মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থানের পুর নির্বাচনে ভাল ফলের পরে কর্নাটকের বেঙ্গালুরু পুরসভাও দখল করে একেবারে হ্যাটট্রিক করে ফেলল বিজেপি। সংসদে সংস্কারমুখী বিল পাশ থেকে আসন্ন বিহার ভোটে প্রতিপক্ষকে পাল্টা আক্রমণ শানাতে এখন এই হ্যাটট্রিককেই পুঁজি করছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা।
পুরভোটের ফল আগে এতটা গুরুত্ব পেত না। কিন্তু সুষমা স্বরাজ, শিবরাজ সিংহ চৌহান, বসুন্ধরা রাজের ইস্তফার দাবিতে বিরোধীরা একজোট হয়ে সংসদের গোটা একটা অধিবেশন ভেস্তে দেওয়ার পর এই ছোট ভোটের ফলইও মোদী-শাহ জুটির কাছে অক্সিজেন হয়ে উঠেছে। আর তাই আজ বেঙ্গালুরুর পুরভোটের ফল ঘোষণা-মাত্র ‘উন্নয়ন ও সুশসানের জয়’ বলে টুইট করতে সময় নেননি নরেন্দ্র মোদী। অমিত শাহও পুদুচেরিতে বসে সনিয়া-রাহুল গাঁধীকে উন্নয়ন-বিরোধী অ্যাখ্যা দিয়ে একটি সুদীর্ঘ বিবৃতি লিখে ফেলেছেন।
বিজেপি নেতারা বলছেন, মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থানের থেকেও বেঙ্গালুরুর জয় বড়। কারণ সাধারণত রাজ্যে যে দল ক্ষমতায় থাকে, স্থানীয় নির্বাচনে তাদেরই দাপট দেখা যায়। মধ্যপ্রদেশেও তাই হয়েছে। আর রাজস্থানে দেখা গিয়েছে, গোটা রাজ্যে জিতলেও বসুন্ধরা ধাক্কা খেয়েছেন নিজের তল্লাটে। কিন্তু দক্ষিণের রাজ্য কর্নাটকে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও রাজধানী শহরের দখল ধরে রাখল বিজেপি। ইয়েদুরাপ্পার হাত ধরে দক্ষিণের এই রাজ্যে প্রথম ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। তিনি দল ছাড়ার পর সরকার চলে যায় কংগ্রেসের দখলে। কিন্তু পুরসভাটি বিজেপির দখলেই ছিল। আজকের ফলে দেখা যাচ্ছে— গত বারের থেকে ১১টি কম হলেও ১৯৮টি আসনের মধ্যে ১০০টিই বিজেপি জিতেছে। কংগ্রেস গত বারের ৬৬টি আসনের সঙ্গে এ বার ১০টি নতুন আসন জুড়তে পারলেও জয়ের থেকে তা অনেক কম। দেবগৌড়া-কুমারস্বামীর জেডি(ইউ) পেয়েছে ১৪টি আসন।
ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা বলছেন, রাজ্যের ‘বহিরাগত’ মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে প্রদেশ নেতাদের কোন্দলের খেসারতই দিতে হল দলকে। বেঙ্গালুরুতে হাজারও নাগরিক সমস্যা, তা নিয়ে মানুষের ক্ষোভও রয়েছে। এক ঝাঁক তরুণ পেশাদার তাদের হয়ে ময়দানে নামায় ভাল সাড়াও পেয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু তার পরেও ফল বদলাল না।
কিন্তু বিজেপি সূত্রে খবর, সে দলের মধ্যেও কোন্দল নেহাৎ কম নয়। পুরভোটের ভার দেওয়া হয়েছিল ইয়েদুরাপ্পার উপরে। অথচ আজকের ফলের পর তাঁকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। দলে ইয়েদুরাপ্পার প্রতিদ্বন্দ্বী অনন্ত কুমাররাই জয়ের কৃতিত্ব নিচ্ছেন। দিল্লিতে বেঙ্কাইয়া নায়ডুও এই জয়ের কৃতিত্ব যাঁদের দিচ্ছেন, সেই তালিকায় ইয়েদুরাপ্পা নেই।
বিজেপির এক নেতার ব্যাখ্যা— কোন্দল সব দলের মধ্যেই রয়েছে। আসল বিষয় হল, কংগ্রেস এত দিন ধরে সংসদ অচল রেখে বিজেপির বিরুদ্ধে যে হাওয়া তৈরি করতে চাইছিল, বাস্তবে সেটাই বুমেরাং হয়েছে। কংগ্রেসের নেতিবাচক রাজনীতির জবাব দিয়েছেন মানুষ। তাঁর দাবি, এই জয়ের প্রভাব বিহার ভোটেও পড়বে।