ফাইল চিত্র।
হোয়াটসঅ্যাপের দু’টি মেসেজ-এর মাত্র কয়েকটি লাইন হয়তো সব কথা বলে দিয়েছিল। জানা গিয়েছিল, নিছক অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত নন, রীতিমতো উচ্চশিক্ষিত, বিত্তবান পরিবারের ছেলেরা যোগ দিয়েছে আরও কয়েক জন ধর্মোন্মাদের সঙ্গে! পেশাগত জগতে সফল হওয়ার থেকেও তাদের প্রাধান্যের তালিকার পয়ল নম্বরে এখন কট্টর জঙ্গি সংগঠনের নাম। একইসঙ্গে এই মেসেজ উচ্চারণ করেছে হয়তো আরও এক অমোঘ বার্তা, গুলশন ও কিশোরগঞ্জের ঘটনাই শেষ নয়, পর্দার আড়ালে অপেক্ষা করছে আরও ভয়াবহ কোনও ঘটনা।
কেন এই আশঙ্কা?
মধ্য এশিয়ায় ধর্মবিষয়ক পড়াশোনা করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন কেরলের কাসারগড় এবং পালাক্কড় জেলার ১৫ জন যুবক। গত এক মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগাযোগ নেই। যাঁরা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই উচ্চশিক্ষিত— কেউ ইঞ্জিনিয়ার, তো কেউ এমবিএ পাশ করা। পরিবারের সন্দেহ, জঙ্গি সংগঠন আইএস-এ যোগ দিয়েছেন তাঁরা। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ঘটনায় দেখা গিয়েছে, দক্ষিণের রাজ্যগুলি, বিশেষ করে তামিলনাড়ু এবং কেরল থেকে অল্পবয়সী ছেলেরা আইএস-এ যোগ দিতে সিরিয়ায় পাড়ি দেওয়ার উদ্যোগী হয়েছে। কিন্তু ধরা পড়ে গিয়েছে। হোয়াটস্অ্যাপ মেসেজ ওই যুবকদের আইএস-এ যোগ দেওয়ার সন্দেহকে আরও দৃঢ় করেছে। কাসারগড় জেলার পঞ্চায়েত সদস্য জানান, নিখোঁজ হয়ে যাওয়া যুবকদের মধ্য থেকে দু’জনের পরিবারে হোয়াটস্অ্যাপে একটি মেসেজ আসে। তার মধ্যে একটিতে লেখা ছিল— “আমরা ফিরে আসছি না। আমরা এখন ঐশ্বরিক শাসনের অধীনে। আমাদের সঙ্গে এসো।” অন্য মেসেজে লেখা ছিল— “আইএস-এ যোগ দিয়েছি আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য।” এই দু’টি মেসেজের ভিত্তিতেই পরিবারের আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
আইএস ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে নিজেদের নেটওয়ার্ক শক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষিত তরুণদের বেছে বেছে মগজধোলাই করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেরল থেকে এ ভাবে ১৫ জনের এক সঙ্গে উধাও হয়ে যাওয়া এবং হোয়াট্সঅ্যাপের মেসেজ প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। বিষয়টি ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর নজরে এনেছে দুই জেলা প্রশাসন। পুলিশকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিখোঁজ হয়ে যাওয়া হাফেজউদ্দিনের বাবা হাকিম বলেন,
নিখোঁজদের মধ্যে এক জন চিকিত্সক দম্পতিও রয়েছেন। লক্ষদ্বীপে যাওয়ার নাম করে তাঁরা দু’জনে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন।
কেরলের হাকিমের এই কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে আর এক বাবা, ঢাকার ইমতিয়াজ বাবুলের কথাও। ঢাকার গুলশনে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় জড়িত বলে সন্দেহ রোহানের বাবা তিনি। বাংলাদেশের শাসক দল আওয়ামি লিগের নেতাও বটে। রোহানের নাম সামনে আসার পরে তিনিও জানিয়েছিলেন, নিখোঁজ রোহানের সন্ধানে তিনিও থানা-পুলিশ সমেত নানা মহলে ঘোরাঘুরি করেছেন। দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনিও বলেছেন, ‘‘ব্যর্থ পিতা আমি। কিন্তু আমার ভিতু ছেলের হাতে রাইফেল তুলে দিয়ে যারা তাকে জঙ্গি বানিয়েছে, তাদের খুঁজে বার করুন। সকলের কাছে এই আমার আর্জি। না হলে বাংলাদেশ বাঁচবে না।’’
আরশোলা দেখলেও নাকি ভয় পেত ঢাকার রোহান! কেরলের হাফিজুদ্দিনও কি পেত না?
আরও খবর...