টিপু সুলতান। — ফাইল চিত্র।
মাইসুরু বিমানবন্দরের নাম রাখা হোক টিপু সুলতানের নামে! কর্নাটকের কংগ্রেসের বিধায়ক এই প্রস্তাব দিতেই ফের তরজা শুরু বিজেপির সঙ্গে। নামকরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজ্যে বিজেপির বিধায়কেরা। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে এই বিষয়টিকে ইস্যু করতে চাইছে বিজেপি বলে মনে করছেন রাজনীতিকদের একাংশ। অনেকে মনে করছেন, ‘কর্নাটকের নায়ক’ টিপুকে অস্ত্র করে ভোটে লাভ করতে চাইছে কংগ্রেসও। যেমনটা হয়েছিল কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনে।
হুব্বালি-ধারওয়াড় পূর্বের বিধায়ক প্রসাদ আব্বায়া কর্নাটক বিধানসভায় মাইসুরু বিমানবন্দরের নতুন নামকরণের প্রস্তাব দেন। এটি এখন মন্দাকাল্লি বিমানবন্দর নামে পরিচিত। প্রসাদের দাবি, অষ্টাদশ শতকের শাসক টিপুর নামে রাখা হোক এই বিমানবন্দরের নাম।
কর্নাটকে বিধানসভা ভোটের আগে এই টিপু সুলতানকেই হাতিয়ার করেই মেরুকরণের রাজনীতি শুরু করেছিল বিজেপি। যদিও আখেরে চলতি বছরের সেই ভোটে খুব একটা লাভ করতে পারেনি তারা। রাজ্যে ২২৪টির মধ্যে ৬৬টি আসনে জিতেছে।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছিল টিপুর। রাজধানী শ্রীরঙ্গাপত্তনম রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ দেন। এই টিপুকে নিয়ে কংগ্রেস এবং বিজেপির বিরোধ শুরু সেই ২০১৬ সাল থেকে। তখন ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেসের সিদ্দারামাইয়া সরকার। সে বছর ১০ নভেম্বর টিপু সুলতানের জন্মদিবস পালনের ডাক দেয় তারা। বিরোধিতা করে বিজেপি। সেই থেকে টিপুকে অস্ত্র করে মেরুকরণের রাজনীতি শুরু করে বিজেপি। অমিত শাহ সরাসরি ওই পদক্ষেপকে ‘মুসলিম তোষণ’ বলেছিলেন। বিজেপির চোখে, ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শহিদ টিপু ‘হিন্দু-হত্যাকারী’। হিন্দুত্ববাদীদের অভিযোগ, শ্রীরঙ্গপত্তনমে টিপুর মসজিদ আদতে মন্দির ভেঙে গড়া হয়েছে। ২০১৮ সালে বিধানসভা ভোটের আগে টিপুর ২১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘মহীশূর’-এর প্রাক্তন শাসককে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য কুর্নিশ জানায় পাকিস্তান সরকার। বিজেপি প্রচারে নামে, ‘কংগ্রেসের নায়ককে’ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে পাকিস্তান।
এখানেই থামেনি বিজেপি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে কর্নাটকের বিজেপি সভাপতি তথা সাংসদ নলিনকুমার কাতিল বলেছিলেন, ‘‘কর্নাটকের পবিত্র মাটিতে টিপু সুলতানের অনুগামীদের বেঁচে থাকাই উচিত নয়!’’ সেই নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। এর পর টিপুর মৃত্যু নিয়েও তৈরি হয় বিতর্ক। ইতিহাস বলছে, ১৭৯২ সালে তৃতীয় ইঙ্গ-মাইসুরু যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছিলেন টিপু। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সিটি রবি এবং রাজ্যের দুই মন্ত্রী অশ্বথ নারায়ণ ও গোপালাইয়া দাবি করেন, টিপুকে খুন করেছিলেন উরি এবং নাঞ্জে নামে দুই ভোক্কালিগা জনগোষ্ঠীর বিদ্রোহী। ‘টিপু নিজকানাসুগালু’ নামে একটি উপকথা-নির্ভর নাটকের প্রসঙ্গ তুলে এই দাবি করেছিলেন তাঁরা। ওই তিন নেতাও ভোক্কালিগা জনগোষ্ঠীর। কর্নাটকের ১৬ শতাংশ ভোটার এই জনগোষ্ঠীর। যদিও আখেরে দেখা গিয়েছিল তারা বিজেপিকে ভোট দেয়নি।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও টিপুকে নিয়ে আক্রমণ করেছিলেন। আঙুল তুলেছিলেন কংগ্রেসের দিকে। রাজনীতিকদের একাংশ মনে করে, এই মেরুকরণের রাজনীতি কাজে আসেনি বিজেপির। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হন সিদ্দারামাইয়া। তিনি সম্প্রতি বলেন, ‘আত্মমর্যাদার জন্য লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা’ হলেন টিপু। মনে করা হচ্ছে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের এই টিপু-ইস্যুকেই খুঁচিয়ে তুলতে চাইছে কংগ্রেস এবং বিজেপি। নিজেদের মতো ফায়দা লুটতে চাইছে। শেষ পর্যন্ত লাভবান হবে কোন দল, বলবে সময়।