National News

প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে মহিলা মন্ত্রীর ‘গায়ে হাত’! প্রতিবাদে বামেদের মিছিল

অন্য দিকে যাঁকে ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত মঙ্গলবার তিনিও প্রথম মুখ খুলেছেন। বিজেপির অবস্থানের প্রতিফলনই শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

আগরতলা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:৫৮
Share:

এ ভাবেই মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমার গায়ে হাত দেন মন্ত্রী মনোজকান্তি দেব। —ফাইল চিত্র

প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে মহিলা মন্ত্রীর কোমরে অন্য মন্ত্রীর হাত দেওয়া নিয়ে তপ্ত ত্রিপুরার রাজনীতি। অভিযুক্ত মন্ত্রী মনোজকান্তি দেবকে বরখাস্ত এবং গ্রেফতারের দাবি আগেই জানিয়েছিল বামেরা। এ এবার পথে নেমে একই দাবি জানাল বামেদের শাখা সংগঠন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। অবিলম্বে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভানেত্রী তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রমা দাস। পাশাপাশি আন্দোলনের প্রস্ততি নিচ্ছে কয়েকটি আদিবাসী সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলও। যদিও বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, মহিলার ‘চরিত্রহনন’-এর চেষ্টা করে নোংরা রাজনীতি করছে বামেরা।

Advertisement

অন্য দিকে যাঁকে ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত মঙ্গলবার তিনিও প্রথম মুখ খুলেছেন। বিজেপির অবস্থানের প্রতিফলনই শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘গত ৯ ফেব্রুয়ারির ঘটনা নিয়ে আমার সঙ্গে মন্ত্রী মনোজকান্তি দেবকে জড়িয়ে যে ধরনের প্রচার চলছে, তাতে আমি লজ্জিত। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বাম-সহ বিরোধীরা ত্রিপুরার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতেই এই ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।’’ এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন সান্ত্বনাদেবী।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি আগরতলায় একটি কর্মসূচিতে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অনুষ্ঠানের মঞ্চে ছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব-সহ অন্যান্য দফতরের মন্ত্রীরাও। তার মধ্যেই ছিলেন সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা। আর ঠিক তার পিছনেই গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলেন খাদ্য, যুব এবং ক্রীড়ামন্ত্রী মনোজকান্তি দেব। সেখানেই দেখা যায়, পিছন থেকে সান্ত্বনা চাকমার কোমরে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সান্ত্বনাদেবী হাত সরিয়ে দিয়েছেন, সেই ছবিও ধরা পড়ে। এই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই ভাইরাল হয়ে যায়। তৈরি হয় তীব্র বিতর্ক। অশোভন ভাবে মহিলা মন্ত্রীর গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করায় তাঁর সম্ভ্রমহানি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সরব হয় নেটিজেনরা।

Advertisement

এই ঘটনার প্রতিবাদেই এ দিন আগরতলায় মিছিলে শামিল হন বাম নেত্রী-কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, যে রাজ্যে এক জন মহিলা মন্ত্রীর পক্ষে নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করা দায় হয়, এবং অন্য এক জন মন্ত্রীই এমন কাণ্ড ঘটান, সেখানে সাধারণ মহিলারা কী ভাবে নিরাপদে থাকবেন। রমা দাস বলেন, ‘‘অত্যন্ত অশালীন আচরণ করেছেন মনোজকান্তি দেব। যা একেবারে অকল্পনীয়। আমরা এই ঘটনায় ধিক্কার জানাচ্ছি। এই সরকার আসার পর থেকেই রাজ্যে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে।’’ মিছিলে অনান্যদের মধ্যে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্যা পাঞ্চালী ভট্টাচার্য, কৃষ্ণা রক্ষিত, ছায়া বলের মতো নেত্রীরাও উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: রাফাল চুক্তির আগেই ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন অনিল অম্বানী, রিপোর্ট

বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি আদিবাসী সমাজও। আদিবাসীদের একটি সংগঠন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই তাঁরা সংগঠিত প্রতিবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কয়েকটি আদিবাসী রাজনৈতিক দলও বিক্ষোভ-আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করতে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করছেন বলে ওই দলগুলি সূত্রে খবর মিলেছে। এ নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনেও কিছুটা উদ্বেগ ছড়িয়েছে। কড়া নজর রাখা হচ্ছে পরিস্থিতির উপর।

আরও পড়ুন: #মিটু নিয়ে প্রশ্নোত্তর

যেহেতু দু’জনই শাসক দলের মন্ত্রী, বিতর্কে যোগ হয় রাজনৈতিক মাত্রাও। ত্রিপুরা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিজন ধর আগেই বলেছিলেন, ‘‘মনোজকান্তি দেবকে অবিলম্বে বরখাস্ত করতে হবে। যে মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন, এমন এক প্রকাশ্যে সমাবেশে চূড়ান্ত অশোভন ভাবে মহিলা সহকর্মীর গায়ে হাত দেওয়ার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করা করতে হবে।’’ তাঁর বক্তব্য, মন্ত্রী মনোজকান্তি দেব জনসমক্ষে মন্ত্রিসভার একমাত্র মহিলা সদস্যের সম্মান, পবিত্রতা ও সম্ভ্রমহানি করেছেন।

আরও পড়ুন: সনিয়া-কন্যার জন্য হিসেব এলোমেলো মায়া-অখিলেশের

তবে এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি অভিযুক্ত মন্ত্রী। সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’

উল্টো দিকে বামেদের বিরুদ্ধে পাল্টা ঘৃন্য রাজনীতির অভিযোগ তুলেছে শাসক বিজেপি-ও। দলের মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা সংবাদ মাধ্যম বা অন্য কোথাও কোনও অভিযোগ করেননি। কিন্তু বামেরা অভিযোগ তুলছে কেন? ওদের হাতে সরকারের বিরুদ্ধে কোনও ইস্যু নেই। একটি মিথ্যে এবং সামান্য ঘটনাকে ঘিরে এক মহিলা মন্ত্রীর চরিত্র হননের চেষ্টা করছে বামেরা। এটা নোংরা রাজনীতি’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement