কংগ্রেস-এনসি-পিডিপি জোট নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
খাল কেটে কুমির ঢুকিয়েছিল তারাই। তবে এতদিনে বোধোদয় হয়েছে। তাই আর ঝুঁকি নিতে রাজি নয় কেউ। বরং বিরোধিতা ভুলে একে অন্যের হাত ধরতে প্রস্তুত উপত্যকার রাজনৈতিক দলগুলি। যার মধ্যে সব থেকে এগিয়ে মেহবুবা মুফতির পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) এবং ওমর আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি)। একে অন্যের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী তারা। তবে এই মুহূর্তে যেনতেন প্রকারে বিজেপিকে হঠানোই লক্ষ্য তাদের। তার জন্য পুরনো তিক্ততা ভুলে যেতেও আপত্তি নেই। এ ব্যাপারে কংগ্রেসকেও পাশে পেতে আগ্রহী তারা, যাতে তিনটি দল মিলে জম্মু-কাশ্মীরে জোট সরকার গড়ে তোলা যায়। সেই নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। ডিসেম্বরে সেখানে কেন্দ্রীয় শাসনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগে চলতি সপ্তাহেই হয়তো মহাজোটের ঘোষণা করা হতে পারে।
জোট গড়া নিয়ে তিন দলের মধ্যে আলোচনা যে হয়েছে তা মেনেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা গুলাম নবি আজাদ। তিনি বলেন, ‘‘একটা ব্যাপারে আমরা সকলেই একমত, একজোট হয়ে সরকার গড়তে কারও আপত্তি নেই। তবে তা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। একপ্রস্থ আলোচনা হয়েছে বটে, তবে এখনই সরকার গড়ার পরিস্থিতিতে পৌঁছইনি আমরা।’’
একাধিক বিষয়ে মতবিরোধের জেরে চলতি বছরে জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপি ও মেহবুবা মুফতির জোট সরকার ভেঙে যায়। জারি হয় রাজ্যপালের শাসন। যার পর, ৮৭ আসনের জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় বর্তমানে পিডিপি-র বিধায়ক সংখ্যা ২৮। কংগ্রেস বিধায়ক রয়েছেন ১২ জন। ন্যাশনাল কনফারেন্সের ১৫ বিধায়ককে পাশে পেলে সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ৪৪ আসনের কোটা পেরিয়ে যাবে তারা। সে ক্ষেত্রে বিজেপিকে ধরাশায়ী করতে সমস্যা হবে না। বিজেপির কাছেও ছবিটা পরিষ্কার। তাই জোটের খবর কানে যেতেই নড়েচড়ে বসেছে তারা। তাই এখন থেকেইজোটের সমালোচনায় মুখর হয়েছে বিজেপি। দলের এক নেতার অভিমত:‘‘ক্ষমতা পেতে মরিয়া ওরা। তাই দলভারী করছে। ওদের মধ্যে মতের মিল হওয়া সম্ভবই নয়।তাই জোটের স্বপ্ন কখনওই সফল হবে না।’’
আরও পড়ুন: মুসৌরিতে মুছে গেল বিজেপি, উত্তরাখণ্ড জুড়েই পুরভোটে বড় ধাক্কা গেরুয়া শিবিরের
আরও পড়ুন: আন্দামানের নিষিদ্ধ দ্বীপে ঢুকে আদিবাসীদের হাতে প্রাণ হারালেন মার্কিন পর্যটক
প্রধান তিন দলের একজোট হওয়া নিয়ে আপত্তি থাকলেও, সাজ্জাদ গনির নেতৃত্বাধীন পিপলস কনফারেন্সের সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি বিজেপি। মাত্রদু’জন বিধায়ক রয়েছে তাদের। তবে পিডিপি-র মধ্যে অন্তর্কলহ ইতিমধ্যেই কানে এসেছে। মঙ্গলবারই মেহবুবা মুফতিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন বারামুল্লার বিধায়ক মুজফ্ফর বেগ। পঞ্চায়েত এবং পুরভোট বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে দলনেত্রীর সমালোচনা করেন তিনি। সাজ্জাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়তে ইতস্তত করবেন না বলে হুমকিও দেন। দাবি করেন, অনেকেই নাকি তাঁর সঙ্গে পিডিপি ছেডে় বেরিয়ে যেতে রাজি। ন্যাশনাল কনফারেন্সের সঙ্গে পিডিপি হাত মেলালেই বিজেপিকে ধরাশায়ী করা যাবে বলে মানতে নারাজ তিনি। তাঁর মতে, পিডিপি-এনসি হাত মেলালে তা বিশেষ একটি ধর্মের জোট বলে গণ্য হবে। জম্মুবাসী কখনওই তাদের সমর্থন করবেন না। লাদাখ আর উপত্যকার অংশ থাকবে না। গোটা রাজ্যটাই টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। তাঁর মন্তব্যেই এখন আশার আলো দেখছে বিজেপি। কংগ্রেস এবং এনসি-র ঘরেও থাবা বসাতে তেমন অসুবিধা হবে না বলে ভাবছে তারা। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য সবরকম চেষ্টা চালাতে প্রস্তুত।