মাওবাদী হামলার সময় মাকে বার্তা দিয়ে ভিডিয়ো রেকর্ডিং করছেন দূরদর্শনের সাংবাদিক মোরমুক্ত শর্মা।
ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসছিল তাঁদের দিকে। চোখের সামনে দেখতে পেলেন তাঁরই সহকর্মী গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। মাঝখানে তাঁরা, আর চারপাশে তখন প্রায় আড়াইশো মাওবাদী ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে।
মঙ্গলবার ছত্তীসগঢ়ের দন্তেওয়াড়ায় নির্বাচনের খবর ‘কভার’ করতে দিল্লি থেকে ছত্তীসগঢ় এসেছিলেন দূরদর্শনের তিন কর্মী। ধীরজ কুমার, অচ্যুতানন্দ সাউ এবং মোরমুক্ত শর্মা। এঁদের মধ্যে ধীরজ সাংবাদিক এবং মোরমুক্ত লাইট অ্যাসিস্ট্যান্ট। সাংবাদিকদের দলটির আগেই মোটরবাইক করে এলাকা টহল দিচ্ছিল স্থানীয় পুলিশের বাহিনী। সকাল এগারোটা নাগাদ সেই বাহিনীর উপরই হামলা চালায় মাওবাদীরা। বাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসে। তাতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় চিত্র সাংবাদিক অচ্যুতানন্দ শাহুর। নিহত হন আরও দুই পুলিশকর্মী।
চোখের সামনেই সহকর্মীকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখে প্রথমে খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন দূরদর্শনের লাইট অ্যাসিস্ট্যান্ট মোরমুক্ত শর্মা। তাঁর মৃত্যুও যে নিশ্চিত তা আশঙ্কা জঙ্গল থেকেই মায়ের উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়ে ভিডিয়ো রেকর্ডিং করেন। ভিডিয়োতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “মা আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। মাওবাদীদের হামলার মুখে পড়েছি। হয়ত এই হামলায় আমার মৃত্যুও হতে পারে। জানি না কেন মৃত্যুকে সামনে দেখে ভয় লাগছে না।”মোরমুক্তের সেই ভিডিয়ো এখন ভাইরাল।
দেখুন ভিডিয়ো
আরও পড়ুন: ছত্তীসগঢ়ে ফের মাওবাদী হামলা, ক্যামেরাম্যান-সহ হত ৩
চারপাশে তখন শুধু গুলির আওয়াজ। পুলিশ ও মাওবাদীদের মধ্যে তুমুল গুলির লড়াই চলছিল। মোরমুক্তকে দেখা যায় মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে রয়েছেন। ফোনের ভিডিয়ো চালু করে ফিসফিস করে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “চারদিকে মাওবাদীরা ঘিরে ফেলেছে। বাঁচার উপায় নেই।” তার পরই ভিডিয়োটি বন্ধ হয়ে যায়।
মোরমুক্ত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসতে পেরেছেন। কিন্তু অচ্যুতানন্দের সেই ভাগ্য হয়নি। এখনও যেন একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছেন মোরমুক্ত। জানান, চোখ বুজলেই সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্যটা সামনে ভেসে উঠছে। চোখের সামনে সহকর্মীর মৃত্যুকে যেন কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তিনি।
আরও পড়ুন: এবার রাফালের দামের নথিও জমা দিতে বলল সুপ্রিম কোর্ট, আরও চাপে মোদী সরকার
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)