ্ট্রমন্ত্রকের কর্তারা অন্য একটি ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তাঁরা বলেছেন, বর্তমান গোয়েন্দা প্রধান দীনেশ্বর শর্মা অবসর নিচ্ছেন আগামী ৩১ অক্টোবর। যখন নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসেন তখন গোয়েন্দা প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন আসিফ ইব্রাহিম। আসিফ ছিলেন ভারতের প্রথম মুসলিম গোয়েন্দা প্রধান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বলছে, ২০১৮ সালে পদমর্যদা অনুযায়ী আইবি প্রধান হওয়ার দৌড়ে থাকতেন পট্টনায়েক। নিন্দুকেরা অনেকই বলেছেন, পট্টনায়েক যাতে আইবি প্রধান না হতে পারেন তার জন্যই এ ভাবে তাঁকে ন্যাট গ্রিডের দায়িত্ব দিয়ে মূল দৌড় থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় এই যুক্তি মানতে রাজি নয়। তারা বলছে, গোটা পৃথিবীতে নতুন পরিভাষায় সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে। ভারতেও ক্রমশ ডালপালা বিস্তার করছে আইএস। এই পরিস্থিতিতে সরকারের শীর্ষকর্তাদের বিশ্বস্ত না হলে এত গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দেওয়া হত না। ভারতের সমস্ত গোয়েন্দাবাহিনীর যত ডাটাবেস আছে, ন্যাট গ্রিড তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা সমন্বয় করে থাকে। ২০০৮ সালে মুম্বইতে সন্ত্রাসবাদী হানার পর থেকেই এই সংস্থা গড়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল। শেষে ২০১৪-য় এই গ্রিড তৈরি হয়। সমস্ত সরকারি সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কর সংক্রান্ত নথি, ভিসা ও ইমিগ্রেশনের রিপোর্ট, আইবি, র’, আর্থিক দুর্নীতি দমন শাখা— এই ধরনের মোট ১১টি সংস্থার মধ্যে যোগাযোগ ও পাশাপাশি কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের দায়িত্ব থাকে এদের হাতে।

প্রথম ন্যাটগ্রিডের সিইও হয়েছিলেন রঘু রমন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সরকার আসার পর থেকে এই পদটি খালি ছিল। এখন সিইও পদে অশোক পট্টনায়েকের আগমন একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত বলেই দাবি করছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement