বায়ুসেনার বিমান ইউক্রেনে আটকে থাকা পড়ুয়ারা ছবি পিটিআই।
ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান ইউক্রেনে আটকে থাকা পড়ুয়াদের নিয়ে দিল্লিতে পৌঁছেছে। সেই বিমানে উঠে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী অজয় ভট্ট ‘মাননীয় মোদীজি জিন্দাবাদ’ বলে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন। বায়ুসেনার বিমানে এই ঘটনার পরে আজ অবসরপ্রাপ্ত ফৌজি অফিসারেরা ঘটনার নিন্দা ও সমালোচনায় মুখর।
বায়ুসেনার প্রাক্তন এয়ার ভাইস মার্শাল মনমোহন বাহাদুরের বক্তব্য, “বায়ুসেনার বিমানে এ সব কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।” তিনি এ বিষয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং বায়ুসেনা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনান্ট জেনারেল সতীশ দুয়ারও মত, “এ সব চলতে পারে না।” অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল যশ মোরের বক্তব্য, “এর যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।” তাঁর বক্তব্য, সামরিক বাহিনীতে কোনও ব্যক্তিকে নায়কের স্থানে বসিয়ে পুজোর জায়গা নেই।
ইউক্রেনে ভারতীয়দের উদ্ধারে ‘অপারেশন গঙ্গা’ শুরু হওয়ার পর থেকে মোদী সরকারের মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর পুজো করা শুরু করেছেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ। ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে পড়ুয়াদের নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো-র বিমান ভারতে পৌঁছলেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা পালা করে বিমানে উঠে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্যই পড়ুয়াদের উদ্ধার করা সম্ভব হল।
নরেন্দ্র মোদী নিজেও উত্তরপ্রদেশের প্রচারে গিয়ে ‘অপারেশন গঙ্গা’-র প্রচার করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি ইউক্রেন থেকে ফেরা উত্তরপ্রদেশের পড়ুয়াদের সঙ্গে বারাণসীতে কথাবার্তাও বলেন। শুক্রবারও তিনি উত্তরপ্রদেশের জনসভায় বলেছেন, সব ভারতীয়কে ফেরানো হবে। উদ্ধার অভিযানের নাম ‘অপারেশন গঙ্গা’ রাখার পরেই বিরোধীরা বলেছিলেন, গঙ্গার নামে উত্তরপ্রদেশের মানুষের ভাবাবেগ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আজ প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, “মা গঙ্গার নামে যে অভিযানের নামকরণ করা হয়েছে, তা কোনও ভাবেই ব্যর্থ হতে পারে না।”
উদ্ধার অভিযানে বাণিজ্যিক বিমানের পাশাপাশি বায়ুসেনার গ্লোবমাস্টার বিমান কাজে লাগানো শুরু হয়। বৃহস্পতিবার একটি বিমান দিল্লিতে পৌঁছলে মন্ত্রী অজয় ভট্ট সেই বিমানে উঠে যান। তিনি বলেন, “মোদীজির কৃপাতেই জীবন বেঁচে গিয়েছে। মোদীজির কৃপাতেই সব ঠিক হয়ে যাবে। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্ব না থাকলে, জানি না আজ কী পরিস্থিতি হত। যে ভাবে বাবা-মা সন্তানের খেয়াল রাখেন, সে ভাবে
মোদীজি বাবার মতো আমাদের সকলের বিষয়ে চিন্তা করেন।” এর পরেই তিনি ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলে জয়ধ্বনি দেন। তাতে পড়ুয়ারা গলা মেলান। মন্ত্রী তার পরে ‘মাননীয় মোদীজি জিন্দাবাদ’ বলে যখন স্লোগান তোলেন, অধিকাংশ পড়ুয়াই গলা মেলাননি।