National News

গো-হত্যার গুজবে উত্তপ্ত বুলন্দশহর, বিক্ষোভের বলি ইনস্পেক্টর-সহ ২

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বুলন্দশহরের স্যানা মহকুমা এলাকায় মাহু গ্রামের বাইরে জঙ্গল লাগোয়া একটি মাঠে প্রায় ২৫টি গরুর মাংস পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে বলে গুজব রটে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৯:৫৮
Share:

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত পুলিশ ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিংহ। ছবি: পিটিআই।

অবরোধ-বিক্ষোভ-প্রতিবাদ, পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর-গুলি, পাল্টা পুলিশের গুলি, থানায় ভাঙচুর, আগুন ধরানো। গো-হত্যার গুজবে সোমবার সাতসকালে এ ভাবেই উত্তপ্ত হল উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলা। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে মৃত্যু হল এক পুলিশ আধিকারিক-সহ দু’জনের। গুরুতর জখম আরও দুই পুলিশকর্মী।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বুলন্দশহরের স্যানা মহকুমা এলাকায় মাহু গ্রামের বাইরে জঙ্গল লাগোয়া একটি মাঠে প্রায় ২৫টি গরুর মাংস পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে বলে গুজব রটে। গো-হত্যার প্রতিবাদে সকাল ১১টা নাগাদ ওই এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। ট্র্যাক্টর-ট্রলি ভরে ওই মাংস নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন এলাকার প্রায় চারশো জন। খবর পেয়ে অবরোধ সরাতে সেখানে পৌঁছন ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিংহ-সহ পুলিশকর্মীরা।

বুলন্দশহরের জেলাশাসক অনুজ কুমার ঝা জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের অবরোধ তুলতে অনুরোধ করায় কোনও কাজ হয়নি। বরং ওই অবরোধকারীদের মধ্যে থেকে দুষ্কৃতীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে। এমনকি, এলাকার চিংরাবটি পুলিশ ফাঁড়িতে চড়াও হয় তারা। থানায় ভাঙচুর চালানো ছাড়াও একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া দেয়। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকে ইট-পাথর ছোড়া হয়। এমনকি পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিও চলে।

Advertisement

(আজকের তারিখে গুরুত্বপূর্ণ কী কী ঘটেছিল অতীতে, তারই কয়েক ঝলক দেখতে ক্লিক করুন— ফিরে দেখা এই দিন।)

গো-হত্যার গুজবে তাণ্ডব বুলন্দশহরে। ছবি: পিটিআই।

বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শূন্যে গুলি চালায় পুলিশ। গুলিতে জখম হন সুমিত নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরের আঘাতে গুরুতর জখম হন ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিংহ। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎ়সকেরা। অন্য দিকে, সুমিতকে গুরুতর আহত অবস্থায় মেরঠের এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে মারা যান তিনি। নিহত সুবোধ এক সময়ে গোরক্ষকদের হাতে দাদরির মহম্মদ আকলাখের খুনের ঘটনার তদন্তকারী অফিসার ছিলেন। পরে অবশ্য তাঁকে সরানো হয়। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বিক্ষোভকারীদের গুলিতে মারা যান সুবোধ। পুলিশ ভ্যান-সহ বেশ কিছু গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটির সদস্যরা। আশপাশের এলাকা থেকে বিরাট পুলিশ বাহিনী আনা হলেও রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

আরও পড়ুন: ‘আমরাও তো হিন্দু, তা-ও কেন জায়গা নেই মোদীর ভারতে?’

আরও পড়ুন: যৌন নির্যাতন করে তরুণীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিল অভিযুক্তরা

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকেরা। ছবি: পিটিআই।

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই এলাকায় ৫ কোম্পানি র‌্যাফ-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান জেলাশাসক-সহ পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকেরা। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) আনন্দ কুমার জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে এলাকা উত্তপ্ত হলেও এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেরয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, সংঘর্ষ চলাকালীন কী ভাবে সুমিতের গায়ে গুলি এসে লাগল, তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে। গোটা ঘটনায় বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘ভারত আমার পিতৃভূমি, পালাব না’, যোগীকে পাল্টা ওয়েইসির

উত্তরপ্রদেশের এই পরিস্থিতির নিন্দা করে সরব হয়েছে সব ক’টি বিরোধী দল। তাদের বক্তব্য, একের পর এক জায়গার নাম পাল্টে হিন্দুত্বের জিগির তুলছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। এতে ধর্মীয় উন্মাদনা বাড়ছে। পাশাপাশি, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ক্রমশ ভেঙে পড়ছে। খুন-ধর্ষণ-ধর্মীয় গোলমালের ঘটনা বেড়েই চলেছে।বুলন্দশহরে সংখ্যালঘুর সম্প্রদায়ের তিন দিনের একটি ধর্মসভা শুরু হয়েছে। এই ঘটনার ফলে যাতে কোনও ভাবে উত্তেজনা না ছড়ায় সে দিকেও লক্ষ্য রাখছে জেলা প্রশাসন।

(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement